E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর তরুণ চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের রিট খারিজ

২০২২ জানুয়ারি ৩১ ১৭:০২:৩০
বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর তরুণ চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের রিট খারিজ

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রীট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লীভ টু আপিলে নিষ্পত্তির মাধ্যমে খারিজ করা হয়েছে। এতে পৌর কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হলো। গত ০৪ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লীভ টু আপিলের শুনানীর পর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের যৌথ বেঞ্চ লীভ টু আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে হাইকোর্টের রীট খারিজের আদেশ দেন।

জানা যায়, বগুড়া পৌরসভা ভোটে বিজয়ী ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রীট দায়ের করেন পৌর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মোঃ আমিনুল ফরিদ। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রীটের শুনানীর পর ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালিন আদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ৯০ দিনের মধ্যে উত্থাপিত অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রীটের অন্তর্বর্তীকালিন আদেশের স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেন। গত ০৩ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৬ সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালিন আদেশের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন এবং ০৩ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। লীভ টু আপিলের শুনানী শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে ইতিপূর্বে দায়েরকৃত হাইকোর্টের রীট নিষ্পত্তি হয়েছে মর্মে খারিজের আদেশ প্রদান করেন।

রিট প্রসঙ্গে কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, হাইকোর্টে রীটের বিষয়ে জানার পর আমি আইনী প্রক্রিয়ায় তা মোকাবিলা করি। আমিনুল ফরিদ যেসব কারণ উল্লেখপূর্বক হাইকোর্টে রীট করেছিলেন তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার সম্মানহানী ও হয়রানী করতে এই রীট, যা মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করেছেন। অভিযোগ নিষ্পত্তির পূর্বেই বিচারাধীন বিষয়ে একটি পত্রিকার সংবাদে আমার সম্মানহানীর অপচেষ্টাও হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, ৩নং ওয়ার্ডের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমিনুল ফরিদ আমার বিরুদ্ধে সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু সম্মানিত এলাকাবাসী আমাকে এবং আমার কাজকে মূল্যায়ন করে বলেই ১৩৫৫ ভোটের বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছি। আগামীতে সকল ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জনকল্যাণে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নিয়োজিত থাকবো। ৩নং ওয়ার্ডে কোন ষড়যন্ত্রকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীর মতো দুষ্কৃতকারীর স্থান হবে না।

হাইকোর্টে দায়ের রিট প্রসঙ্গে বগুড়া'র নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোস্তফা কামাল প্রিন্স বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে নিয়ম মাফিক নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত বিভাগে শরণাপন্ন হতে হয়। নির্বাচন কমিশন সকল সমস্যা বা অভিযোগ নিষ্পত্তি করবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অভিযোগ নিষ্পত্তির পূর্বেই হাইকোর্টে রিট দায়ের করার উদ্দেশ্য হয়রানী ছাড়া আর কিছু নয়।

টিআইবি’র বগুড়া জেলা শাখা ‘সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি মাসুদার রহমান হেলাল বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীর হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করেন। হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে সহজে পাওয়া যায়। প্রতিপক্ষের কোন অভিযোগ থাকলে তা নির্বাচন কমিশনে জানাতে হয় প্রার্থীতা চূড়ান্তের সময়। অভিযোগ হতে হবে সুনির্দ্দিষ্ট এবং সঠিক তথ্যপ্রমাণ নির্ভর। অন্যথায় আদালতের শরণাপন্ন বা অন্যকোন পদক্ষেপ গ্রহণ হবে তিক্ততা সৃষ্টি ও প্রতিপক্ষকে হয়রানী করা। যা অনুচিত।

বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে পরাজিত প্রার্থী ও হাইকোর্টে রিট দায়েরকারী আমিনুল ফরিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ার মাসখানেক পরই তাদের একটি জবাব পেয়েছি। তাদের জবাবে অভিযোগ দায়ের করা লাগতো নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু তারপর আমি হাইকোর্টে রীট দায়ের করি। শুনেছি লীভ টু আপীলে সব নিষ্পত্তি হয়ে হাইকোর্টের রীট খারিজ হয়েছে। আমি আপিল বিভাগের লীভ টু আপিলে লড়াই করিনি। এই বিষয়ে আমি আর কোন আইনগত প্রক্রিয়ায় যেতে চাই না।

বগুড়া’র সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মাহবুব আলম শাহ্ বলেন, প্রার্থীর হলফনামায় তথ্য গোপনের কোন অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে অভিযোগ আকারে জানানোর সঠিক সময় তথ্য যাচাইবাছাই করে প্রার্থীতা চূড়ান্তের সময়। তারপরো উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা চূড়ান্ত সমাধান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, যেকোন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন সুশাসনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তেমনি সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করাও অন্যায়।

(এটিআর/এসপি/জানুয়ারি ৩১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test