E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইওয়ে ও বিভাগ নিয়ে দুই সাংসদের বক্তব্যে জনমনে আনন্দ

২০২২ জানুয়ারি ২৭ ১১:৫০:১৪
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইওয়ে ও বিভাগ নিয়ে দুই সাংসদের বক্তব্যে জনমনে আনন্দ

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, নবীনগর : কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাতায়াতে নতুন একটি হাইওয়ে নির্মাণসহ কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে এলাকার দুই প্রভাবশালী সাংসদের ঐক্যমত ঘোষণার খবরে কত কয়েকদিন ধরে অত্র অঞ্চলের মানুষের মাঝে রীতিমত আনন্দের বন্যা বইছে। সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টাল আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল এক সেলিব্রেটি আড্ডায় অংশ নিয়ে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য রআম মোকতাদির চৌধুরী কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে ঐকমত্য পোষণ করার পর থেকেই দুই এলাকার জনমনে এই আনন্দ ও উচ্ছাস বিরাজ করছে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা তারিকুর রহমান জুয়েল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা, বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন দৈনিক বাংলা একাত্তরকে মুঠোফোনে বলেন, 'ঘোষিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা নতুন হাইওয়েটি নির্মিত হলে, সড়কপথে এই দু’জেলার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার কমে আসবে। এতে জনগণের যাতায়াত সহজ হওয়াসহ ব্যবসা বাণিজ্যেও দারুণ গতি আসবে। পাশাপাশি কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে এই দুই জনপ্রিয় সাংসদের একমঞ্চে থেকে প্রাঞ্জলভাবে ঐক্যমতের ঘোষণাটিও কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে নি:সন্দেহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সেজন্য দুই জননন্দিত সাংসদকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'

বৃহস্পতিবার রাতে নবীনগরের কথা নামের একটি নিউজ পোর্টাল আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল একটি টকশোতে অংশ নিয়ে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার বলেন, 'কুমিল্লা শহরের কাপ্তান বাজার থেকে গোমতী নদী পেড়িয়ে ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং ও কসবা উপজেলা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে এই নতুন হাইওয়ে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে এবং সরকারের এই মেয়াদেই এর কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। '

প্রভাবশালী ওই সাংসদ আরও বলেন, সড়কটি হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষকে আর ক্যান্টনমেন্ট দিয়ে ঘুরে কুমিল্লা শহরে আসতে হবেনা। আর প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই স্বপ্নের সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা।'

এসময় তিনি কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য বর্ষিয়ান নেতা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সার্বিক সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে এই সেলিব্রেটি আড্ডার আয়োজন করে নবীনগরের কথা। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সদর আসনের এই দুই সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও আকম বাহা উদ্দিন বাহার ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন নবীনগর পৌরসভার মেয়র ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শিব শংকর দাস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন ও ইন্ডেপেনডেন্ট টেলিভিশনের ষ্টাফ রিপোর্টার জাবেদ রহিম বিজন। ভার্চুয়ালি লাইভে প্রচারিত নবীনগরের কথার ১০২ পর্বের জনপ্রিয় এই টকশোর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন নবীনগরের কথা’র সম্পাদক ও দৈনিক বাংলা একাত্তরের বিশেষ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু।

প্রাণবন্ত ওই টকশোতে অংশ নিয়ে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমি কুমিল্লা বিভাগ চাই। এজন্যে সাংসদ রবিউল ভাইসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসির সর্বত সমর্থন আমার দরকার। আমরা একসঙ্গেই ছিলাম, আবার একসঙ্গেই থাকতে চাই কুমিল্লায়।'

