E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চসিক ইজারাভুক্ত হলেও সংস্কারহীন

কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাট যেন মৃত্যুকূপ!

২০২২ জানুয়ারি ১৫ ১৬:২৭:৪৩
কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাট যেন মৃত্যুকূপ!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : এই কুলে আনোয়ারা, ওই কুলে পতেঙ্গা। মাঝখানে হয়ে চলে কর্ণফুলী নদী। নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৫ নম্বর জেটি ঘাটের বেহালদশা দেখে মনে পড়ে যায় ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে'র কথা। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় তিনিই গিয়েছিলেন এই কুলে আমি আর ওই কুলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলো যায়.....।

কর্ণফুলীর ১৫ নম্বর ঘাট যেন মৃত্যুকূপ। ভূমি থেকে ৩০ ফুট উপরে বেশ সঙ্কীর্ণ জায়গায় সরু সিড়ি। পাশে নেই নিরাপত্তা রেলিং। এক সাথে দুজন লোক হাঁটারও সুযোগ নেই। নিচে পাথরের স্তূপ। তবুও ঝুঁকিতে ঘাট পারাপার করছে দৈনিক ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ।

এতে রয়েছে শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধ বনিতা। সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে আর নিচে নামতে একটু অসাবধান হলেই ৩০ ফুট নিচে পাথরের উপর আঁচড়ে পড়বে যে কেউ। বলা যায়, এ যেন বিপদের বড় গর্ত। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৫ নম্বর ঘাটটি প্রতি বছর ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকায় ইজারা দিলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নেই মাথা ব্যথা। ঘাটটির সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। এভাবে ঝূঁকিতে পার হচ্ছে লোকজন।

এদিকে, এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী চাকরিজীবি আবুল হাসান ও প্রতীক চাকমা বলেন, ১৫ নম্বর ঘাটটি কঠিন জায়গায় অবস্থিত। পাশে বিশাল খালি জায়গা। চসিক কিংবা ইজারাদার চাইলে কাঠ দিয়ে হলেও সিড়িটি বড় করে পাশে রেলিং দিতে পারতো। যাতে নিরাপদে যাত্রীরা পারাপার করতে পারেন। স্থানীয়দের দাবি ঘাটটি দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি যাত্রীছাউনি তৈরি করার। তাতে পাবলিক টয়লেট ও ইবাদতখানার ব্যবস্থা করা।'

জানতে চাইলে বশর মিয়া ও রহিমা নামে দুই যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ যাত্রী তুলে নদী পাড়ি দেন মাঝিরা। ভোর-সন্ধ্যায় বাড়তি ভাড়া দাবি করে হয়রানি করে যাত্রীদের।'

সরেজমিনে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী,পটিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার বিদেশযাত্রী, শহরমুখী মানুষসহ, মেরিন একাডেমি, কাফকো, সিইউএফএল, ডিএপিএফসিএল, কোরিয়ান ইপিজেড, কর্ণফুলী টানেল ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার চাকরিজীবী প্রতিদিন নদী পার হয় এই ঘাট দিয়ে। তবে অতিরিক্ত যাত্রী আর নদীতে বড় বড় ঢেউয়ে নৌকা দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যেই আতঙ্ক বাড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সরু সিড়ি।

যাত্রীদের অভিযোগ, ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। ঘাট পারাপারে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়া, দেওয়া হয় না লাইফ জ্যাকেট। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। নেই কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা, বিধি কিংবা নীতিমালা, নেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা, ঘাটের ইজারাদার ও বোট মালিক সমিতি থাকলেও কেউ মানছে না নিয়মনীতি। তারপরও সড়কপথে যানজট এড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করে মানুষ। বিদেশযাত্রী, স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির প্রয়োজনে আশপাশের মানুষের ভরসা ১৫ নম্বর ঘাট।

সরেজমিন দেখা যায়, জোয়ারে কর্ণফুলী নদী কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। নদীতে জাহাজসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করছে। এর মধ্যেই নৌকায় যাত্রী নিয়ে ঘাটের এপার থেকে ওপারে ভিড়ছেন মাঝিরা। নৌকা ভিড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে ঘাটে নামছেন যাত্রীরা। এতে নদীর চেয়ে ঘাটকুলের সিড়িই বেশি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভাসমান দোকানদার রহিম মিয়া বলেন, ১টি বোটের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২০-২৫ জন কিন্তু বোটের মাঝিরা ৪০-৫০জন যাত্রী নিয়ে বোট ছাড়েনং এতে দুর্ঘটনার আশংকা বেশি থাকে।প্রায়ই বোট ডুবি ও মানুষ নিখোঁজের মত ঘটনা ঘটছে। তারমধ্যেই আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। যদিও একজন যাত্রীর ৮ টাকা ভাড়া হলেও সাথে থাকা ব্যাগটির জন্য আদায় করে ২০-৫০ টাকা। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার মানুষ জিম্মি এই সিন্ডিকেটের হাতে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটের ইজারাদারের একাংশের মুখপাত্র উত্তর বন্দর বহুমুখী ইঞ্জিন চালিত বোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আসলে ঘাটটি ঝূঁকিপূর্ণ হলেও সিড়িতে রেলিং দিতে পারছে না। কারণ রেলিং দিলে যাত্রীবাহী বোট যেখানে সেখানে ভিড়তে পারবে না। সিইউএফএল ওপারে যাত্রাছাউনি তৈরি করে দিলেও এপারে এখনো সে রকম কিছু তৈরি হয়নি। যদিও আমরা বিষয়টি আলোচনা করতেছি। তারা এপারেও যাত্রীদের সেবায় কিছু একটা করবেন। কিন্তু ঘাট সংস্কার করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।'

আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওয়াব আলী ও ঘাট সংলগ্ন এলাকার ইউপি সদস্য ফরহাদ উদ্দীন বলেন, ঘাটটির দায় দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। আমাদের জানামতে, ১৫ নম্বর ঘাটটি অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ। তাই এখানকার ইজারাদার পক্ষ ও আমরা জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে একাধিকবার সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বলতে পারেন, প্রতি বছর কোটি টাকার উপরে চসিক এ ঘাট থেকে রাজস্ব পেলেও যাত্রীসেবায় তাদের কোন নজর নেই।'

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) স্টেট ডিপার্টমেন্ট রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ইজারাদারগণ অবগত করলেও সেভাবে কাজ করা হয়নি। তবুও আমরা ১৫ নম্বর ঘাটে খবর নিয়ে যাত্রীসেবার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করব।'

(জেজে/এসপি/জানুয়ারি ১৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test