E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে নদী খননের বালু ও মাটি হরিলুট !

২০২২ মার্চ ০৪ ১৮:১৬:৫৭
দিনাজপুরে নদী খননের বালু ও মাটি হরিলুট !

শাহ্ আলম শাহী, স্টাফ রিপোর্টার : দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্প  পূণর্বাসন,শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী ডেজিং বা খননের অজুহাতে কোটি কোটি টাকার বালু ও মাটি হরিলুটের মিশনের নেমেছেন,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।নদীর বালু-মাটি দিয়ে দুইপাশের বাঁধসহ রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না কোথাও। চুক্তিভিত্তিক টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের পুকুর ভরাটসহ ট্রাক্টর যোগে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করছে এই বালু ও মাটি। উপরোন্তু অপরিকল্পতি বালু-মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

একশত ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলছে, দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্প পূণর্বাসন-১,শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ডেজিং বা খননেরম কাজ। গর্ভেশ্বর নদী সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ঢেঁপা নদী ৪০ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার ও ছোট ঢেপা নদী ১৫ কিলোমিটার খননের নিদের্শনা রয়েছে। চলতি বছর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে কোথাও এখনো লাগানো হয়নি,প্রাক্কালিক ব্যয় ও কাজের পরিধি সাইনবোর্ড।

গড়ে ২৫ থেকে ৪৫ মিটার প্রস্ত এবং এক থেকে ৪ মিটার গভীরতা খননের কথা থাকলেও তা হচ্ছে,হ য ব র ল অবস্থায়। নদী খননের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না এখানে। খনন প্রকল্প পুঁজি করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বালু ও মাটি লুটে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নদীর বালু-মাটি দিয়ে দুইপাশের বাঁধসহ রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না কোথাও।

এলাকার মোকলেসুর রহমান,রাবেয়া খাতুন,তুহিন,মোবারক,লিয়াকত,মজিবর,আব্দুল মজিদ সহ অনেকের অভিযোগ, স্থানয়ি ইউপি চেয়ারম্যান চুক্তিভিত্তিক টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের পুকুর ভরাটসহ ট্রাক্টর যোগে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করছে এই বালু ও মাটি। উপরোন্তু অপরিকল্পতি বালু-মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বালু ও মাটি লুটের হিড়িকে বীরদর্পগামী ট্রাক্টরের চাকায় দলিত হচ্ছে,তাদের জমির ফসল।

বালু ও মাটি লুটে ব্যবহূত ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল এবং শব্দ দূষণে স্থানীয় এলাকাবাসি অতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা এই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন,ট্রাক্টর বেশ কয়েকজন চালক।

এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন,চাহিদা অনুযায়ী কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বালু ও মাটি দেয়া হচ্ছে। আমি বালু ও মাটি লুটের সাথে জড়িত নই।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতূজা আল- মঈদ জানান, অতিরিক্ত বালু ও মাটি চাহিদা মাফিক স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রদানের পর দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। উত্তোলিত বালু ও মাটি কেউ অবৈধভাবে নিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চলতি বছর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে কোথাও এখনো প্রাক্কালিক ব্যয় ও কাজের পরিধি সাইনবোর্ড কেনো লাগনো হয়নি এবং তত্বাবধানে কাউকে পাওয়া যায়নি তা দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামকে অনুযোগ করা হলে তিনি জানান,সাইনবোর্ড তৈরি করতে দেয়া হয়েছে।আজ রাতের মধ্যেই লাগানো হবে। প্রকল্প তত্বাবধানে আমাদের লোক রয়েছে। তিনি আপনাকে ফোন দিবে।

তিনি বলেন, নদী খননের মাটি ও বালু দিয়ে দুই পাড়ে শক্ত বাঁধ কিংবা সড়ক নির্মাণ করার নির্দেশনা রয়েছে। অতিরিক্ত বালু ও মাটি চাহিদা মাফিক স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রদানের পর দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বালু ও মাটি লুট হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্প পূণর্বাসন,শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী ডেজিং বা খনন প্রকল্পকে আশাব্যঞ্জক বলে দাবী করে বালু লুটের বিষয়টি প্রতিহত করতে আশ্বাস দিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইশবালুর রহিম। তিনি বলেন, আমি এ পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক অর্থ সহায়তা দিয়েছি। কিন্তু কারা বালু ও মাটি নিয়ে যাচ্ছে, জানিনা। তদন্ত সাপেক্ষে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫৫ ঘন মিটার প্রাক্কালিক ড্রেজড মেটেরিয়াল উত্তোলিত হবে এবং প্রকল্প কাজ ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।পেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরজমিনে বেশবিছু এলাকা ঘুরে বালু ও মাটি হরিলুটের সত্যতা মিলেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাশীন পার্টির নেতা পরিচয়ে বালু ও মাটি লুটের মহোৎসব চলছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক ট্রাক্টরের স্হাায্যে বীরদর্পে বালু ও মাটি লুট করছে,আলোচিত ওই ইউপি চেয়ারম্যান। ‘জিরো থেকে হিরো’ ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিলেছে,বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য।

দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্প পূণর্বাসন, শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী ডেজিং বা খননের উত্তোলিত বালূ ও মাটি হরিলুটের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দোষিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, এমনটাই দাবি তুলেছেন,পরিবেশবিদ এবং নদী বিশেষজ্ঞরা।

(এসএএস/এএস/মার্চ ০৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test