E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাংবাদিক দেবাশীষকে সংবাদ প্রকাশের জেরে হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানি

২০২২ এপ্রিল ০৩ ১৫:০১:৫০
সাংবাদিক দেবাশীষকে সংবাদ প্রকাশের জেরে হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানি

মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী সদর : চাঞ্চল্যকর রবিউল হত্যার সংবাদ প্রকাশ করায় ডিবিসি নিউজ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকার রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি দেবাশীষ বিশ্বাস কে ওই মামলায় যুক্ত করা হয়। গত ২০২০ সালে জেলার কালুখালী উপজেলা মাঝবাড়ি ইউনিয়নের বেদবাড়িয়া গ্রামে খুন হয় রবিউল ইসলাম। ঘটে যাওয়া সেই খুনের সাহসী সংবাদ ডিবিসি নিউজে প্রথম প্রচার করেন ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাস । স্ক্রল প্রচারকে কেন্দ্র করে তার উপর ক্ষুব্ধ হন রাজবাড়ী জেলা পুলিশের তৎকালীন কতিপয় সদস্য। রবিউল হত্যাকাণ্ডের সাথে তৎকালীন কালুখালী থানা পুলিশসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন খুন হওয়া রবিউলের ভাই ও স্বজনেরা। রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার ভাই আক্তার সরদার। হত্যাকাণ্ডে পুলিশ জড়িত থাকার সংবাদ প্রকাশের জেরে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আসামি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডিবিসি নিউজের রাজবাড়ী প্রতিনিধি দেবাশীষ বিশ্বাসকে ১০ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফেরদৌস আহম্মেদ।

রবিউল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কালুখালী থানা ও রাজবাড়ী আদালতে দু’টি মামলা করেন নিহতের স্ত্রী ও বোন। দুটি মামলার কোনটিতেই দেবাশীষ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও স্বাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দীর কোন জায়গায় সাংবাদিকদের নাম আসেনি। যে কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।

গত বছরের ৩ মার্চ (বুধবার) রাজবাড়ীর দুই নম্বর আমলি আদালতে অভিযোগপত্রের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগপত্রে বিজ্ঞ আদালত বলেন, অত্র মামলায় অভিযোগভুক্ত আসামি সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাস বর্ণিত খুনের ঘটনার সাথে কিরূপে জড়িত তাহার বিন্দুমাত্র আভাস দাখিলী কাগজাদি পর্যালোচনায় পাওয়া যায় না। এরুপ ব্যক্তিতে হত্যা মামলায় জড়িত করার কাজটি তদন্তকারী কর্মকর্তার ইচ্ছাকৃত ত্রুটি মর্মে প্রতীয়মান হয়। উক্তরূপ কর্ম সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষপাতদুষ্ট, অসৎ এবং দায়িত্বহীন আচরণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। যে কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারকির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে তদন্ত দেয় আদালত।

দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দায়ের করেছে সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান। সিআইডির অধিকতর তদন্তে সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাসের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কোন তথ্য প্রমান পায়নি। তবে একবার অভিযোগ পত্রে নাম থাকায় তার নাম আসামি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে পুলিশের এই কর্মকর্তা। আবার ভোগান্তি শুরু হয় সাংবাদিক দেবাশীষ বিশ্বাসের। সোমবার (৪ এপ্রিল) রাজবাড়ীর আমালী আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্রের গ্রহণ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জেলায় কর্মরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, দেবাশীষ বিশ্বাস একজন ভালো সাংবাদিক। হঠাৎ করেই তার নাম হত্যাকান্ডের সাথে আসায় এটি গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা জানি রবিউল হত্যাকান্ড নিয়ে সবচেয়ে সাহসী নিউজ করে দেবাশীষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা থেকে তাকে অব্যাহতির আবেদন জানায় জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।

রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শিহাবুর রহমান বলেন, একজন পেশাদার সাংবাদিককে সেভাবে হয়রানি করা হলো এটা স্বাধীন দেশের সংবাদকর্মী হিসাবে কাম্য নয়। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলা থেকে দেবাশীষ বিশ্বাসকে অব্যাহতি।

আসামী পক্ষের আইনজীবী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেবাশীষ বিশ্বাস একজন সাংবাদিক। তিনি শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। এছাড়া দু’টি মামলা একসাথে তদন্ত না করায় মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত। দ্রুত সমেয়র মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির অনুরোধ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, আমি আইনগত ভাবে এই বিষয়টি মোকাবেলা করবো। সারা দেশের সকল সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি দ্রুত বন্ধ হোক এটি প্রত্যাশা করেন তিনি।

(এমজি/এএস/এপ্রিল ০৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test