E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রায়পুরে অনলাইনে প্রতারণা, ১৬ কোটি টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র উধাও

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৭ ১৫:৪৮:৫৩
রায়পুরে অনলাইনে প্রতারণা, ১৬ কোটি টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র উধাও

রায়পুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গ্রাহকদের ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়েছে ৭ যুবকের একটি সিন্ডিকেট। তাঁরা অনলাইনে হিসাব খোলা ও আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এ টাকা নিয়ে যায়। উপজেলার হায়দরগঞ্জবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ৩ মাসে প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তাঁরা এ টাকা হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়লে তাঁরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

অভিযুক্তরা হলেন উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ইমরান হোসেন ফারাবি, ইকরামুল কবির, আমিন আহমেদ জুয়েল ও উজ্জ্বল বালেষ্টর। কলেজ ছাত্র ফারাবী ও উজ্জল ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। জুয়েল হায়দরগঞ্জ বাংলাবাজারের নিউ তৃষা ডিজিটাল স্টুডিও এন্ড টেলিকমের মালিক। কবির ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকা পালিয়ে যান। রোমানিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন ফারাবী। এছাড়াও এ চক্রে রয়েছেন স্থানীয় শিবির কর্মী মহসিন কবির, মোঃ আনাছ ও মোঃ নোমান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি প্রথমে গুগল প্লে স্টোরে এসপিসি, এসপিএল, সিএফসি, পিএমসি এবং সর্বশেষ ড্রীম শপ লিমিটেড নামের সফটওয়্যার চালু করে। এগুলোতে একটি হিসাব খোলার জন্য ফারাবী নগদে ১৯০০ টাকা নিতো। নতুন হিসাবে প্রতিদিন ২টি করে ভিডিও বিজ্ঞাপন আসে। ওই ভিডিওগুলো দেখলে ২০ টাকা করে আয় যোগ হতো। এভাবে প্রতি মাসে একটি হিসাবে ৬০০ টাকা আসতো। প্রথম দিকে কিছু গ্রাহককে লোভ দেখাতে টাকা তুলতে দিলেও ৩ মাস পর তোলার সুযোগটি বন্ধ করে দেয়। এভাবে প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তাঁরা ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ চক্রের পাল্লায় পড়ে ৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন (৩০)। তিনি জানান, চক্রটির প্রধান হচ্ছেন ইমরান হোসেন ফারাবী। তিনিসহ অন্যরা মিলে ড্রীম শপ তৈরি করে আমাদের মতো অসংখ্য লোককে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছেন। যে ফারাবী ১০০ টাকা হাত খরচ করতে পারতো না, সে হঠাৎ করে কয়েকদিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কিনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেন। কোম্পানী থেকে এগুলো দেওয়া হয়েছে বলে ফারাবী ও কবির প্রচার করতে থাকে। তাঁদের হঠাৎ পরিবর্তনে লোকজন বেশি লাভের আশায় লোকজন শত শত হিসাব খুলতে থাকে। তাঁরা একটির পর একটি সফটওয়্যার তৈরি ও বন্ধ করে প্রতারণার জাল বুনে।

টাকা আত্মসাতের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন ভূক্তভোগী ফাহিম কাদের (৩৪)। তিনি বলেন, ৭ যুবকের এ চক্রটি শুধুমাত্র হায়দরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন ১৫-১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬ কোটি টাকা দিয়ে জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকায় সুপারশপ তৈরি করেছেন। ফারাবী হাতিয়ে নিয়েছেন ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ইমরান কবির নিয়েছেন ৭৫-৮০ লাখ টাকা। তাঁরা প্রতারণার মাধ্যমে একটির পর একটি সফটওয়্যার তৈরি করে লোকজনকে বোঁকা বানিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নেন। মামলা করায় তাঁরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে।

ফারাবীর প্রতারণা থেকে রক্ষা পায়নি তাঁর আত্মীয়-স্বজনরাও। তাঁর তালতো ভাই (দুলাভাইয়ের ভাই) আবদুল হালিমের কাছ থেকেও ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। হালিম বলেন, ফারাবী এতোটা ধূর্ত ও প্রতারক আমরা আগে বুঝিনি। আমাদের টাকা দেই দিচ্ছি বলে তিনি দিচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেন ফারাবী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনা আত্মসাতের অভিযোগগুলো সঠিক নয়। সফটওয়্যার বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ রয়েছে। জুয়েল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। আমার আয় দিয়ে আমি বাড়ি, গাড়ি করায় অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি লক্ষ্মীপুরের উপ পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। সহসা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

(পিআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test