E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিচারককে কটাক্ষের অভিযোগ, আদালতের কার্যক্রম স্থগিত 

২০২২ ফেব্রুয়ারি ১৫ ১৯:১৪:০২
সাতক্ষীরায় দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিচারককে কটাক্ষের অভিযোগ, আদালতের কার্যক্রম স্থগিত 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতে পেশাগত আচরন না করে দু’ আসামীর জামিন শুনানীকালে বিচারককে অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলীর হুমকি ও  আদালতে সাক্ষী গ্রহণকালে সাক্ষীর জবানবন্দি লিখতে না পারায় বিচারকের সঙ্গে  আইনজীবী অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টুর কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে দু’টি আদালতে বিচার মুলতুবি হয়ে যায়।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা ও সোয়া একটার সময় সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় ও তৃতীয় আদালতে এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দু’ আইনজীবীর ভূমিকা বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অমর্যাদা বলে আদালত পাড়ায় গুঞ্জন উঠেছে।

সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক (সিএসআই) আলী মুর্তজা জানান, মারপিট ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে কলারোয়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের আক্তার হোসেন বাদি হয়ে একই এলাকার রুহুল আমিন ও শাওনসহ সাতজনকে আসামী করে ১১ ফেব্র“য়ারি কলারোয়া থানায় জিআর ৭১/২২ নং মামলা করেন। পুলিশ পরদিন আসামী রুহুল আমিন ও শাওনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলীর স্ত্রী অ্যাড. ইয়াসমিন সুলতানা সুমি সাক্ষরিত ওকালতনামার মাধ্যমে আদালতে ওই দু’ আসামীর জামিন আবেদন করা হয়। অ্যাড. ওকালত আলী আসামীপক্ষের হয়ে জামিন শুনানীকালে বিচারক মহিদুল ইসমলাম আসামীরা সদ্য গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করার সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে উল্লেখ করে জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। এ ছাড়া তিনি কয়েকদিন পর জামিন আবেদন করার নির্দেশনা দেন।

আলী মুর্তাজা আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওকালতনামায় স্বাক্ষরিত অ্যাড. ইয়াসমিন সুলতানা সুমির অনুপস্থিতিতে সোমবার জামিন না’মঞ্জুর হওয়া আসামী রুহুল আমিন ও শাওনের পক্ষে জামিন শুনানীতে অংশ নেন অ্যাড. ওকালত আলী। শুনানীর শুরুতেই আদালতের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ি জামিন বাতিল হওয়ার পরবর্তী সাত দিন পর জামিন ধরার জন্য অ্যাড. ওকালত আলীকে বলেন বিচারক মহিদুল ইসলাম।

এতে ওই আইনজীবী ক্ষুুব্ধ হয়ে হুমকির সুরে বলেন, জামিন যোগ্য ধারা, জামিন দিতে হবে। বিচারককে উদ্দেশ্য করে ওই আইনজীবী বলেন, যে চেয়ারে বসে আছেন সেই চেয়ার কি বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন? অ্যাড. ওকালত আলী চেয়ার থেকে নেমে বিচারককে আদালত ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। এর পরপরই বিচারক সংশ্লিষ্ট আদালত ছেড়ে খাস কামরায় চলে যাওয়ায় আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিষয়টি তিনি মুখ্য বিচারিক হাকিমকে অবহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত চত্বরে উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাড. ওকালত আলী বলেন, এসব কোন কিছুই হয়নি।

এদিকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পিপি অ্যাড. সামছুল বারী জানান, ৫০০ গ্রাম গাজাসহ সিন্টু হোসেন ও সবুজ নামের দু’ আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন বাদি হয়ে ২০১৮ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জিআর-৬৯/২০ নং মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা (টিআর-১৬৬/২০) বিচারিক আদালত-২ তে বিচার শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে জব্দ তালিকার সাক্ষী গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় ওঠেন। শুরুতেই তার সুস্পষ্ট জবানবন্দি লিখছিলেন বিচারক বন্যা খাতুন। কিন্তু আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু সাক্ষীর জবানবন্দি লিখতে পারছেন না, তাকে আরো জোরে কথা বলার জন্য বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিচারক উত্তরে বলেন, তিনি পারছেন অথচ আপনি পারছেন না কেন? এমন কথায় অ্যাড. মিজানুর রহমান কর্কশ ভাষায় বিচারককে আক্রমণ করেন। বিচারক বন্যা খাতুন একপর্যায়ে অ্যাড. পিন্টুকে আদালতে পেশাগত আচরণ করতে বলেন। এতে অ্যাড. পিন্টুুু আরো কর্কশ ব্যবহার করলে বিচারক তাকে চলে যেতে বলেন। এ সময় অ্যাড. পিণ্টুও বিচারককে চেয়ার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। বিচারক এরপর আদালতে মুলতুবি ঘোষণা করে খাস কামরায় চলে যান। এ খবর জানতে পেরে মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীরের খাস কামরায় ছুঁটে আসেন আদালত কর্মরত বিচারিক হাকিমগণ। সেখানে অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টুকেও ডাকা হয়। তবে অ্যাড. পিণ্টু কোন ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এমনটি তিনি শোনেননি। তবে ঘটনার পর থেকে ওই আদালত বসেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টু বলেন, সাক্ষী জেরার জন্য জবানবন্দি চলাকালে হাতে জবানবন্দি লিখতে হয়। তিনি সাক্ষীর কথা স্পষ্ট শুনতে না পাওয়ায় বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচারক তার কথা না শুনে নিজের মত কাজ চালিয়ে যাওয়ায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে(পিন্টু) আদালত থেকে চলে যেতে বললে তিনিও বিচারককে চেয়ার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরে তাকে মুখ্য বিচারিক হাকিম ডেকে জানতে চাইলে তিনি তাকে বিষয়টি অবহিত করে চলে এসেছেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test