E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটায় ভূমিহীণদের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ

২০২২ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৯:৩৮:১০
দেবহাটায় ভূমিহীণদের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি ভূমিহীন জনপদে বসবাসরত এক ভূমিহীনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের নামে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় আইনবহির্ভুত মাইকিং ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার বিকেল ৫টায় দেবহাটার ভূমিহীন জনপদ খলিশাখালি ফুটবল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খলিশখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি আনারুল ইসলাম। বক্তব্য দেন সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সহসভাপতি সুনীল কুমার স্বর্ণকার , রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সদস্য লায়লী খাতুন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন , সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ -২য় আদলাত থেকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খলিশাখালির ১৩২০ বিঘা জমি সরকারি জমি হিসেবে ওই জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিত, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেখভালের নির্দশনা দিয়েছে। অথচ প্রথম থেকেই ভূমিদস্যুদের দারা প্রভাবিত হয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ওই আদেশ অমান্য করেছে। তাই ওই জমি জেলা প্রশাসন খাস না করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ি ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার হিসেবে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সাপমারা খালের দুপাশে বসবাসরত ও বিভিন্ন উপজেলার সাত শতাধিক ভূমিহীন পরিবার ওই জমিতে বসবাস শুরু করে। কথিত জমির মালিক দাবিদাররা উচ্চ আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আদালতে হেরে যাওয়া কাজী গোলাম ওয়ারেশ, ডাঃ নজরুল, আনছার হাজী, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, আব্দুল মাজেদসহ একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু চক্র ভূমিহীন নেতাদের নামে দুটি দ্রুত বিচার আইনে মামলাসহ ২০টি মামলা দিয়েছে। র‌্যাব এর সোর্সদের ব্যবহার করে ভূমিহীন জনপদে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে অভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই তার নাম ব্যবহার করে পারুলিয়ার ডেকরেটার মালিক শাহীনের মাইক ব্যবহার করে একজন ভ্যান চালক দিয়ে ভূমিহীনদের এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদের প্রচারনা চালানো হচ্ছে। তাতেও লাভ না হওয়ায় গত ৩ ফেব্র“য়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সখীপুরের বাড়ি থেকে খলিশাখালির ভূমিহীন রাজুকে তুলে নিয়ে গলায় দা ধরে কাঁচে হাত পা কেটে গেছে এমন বক্তব্য দিতে বাধ্য করে তা ভিডিও ধারণ করার পর কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। রক্তাক্ত ও মৃতপ্রায় রাজুকে (২৮) ৩ ফেব্র“য়ারি দিবাগত রাত একটার দিকে তার স্ত্রী বেবীও স্বজনরা সখীপুর খান বাহাদুর আহছানউল­াহ ডিগ্রী কলেজের পিছনে চেচোরাটি গ্রামের মাঠ থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার সত্যপদ মণ্ডলের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান। জীবনের ভয়ে তারা রাজুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেননি।

বক্তারা আরো বলেন, ১৯৫৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত শরাফপুরের নালানো বসিরের জবরদখলকৃত ৮০ বিঘা সরকারি জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন দেবহাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গণির ছেলে মনিরুল। গাজীরহাটের প্রফেসর নুরুজ্জামানের জবরদখলীয় সরকারি ৯০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন আহছান আলী, ডা. নজরুল ইসলাম ও ইকবাল মাসুদের ১১০ বিঘা সরকারি জবর দখলীয় জমি হারি দিয়ে মাছ চাষ করতেন রফিকুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা মিন্নুর, আসমাতুল­ার ৪০ বিঘা সরকারি জবরদখল করা জমি ঘের করতেন বদরতলার মুছা গাইন। চেয়ারম্যান সেলিমের ১৩০ বিঘা সরকারি জমি, ফজর আলীর ৪০ বিঘা জবরদখলীয় জমি সালাম চেয়ারম্যানের ছেলে আজিজ, আবুহরের ৩০ বিঘা সরকারি জবরদখলীয় জমি ঘের করে শান্তার খলিল, ফজর হাজীর ৫০ বিঘা ও মান্তার বক্সের ৪০ বিঘা জবরদখলীয় সরকারি জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষ করেন চাঁদপুরের সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন। এ ছাড়া কাজী গোলাম ওয়ারেশ নিজেই অন্য লোক দিয়ে সরকারি ২৫০ বিঘা জমি জবরদখল করে মাছ চাষ করে আসছে। ওইসব জমি বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা করে লীজ দিয়ে কথিত জমির মালিক হিসেবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।

এ পর্যন্ত ওইসব কথিত জমির মালিকরা আড়াইশত কোটিরও বেশি টাকা সরকারি কোষাগারের পরিবর্তে নিজেরাই লুটে পুটে খেয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর ভূমিহীনরা ওইসব জমিতে বসবাস শুরু করলে হারির টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য কথিত জমির মালিকদের কাছে দাবি জানান। তারা ওই টাকা ফেরৎ না দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী শম্ভুনাথ সিংহের মাধ্যমে খলিশাখালির জমি কথিত জমির মালিকদের বলে প্রতিবেদন দিয়ে জেলা প্রশাসককে ভূল তথ্য ২৯ নভেম্বরের বিশেষ সভায় প্রতিবেদন দেওয়ান। যা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হারির টাকা ফেরৎ না দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে কথিত ভূমির মালিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গাজীরহাট থেকে পারুলিয়া ও কুলিয়া পর্যন্ত ভূমিহীনদের উচ্ছেদের জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে লাভ হবে না জানিয়ে বক্তারা বলেন,আদালতের আদেশ বর্হিভুত কোন প্রকার উচ্ছেদের চেষ্টা করলে কাফনের কাপড় পরে আমৃত্য লড়াই করে খলিশাখালীর ভুমিহীন জনপদ রক্ষা করবেন।

রাতে কথিত জমির মালিকদের। আবারো কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে তাদেরকে আদালতের আদেশের কথা গোপন রেখে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করানো হচ্ছে। বুধবার রাতে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলায় অস্ত্র , গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি খলিশাখালিতে ভূমিহীন নেতাদের কাছে যাচ্ছিলেন দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মিথ্যা খবর কয়েকটি অন লাইনে ও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৯টি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আইনের বাইরে যেয়ে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। করোনা পরিস্থিতির পরিবর্তণ হলে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গদে তোলা হবে।

(আরকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test