E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উত্তপ্ত পাকুন্দিয়া আ.লীগের রাজনীতি

ফের মুখোমুখি বর্তমান ও সাবেক সাংসদ

২০২২ মার্চ ০১ ১৫:৩৩:০১
ফের মুখোমুখি বর্তমান ও সাবেক সাংসদ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : নেতৃত্ব ধরে রাখা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসনের বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সাংসদ সোহরাব উদ্দিনের মুখোমুখি অবস্থানকে ঘিরে ফের পাকুন্দিয়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ওই দুই নেতার ওপর ভর করে দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকরা এখন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ঠেকানোর চেষ্টায় রয়েছেন। নিজেদের প্রভাব বুঝানোর জন্য পক্ষ দুটি বিজয় দিবস এবং শহীদ দিবসের মতো জাতীয় দিবসের গুরুত্বও আমলে নিচ্ছেন না। একে অপরকে ঘায়েল করার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সাংসদ পক্ষ নিয়েছেন কমিটি থেকে পদত্যাগ নীতি। আর পাল্টা কৌশল হিসেবে সাবেক সাংসদ সেরাহরাব পক্ষ দিয়েছেন দল থেকে গণ বহিষ্কারের হুমকি। 

সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভাষা দিবসে শহীদ মিনারে পূস্পার্ঘ অপর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষটি এক পর্যায়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের সাতজন আহত হয়। ঘটনার পর দুই পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শহরে মহড়া দেন। ওই ঘটনার পর পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি নতুন করে উত্তাপ ছড়ায়। দুপুরের মধ্যে সাংসদ পক্ষের দশ নেতা উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু। রফিকুল ইসলাম রেনু সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুগত হিসেবে পরিচিত।

এদিকে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে পরিণত হলেও এখনও মামলা হয়নি। কোন পক্ষই মামলা করতে থানায় যায়নি। স্থানীয়দের দাবি ওই দিন প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে। অস্ত্র প্রদর্শন হলেও এই বিষয়ে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণে পুলিশের ভূমিকা নিরব।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান সংঘর্ষটি বড় কিছু মানতেই নারাজ। তার মতে, শহীদ দিবসের দিন তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ইটপাটকেল ব্যবহার হয়েছে মাত্র। এটি মামলা করার মতো কোন ঘটনা নয়।
এদিকে কয়েক বছর ধরে কিছু দিন পর পর পক্ষ দুটির সৃষ্ট উত্তেজনা সংঘর্ষে রুপ পাওয়া নিয়ে দুঃচিন্তা বেড়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে। চেষ্টা করেও এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছে জেলার নেতারা। ফলে পাকুন্দিয়া পরিস্থিতি নিয়ে এই মুহুর্তে জেলার নেতাদের সুর অনেকটা হতাশার ও ক্ষোভের। পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পথ হিসেবে তারা এখন কেন্দ্রে নালিশ করার পরিকল্পনা করেছেন।

আহমদ উল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি বলেন, পাকুন্দিয়া পরিস্থিতি ভালো নেই। দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা দুঃচিন্তায় আছি। নিরুপায় হয়ে এখন আমরা পাকুন্দিয়া পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরে কেন্দ্রকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে সমাধান চাইব।

দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে দলীয় টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন। পুলিশের সাবেক আইজিপি। তার বাড়ি কটিয়াদী। দলীয় কোনো পদ না থাকলেও শুরু থেকেই দুই উপজেলা আওয়ামী লীগে প্রভাব বিস্তারে উদ্যোগী হন।

সোহরাব উদ্দিন পাকুন্দিয়ার মানুষ। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসনের সাংসদ ছিলেন। শুরুর দিকে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে রাজনীতি করেছেন। শেষে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নেন। নূর মোহাম্মদ রাজনীতিতে আসার পর তার দলীয় মনোনয়ন ও স্থানীয় রাজনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে।

নূর মোহাম্মদ সাংসদ হবার পর থেকে তার একটি চোখ পাকুন্দিয়ার দিকে সর্বদা সজাগ রাখেন। নিজের উপজেলা ছাপিয়ে পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগ পূণর্গঠনে মনোযোগী হন। গেল বছরের মে মাস থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র ও জেলার নেতাদের উপেক্ষা করে তিনি উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে ফেলেন।

কমিটি গঠনের প্রতিরোধে নেমেছিলেন সোহরাব। ওই রাজনীতিতে সোহরাবের জয় আসে। গেল বছরের জুলাই ১২ জুলাই কেন্দ্র এক ঘোষণায় নূর মোহাম্মদের করা সকল কমিটি বিলুপ্ত করে তাকে এই কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এরপরই পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগে সোহরাব পক্ষের পালে গতি পায়। এই অবস্থায় বিলুপ্তির দশ মাস পর গেল বছরের ২২ জুলাই সোহরাবকে আহ্বায়ক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তখন কেবল আহ্বায়কের নামই ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষে ৯ সেপ্টেম্বর ৬৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। ওই কমিটি অনুমোদন হবার পর দুই পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা বাড়ে। নূর মোহাম্মদ পক্ষের দাবি কমিটির বেশির ভাগ সদস্য বিএনপি ও জামাত থেকে আসা সুবিধাবাদী নেতা-কর্মী। এই ইস্যুতে নূর মোহাম্মদ পক্ষ লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে মাঠ গরম করে রাখেন। গেল বিজয় দিবসে দুই পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়। তখন উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। বিজয় দিবসের সংঘর্ষেও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখে পাকুন্দিয়াবাসী।

পদত্যাগ করার কারণ জানতে কথা হয় সাংসদ পক্ষের রফিকুল ইসলাম রেনুর সঙ্গে। তিনি বলেন, সোহরাবের কমিটি জামাত ও বিএনপি নির্ভর। কমিটি পাবার পর তিনি আমাদের সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। এই অবস্থায় তার সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয় বলেই আমরা দশজন দল থেকে সরে গেছি।

অস্ত্রের রাজনীতি প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, সোহরাব এখন টিকে আছে অস্ত্রবাজি করে। পাকুন্দিয়ায় এখন সোহরাবের লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।

অভিযোগ বিষয়ে কথা হয় সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে। এই ব্যাপারে তার ভাষ্য হলো, পাকুন্দিয়ার রাজনীতিতে শান্তি না ফেরার পেছনে এক নম্বর ব্যক্তি সাংসদ নূর মোহাম্মদ। তার নেতৃত্বে বিজয় দিবস ও শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে আমার কর্মসূচিতে হামলা হয়।

অস্ত্রের রাজনীতির বিষয়ে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, নূর মোহাম্মদের লোকজনের হাতে এখন অগণিত অস্ত্র। তারা এখন অস্ত্র দেখিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। পদত্যাগের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত আমরা এখন তাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সোহরাবের করা অভিযোগ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকালে ফোন দেওয়া হয় সাংসদ নূর মোহাম্মদকে। তিনি ফোন ধরেন। পাকুন্দিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে আর ভালো লাগে না বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

এদিকে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে পরিণত হলেও এখনও মামলা হয়নি। কোন পক্ষই মামলা করতে থানায় যায়নি। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন হলেও এই বিষয়ে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণে পুলিশের ভূমিকা নিরব।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, শহীদ দিবসের দিন তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ইটপাটকেল ব্যবহার হয়েছে। এটি মামলা করার মতো কোন ঘটনা নয়।

(এসএস/এসপি/মার্চ ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test