E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৃত্যুর ৭২ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক  আনোয়ার

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৫:৫৮:১৪
মৃত্যুর ৭২ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক  আনোয়ার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হলেও মৃত্যুর ৭২ বছর পরেও দেওয়া হয়নি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তাই মহান একুশে ফেব্র“য়ারিতে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাতক্ষীরাবাসীর উদাত্ব আহবান।

শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম ছিল কোনাই সরদার ও মায়ের নাম ছিল পরীজান বিবি। কোনাই সরদার পৈতৃক ভিটা ছিল আশাশুনি উপজেলার শোভনালী গ্রামে। পরিজান বিবি প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই মেয়ে জামাইকে নিজ বাড়িতে আনেন বুধহাটা গ্রামের শিক্ষক বাসের সরদার। সেখানে আনোয়ার হোসেন, আজিবর রহমান, আবুল হোসেন ও খুকুমনি নামে চার সন্তানের জন্ম দেন পরিজান বিবি।

সোমবার দুপুরে বুধহাটা গ্রামে গেলে বারী সরদারের ছেলে এরশাদ সরদার (৭৯) জানান, আনোয়ার হোসেন তার ফুফাত ভাই। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আনোয়ার হোসেন বড়। মেধাবী আনোয়ার হোসেন বাড়ি সংলগ্ন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।পরে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার একপর্যায়ে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন।সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে এসএসসি পাস করেন।তিনি খুলনার বিএল কলেজে পড়াশুনাকালীন ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তরুণ আনোয়ার হোসেন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে(বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।কয়েকদিন পর তিনি মুক্তি পান।পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে প্রথমে তাকে খুলনা কোতয়ালী থানায় রাখে।পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী কারাগারে।সেখানে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। একপর্যায়ে ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালানো হয়।তাতে সাতজন কারাবন্দি নিহত হন।

নিহতরা হলেন, বিজন সেন, দিলওয়ার হোসেন, হানিফ শেখ, কম্পরাম সিংহ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, সুধীন ধর ও আনোয়ার হোসেন । তার মধ্যে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে একমাত্র ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন মারা যান। বর্তমানে তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম শহীদ। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই। তার স্মৃতি রক্ষায় গঠণ করা হয়েছে আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি।

নব্বই বছরের বৃদ্ধা বদরুন্নেছা জানান, আনোয়ার হোসেন তার বোনের ছেলে। বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় ১১ জন শিক্ষক তাকে পড়াতে পারতো না বলে বলতো আনোয়ার। রাজশ্হাী জেলে পাকিস্তান সেনারা তাকে গুলি করে হত্যার পর ডাক যোগে রক্তমাখা আন্ডার প্যান্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই প্যান্ট দেকার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে বোন পরিজান বিবি।

প্রতিবেশী খালিদ হোসেন বলেন. বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরির সময় আনোয়ার হোসেনের হাতে লাগানো দু’টি তাল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কিছুদিন আগে। তিনি আনোয়ার হোসেনের নামে স্মরণীয় কিছু তৈরির দাবি করেন বর্তমান প্রধনিমন্ত্রীর কাছে।

আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সচ্চিদানন্দ দে সদয় জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে আনোয়ার হোসেনকে স্বীকৃতির দাবি করেন তিনি। প্রথম শহীদ ভাষা সৈনিক হিসেবে আনোয়ার হোসেনের স্বীকৃতির দাবিতে তারা মানববন্ধন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দিয়েছেন স্মারকলিপি। স্মারকলিপিতে কিমিটির পক্ষ থেকে শহীদ আনোয়ার হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় তাকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।আশাশুনি সরকারি কলেজের নামকর শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনের নামে নামকরণ, সাতক্ষীরা,আশাশুনি,বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা,সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক তার নামে নামকরণ করা ও তার নামে সরকারিভাবে ট্রাস্ট গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমএ হাসান জানান, ভাষার মাস শুরু হলে আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে লেখালেখি হয়। মাস চলে গেলে চাপা পড়ে যায়। তার স্মরণে সড়ক ও স্মৃতি স্তম্ভ তৈরির দাবি।

বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবল হক ডাবলু বলেন, আনোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন এটা তার জানা ছিল না। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে তাকের রাষ্ট্রীভাবে দেশের প্রথম শহীদ ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। তিনি বুধহাটায় আনোয়ারের নামে স্মৃতিসৌধ বানানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়ানুর রহমান বলেন, আনোয়ার হোসেনকে রাষ্ট্রীয় সৈনিক হিসেবে ঘোষণার জন্য একটি স্মারকলিপি তার কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনি সেটাকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test