সাংসদ বাহার আক্ষেপ করে বলেন, ১৯৮৮ সালে আমি যখন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান সে সময় থেকে আমি বিভাগের আন্দোলন শুরু করি। কিন্তু এটা আমাদের জন্যে খুব দূর্ভাগ্যের বিষয় বিভাগের আন্দোলন করি আমরা, আর বিভাগ হয় বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেটে। পার্লামেন্টে একমাত্র আমিই বিভাগের দাবি উত্থাপন করেছি। এই যে যতগুলো বিভাগ বললাম এসব বিভাগের কোনো এলাকার কোনো একজন এমপি সংসদে বিভাগের দাবি উত্থাপন করেননি। আমাদের কুমিল্লার সমস্যা হয়েছে আমরা অনেক আগে থেকে লেখাপড়া শুরু করেছি। দুশ’ বছর আগে কুমিল্লা জিলা স্কুল হয়েছে। পৌনে ২শ’ বছর আগের ফয়জুন্নেছা গার্লস স্কুল। বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর আগে কুমিল্লা গার্লস স্কুল তৈরি হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য নওয়াব ফয়জুন্নেছাকে আমরা নারী জাগরণের অগ্রদূত করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যদি সবাই থাকতাম। ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত কুমিল্লার শ্রেষ্ঠ সন্তান। যদিও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। উনার জীবন কুমিল্লাতেই কাটিয়েছেন। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে দাঁড়িয়ে বক্তব্যে তিনিই বলেছিছেন- মি. স্পিকার যে রাষ্ট্রের অধিক সংখ্যক লোক যে ভাষায় কথা বলে সেটাই হবে সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। কুমিল্লাকে হেলাফেলা করে দেখার সুযোগ নেই। কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছেন শচীন দেব বর্মন, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, সুরসাধক ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁসহ বহু সঙ্গীতজ্ঞ। ভারতবর্ষের সঙ্গীত জগতকে তারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য একসময় আমরা রাজধানীর মানুষ ছিলাম। এখন আমরা বিভাগের আন্দোলন করি। সেখানেও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়। যখন আমাদের আন্দোলন বিভাগের জায়গায় আসলো তখন কথা উঠলো মেঘনা আর পদ্মা নিয়ে। মেঘনা মোস্তাকের বাড়ি। মেঘনা আমি কীভাবে মানবো। আমি নেত্রীকে বলেছি। নেত্রী বলেছেন, তুমি সবার সমর্থন আনো। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাননীয় ‘ল’ মিনিষ্টারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনিও ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্পষ্টবাদী খ্যাত সাংসদ বাহার বলেন, 'রবিউল ভাই আপনি এবং আমি রাজনীতির মানুষ। আমরা ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান করেছি, ৬দফা আন্দোলন করেছি, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আরেকটি গণঅভ্যুত্থান করেছি ‘৯১ সালে। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নিয়ে এগোই-আমি আশা করবো আপনি আমাদের পাশে থাকবেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে আমাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করবেন। '

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদ বাহারের বিভিন্ন কথার জবাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া, দেশে বিদেশে বহুল পরিচিত, সদর আসনের সাংসদ রআম মোকতাদির চৌধুরী বলেন- আমি স্পষ্টবাদী মানুষ। তাই স্পষ্ট ভাষায়ই বলি, এখানে রাকঢাকের কোনো বিষয় নেই। কুমিল্লা একটি অঞ্চল। কুমিল্লা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যতগুলো অঞ্চল আছে তার মধ্যে কুমিল্লা বৈশিষ্টপূর্ণ অঞ্চল। এর সংস্কৃতি, এর ইতিহাস, ঐতিহ্য সবটাই অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের। সুতরাং ময়মনসিংহ বিভাগ যদি হতে পারে, অমুক বিভাগ যদি হতে পারে, তমুক বিভাগ যদি হতে পারে, কুমিল্লা বিভাগ হওয়াতো কোনো অপরাধমূলক নয়। এখন কুমিল্লা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক। তিনি হয়তো চিন্তা করেন যে, এখানে অমুকের বাড়ি, তমুকের বাড়ি। এই কথা যদি খুঁজতে যায়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যারা আছে, তাদের অনেকেরই বাড়িঘর অন্যান্য অঞ্চলেও আছে। মূল চক্রান্তকারী মোশতাক যেমন আছে, তার যারা সঙ্গীসাথী তারা কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলের। সুতরাং ওইভাবে অঞ্চলকে না দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিনীত অনুরোধ জানবো, তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি শুধু আওয়ামী পরিবারের নয় সমগ্র দেশের গার্ডিয়ান। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে আমাদের নিবেদন, জাতির জনকের কন্যা যেন নৈর্ব্যক্তিকভাবে বিষয়টা দেখেন। সমগ্র কুমিল্লার আঞ্চলিক যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে, স্বাতন্ত্র আছে সেটার স্বীকৃতি দিয়ে কুমিল্লা বিভাগ করুন, এটাই আমরা চাইবো।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নবীনগর পৌরসভার মেয়র শিব শংকর দাস বলেন, 'অত্র অঞ্চলের এই দুই জনন্দিত সাংসদ আজকে যেভাবে একমঞ্চে বসে ঐক্যবদ্ধভাবে কুমিল্লা বিভাগের পক্ষে কথা বললেন, তাতে আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যেকার সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। ট্রেনে আমাদের জন্য পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ নেই। রয়েছে নিত্যদিনের নানান সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে সাংবাদিব বিজন দুই সাংসদের দৃষ্টি কামনা করেন।

জবাবে কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার বলেন, কুমিল্লা বিভাগ হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হবে, আরও অনেক কিছুই হবে। পাশাপাশি কানেকটিভেটিও বাড়বে সকল ক্ষেত্রে।'

(জিডি/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test