E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে মসজিদ করতে মাদ্রাসা ভাংচুর, ১৪৪ ধারা জারি

২০২২ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৩:১৭:০০
কুলিয়ারচরে মসজিদ করতে মাদ্রাসা ভাংচুর, ১৪৪ ধারা জারি

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী বালুরচর এলাকায় ২০১২ সালে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত মাদানিয়া ফজলুল উলূম নূরানী মাদ্রাসার ঘর রাতের আঁধারে এককভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দলবল নিয়ে জোরপূর্বক ভেঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ করার চেষ্টা করে জমিদাতা ওই গ্রামের মৃত ফজলুল হকের পুত্র মো. এনামুল হক (৪২)। খবর পেয়ে এলাকাবাসী মাদ্রাসায় গিয়ে বাঁধা নিষেধ দিলে জমিদাতাগণ তাদের উপর চড়াও হয় এবং মাদ্রাসার ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা উপজেলার রামদী আগরপুর বাজার এলাকার মৃত আব্দুল ওয়াজ এর পুত্র মো. বিল্লাল হোসেন (৪৫) গত ৮ ফেব্রুয়ারি জমিদাতা মো. এনামুল হককে প্রধান আসামি করে ৩ জনের নামে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মোকদ্দমা দায়ের করে। সি আর মোকদ্দমা নং- ২১৮/২০২২।

বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ওই দিনই ৫০৭নং স্মারক মূলে মাদ্রাসার স্থানে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ওসি কুলিয়ারচর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

বিজ্ঞ আদালতে আদেশ পেয়ে থানায় কর্তব্যরত এসআই মো. তারেক পারভেজ গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পক্ষদ্বয়কে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে রামদী মৌজার খতিয়ান নং-আর এস-১২২ ও এসএ-১৬১৭, দাগ নং- আরএস-৯১৯ ও এসএ-৩০১৬, শ্রেণি- কান্দা, পরিমাণ- ৩৫ এর কাত সাড়ে ৬ শতাংশ ভূমিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারায় নোটিশ জারি করার সময় পুলিশের উপস্থিতিতে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. বিল্লাল হোসেনের উপর হামলা করে জমিদাতা গংরা। এ সময় বিল্লাল হোসেনকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছেলে মো. নাঈম (২০), মো. আক্তার (৬৫), রানা (১৬) ও মজলিস (৬০) আহত হয়। আহতদের মধ্যে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় মো. নাঈমকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে এলাকাবাসী। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. বিল্লাল হোসেন ওই দিনই বাদী হয়ে এনামুল হক, মো. জামাল উদ্দিন, মো. সবুজ মিয়া, মো. সিদ্দিক, ইসরাফিল, মাসুদ মিয়া ও অহিদ মিয়ার নামে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত অভিযোগটি এফআইআর হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় মো. আক্তার উদ্দিন (৬৫), রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২নং ওয়ার্ড সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. ছেনু মিয়া (৫০), ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবুল কালাম (৪৫), মো. দেলোয়ার হোসেন (৫২), মো. নজরুল ইসলাম (৩৮), রামদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আনু মিয়া (৫০), তরিকুল ইসলাম (২৭) ও মো. কাজল মিয়া (৬৫) সহ শতাধিক লোক বলেন, গত ২০১২ সালের ২২ জুলাই মো. এনামুল হকসহ মো. নূরুল হক, মো. আনোয়ারুল হক, এমদাদ ইবনে ফজল, মো. তারিকুল হক, শামছুন্নাহার, মমতাজ ও সাইমা হক যৌথ স্বাক্ষরে ২৩০৬নং দলিল মূলে তাদের পৈত্রিক দখলীয় রামদী মৌজার খতিয়ান নং-আর এস -১২২ ও এসএ-১৬১৭, দাগ নং- আরএস-৯১৯ ও এসএ- ৩০১৬, শ্রেণি- কান্দা, পরিমাণ- ৩৫ এর কাত সাড়ে ৬ শতাংশ ভূমি ‘মাদানিয়া ফজলুল উলূম নূরানী মাদ্রাসা’র নামে ওয়াকফ্ দলিল করে দেয়। এর পর এলাকাবাসী মো. বিল্লাল হোসেনকে মাদ্রাসা করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। বিল্লাল হোসেন মাদ্রাসা করার দায়িত্ব পেয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের ওয়াকফ্ জায়গায় প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করে দেওয়ার পর এ মাদ্রাসায় ৭০-৮০ জন ছেলে দ্বীনি শিক্ষা নিতে থাকে।

বর্তমানে ওই মাদ্রাসায় আদিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে এলাকার কাউকে না জানিয়ে একক ক্ষমতাবলে মাদ্রাসার ঘর ভাংচুর করে জবর দখলে নিয়ে অবৈধ ভাবে বিদেশী একটি সংস্থার আর্তিক সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করে এনামুল হক। এতে বাঁধা নিষেধ দেওয়ায় এলাকাবাসীকে মারধোর করাসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে আসছে জমিদাতা এনামুল হকসহ তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় রামদী বালুরচর এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে একাধিক মুফতি বলেন, ওয়াকফকৃত জমিনে মাদ্রাসার সেমি পাকাঘর ভেঙ্গে স্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করা যাবেনা। কারণ ওয়াকফ্ দাতাগণ উক্ত জমি মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ্ করেছেন। মসজিদের জন্য নয়।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এনামুল হকসহ অন্যান্য বিবাদীরা গুন্ডা বাহিনী নিয়ে নিরীহ লোকজনের জমিজমা, বাড়িঘর, মসজিদ ও মাদ্রাসা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাস করে আসছে। তারা মাদ্রাসার নামে জমিটি ওয়াকফে দিয়ে এলাকাবাসীর মাধ্যমে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে ফান্দে ফেলে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করে এখন জায়গাটি জোর জবরদখল করার চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, জমিদাতাদের আমি বলেছি মসজিদ নির্মাণ করতে যতটুকু জায়গার প্রয়োজন হয় তা আমি মাদ্রাসার পাশেই দিয়ে দিবো। মাদ্রাসা ভাঙ্গার কোন প্রয়োজন নেই। এতে তারা রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(এসএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test