E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগর উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন ২১ মে, প্রস্তুতি কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ হতাশা!

২০২২ মার্চ ২০ ১৬:২৮:৪৯
নবীনগর উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন ২১ মে, প্রস্তুতি কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ হতাশা!

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : দীর্ঘ আট বছর পর অনুষ্ঠেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আওয়ামীলীগের আসন্ন ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি গঠিত হওয়া ৯ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকের মাঝেই প্রচন্ড ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাই চূড়ান্ত সম্মেলনের আগেই সম্মেলনটিকে বিতর্কমুক্ত রাখার লক্ষে গঠতি প্রস্তুতি কমিটি দ্রুত পুনর্গঠনের দাবী জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মীরা।

এদিকে আসন্ন সম্মেলন ও স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে আজ রবিবার সন্ধ্যা ৭ টায় ঢাকার পিকিং চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এক জরুরী মতবিনিময় সভা ডেকেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খান। ধারণা করা হচ্ছে, প্রস্তুতি কমিটি তে যারা অন্তভূর্ক্ত হতে পারেন নি, তাদের মতামত নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতেই মূলত এ সভা ডাকা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভা থেকে আগামি ২৮ মে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরই জেলার অন্যতম উপজেলা খ্যাত নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভা ডাকা হয় গত ৬ মে। ওই বর্ধিত সভা থেকে জেলা সম্মেলনের আগে আগামি ২১ মে নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ লক্ষে পরবর্তীতে নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিমকে 'আহবায়ক' করে আগামি ২১ মে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনকে সফল করতে ৯সদস্যের একটি সম্মেলন প্রত্ততি কমিটি গঠন করা হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল, নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিমের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ৯সদস্যের ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নবীনগর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ নসু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এডভোকেট সুজিত কুমার দেব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস, উপজেলা আওয়ামীলীগের তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুলী শাহান, মোস্তফা জামাল ও শাহীন সরকার এবং জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সাতমোড়া ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম।

উপজেলা আওয়ামীলীগের ২১টি ইউনিয়ন ও সকল ওয়ার্ডে বহুল প্রত্যাশিত আসন্ন সম্মেলনকে সফল করতে গঠিত প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দকে ইতিমধ্যে দায়িত্বও বন্টন করে দেয়া হয়।

ঘোষিত দায়িত্ব বন্টন অনুযায়ি বোরহান উদ্দিন আহমেদকে (সলিমগঞ্জ, বড়িকান্দী ও শিবপুর), জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহান (শ্যামগ্রাম ও লাউর ফতেপুর) এডভোকেট শিব শংকর দাস (ইব্রাহিমপুর, শ্রীরামপুর ও বিটঘর) এডভোকেট সুজিত কুমার দেব (সাতমোড়া, নাটঘর, বীরগাঁও) জসিম উদ্দিন আহমেদ (নবীনগর পশ্চিম, জিনদপুর ও বড়াইল) মোস্তফা জামাল (বিদ্যাকুট ও কৃষ্ণনগর) শাহিন সরকার (কাইতলা উত্তর ও দক্ষিণ) এবং নজরুল ইসলামকে (রসুল্লাবাদ, রতনপুর ও নবীনগর পূর্ব) ইউনিয়নে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ দপ্তর সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা বিপুল চন্দ্র সাহা।

এদিকে আওয়ামীলীগের আসন্ন সম্মেলনটিকে 'প্রশ্নবিদ্ধ' ও 'বিতর্কিত' করতে সম্প্রতি গঠিত এই প্রস্ততি কমিটিতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় অনেক যোগ্য নেতাকেই যুক্ত করা হয়নি বলে তৃণমূলে নানা গুঞ্জন ও অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ আল রোমান বলেন, 'গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেই রাখা হয়নি। দলের সিনিয়র সহসভাপতি ও দলের দুর্দিনের কান্ডারি তিন তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের একজনকেও এ কমিটিতে রাখা হয়নি। রাখা হয়নি দলের বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও। তাহলে সম্মেলনটা সফল করবে কারা? আওয়ামীলীগ নেতা হারুন অর রশীদ, যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম রিপন ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সালাউদ্দিন বাবু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'যাঁরা দলীয় কার্যালয়ে সর্বক্ষণ সময় দেন, যাঁরা দলের দুর্দিনে জেল জুলুম সহ্য করে দলকে সুসংগঠিত রাখেন, তাদের কয়জন আছেন এই প্রস্তুতি কমিটিতে? তাই আমরা চাই দলের স্বার্থে, সম্মেলনের স্বার্থে দ্রুত এই কমিটি পুনর্গঠন করে দলের ত্যাগী নেতাদেরকে এই কমিটিতে যুক্ত করা হোক।'

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, 'যাঁরা কমিটিতে আছেন তাঁরা সকলেই যোগ্য। তবে মূলত নবীনগরে দলটিকে তৃণমূল পর্যায়ে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দলকে আজ ক্ষমতাসীন করতে বহু দু:খকষ্ট ভোগ করেছেন, তাঁদেরকে আজ এতটা অবহেলা কেন? তাই আমরা চাই, দলের ত্যাগী ও আদর্শিক নেতাদের মূল্যায়ণ করা হোক।'

এ বিষয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম দুই সদস্য এডভোকেট শিব শংকর দাস ও বোরহান উদ্দিন আহমেদ নসু বলেন, 'সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের যেসব ত্যাগী ও আদর্শিক নেতারা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হননি, তাঁদেরকে সহসাই প্রস্তুতি কমিটির সভায় আলোচনার ভিত্তিতে নেয়ার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, এবারের সম্মেলনে সকল মান অভিমান ভুলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গ্রহণযোগ্য কমিটি আমরা উপহার দিতে পারবো।'

তবে কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম বলেন, 'যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদেরকে প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দের আলোচনার ভিত্তিতে 'সহযোগী' হিসেবে আমরা অবশ্যই নিয়ে নেবো। কারণ ৯ জনের পক্ষেতো আর ২১ ইউনিয়নের সব কমিটি গঠন করা সম্ভব হবেনা।'

তবে তিনি সুস্পষ্টভাবেই জানান, গঠিত ৯ সদস্যের মূল কমিটি'তে নতুন করে কাউকে নেয়া যাবে না।'

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার আজ রবিবার বিকেলে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, "মূলত একজন 'আহবায়ক' ও একজনকে 'সদস্য সচিব' করে দলের সকলকে সদস্য রেখেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করতে হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ি এখানে মূল দলের কাউকেতো বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আসলে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আমি গুরুত্ব দিয়েই নবীনগরের এ বিষয়টি দেখবো।'

প্রসংগত, ২০১৪ সালের ৬ জুন নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল।

(জিডি/এসপি/মার্চ ২০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test