E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগরে ডাইভারশান সড়ক নির্মাণ না করেই সেতু নির্মাণ শুরু, জনদুর্ভোগ চরমে! 

২০২২ এপ্রিল ১২ ১৮:৩৫:৫৪
নবীনগরে ডাইভারশান সড়ক নির্মাণ না করেই সেতু নির্মাণ শুরু, জনদুর্ভোগ চরমে! 

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় ডাইভারশান সড়ক নির্মাণ না করেই একটি পুরনো সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলায়, মাসাধিককাল ধরে আশ পাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে এক অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা ফেসবুকে নানারকম লেখালেখি করার পর, সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ  ডাইভারশান সড়কের বদলে নদীর ওপর একটি বাঁশের সেতু নির্মাণ করে দেয়। এতে জনদূর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর সদর থেকে সড়কপথে পৌর এলাকার আলমনগর ও নবীপুর যাওয়ার পথে আলমনগর উত্তর প্রাইমারী স্কুল সংণমলগ্ন ভাটা নদীর ওপর প্রায় ৪০ মিটার দীর্ঘ একটি লম্বা সেতু ছিল। ওই সেতুর ওপর দিয়েই আলমনগর ও নবীপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু ভাটা নদীর ওপর থাকা প্রাচীন এই সেতুটি গত কয়েকবছর ধরে প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায়, এলাকায় 'মরণ সেতু' খ্যাত ওই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক যানবাহন সেতুটির নীচে পড়ে গিয়ে বহু যাত্রীর প্রাণহানীও ঘটে।

এ অবস্থায় সেতুটি ভেঙ্গে নতুন করে সেখানে একটি বড় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার।

জানা যায়, এলাকাবাসির মারাত্মক দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সম্প্রতি সেখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এলজিইডির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিপুল চন্দ্র বণিক। ইতিমধ্যে দরপত্র হয়ে যাওয়ার পর মেসার্স বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটির কার্যাদেশ পায়। সেতুটির নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি ১০ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ণ করছে এলজিইডি।

কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, কার্যাদেশ পাওয়ার পর ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ি ডাইভারশান সড়ক নির্মাণ না করেই পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি সম্প্রতি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে। ফলে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের সড়ক পথে নবীনগর সদরে যাতায়াতে এক চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়।

এদিকে ডাইভারশান সড়ক নির্মাণ না করেই আগের সেতুটি ভেঙ্গে ফেলায়, সৃষ্ট জনদূর্ভোগ নিয়ে স্থানীয়রা ফেসবুকে সচিত্র লেখালেখি শুরু করলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওপর মহলের টনক নড়ে। এ অবস্থায় কয়েকদিন আগে সেখানে (ভাটা নদীর ওপর) সংশ্লিষ্টরা ডাইভারশান সড়কের বদলে একটি বাঁশের সাকো তৈরী করে লোকজন পাড়াপাড়ের ব্যবস্থা করা হয় ।

এলাকাবাসির অভিযোগ, ডাইভারশান সড়কের বদলে রহস্যজনক কারণে কেন বাঁশের সাঁকো করে দেয়া হল, সেটিই এলাকাবাসি বুঝতে পারছেনা।

সেতু সংলগ্ন আলমনগর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, 'ডাইভারশান সেতু না করেই পাকা সেতুটি ভেঙ্গে ফেলায়, বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে আসতে প্রতিদিন প্রচন্ড দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটির দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।'

আওয়ামীলীগের স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি নূরে আলম বলেন, 'সেতুটি ভাঙ্গার আগে নিয়ম অনুযায়ি ডাইভারশান সড়কটি কেন নির্মাণ করা হলনা, আমরা তার রহস্য জানতে চাই। পাশাপাশি ডাইভারশান সড়কের বদলে কেন ভাটা নদীর ওপর বাঁশের সাকো করা হলো, সেটিও এলাকাবাসি জানতে চায়।'

আলমনগর গ্রামের বিশিষ্টজন ট্যাকনো ড্রাগের কর্ণধার জালাল উদ্দিন বলেন,'আমি শুনেছি, ডাইভারশান সড়কের জন্য ১৫ লাখ টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়েছেন। তাহলে কেন সেটির বদলে বাঁশের সাকো করা হল?

আলমনগর গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নোয়াফ সভাপতি সফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, 'ডাইভারশান সড়ক নির্মাণের আগেই কেন সেতুটি ভাঙ্গা হল, সেটি সবার আগে খুঁজে বের করা দরকার। তাই ডাইভারশান সড়কসহ নতুন সেতুটি দ্রুত নির্মাণের জন্য আমরা মেয়র মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সার্বিক সহযোগিতা চাই।'

নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস বলেন, ‘এটি মূলত বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। এখানে পৌরসভার কোন করণীয় নেই। তবে জনদূর্ভোগ লাঘবে সেতুটি যাতে দ্রুত নির্মিত হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমি একাধিকবার কথা বলেছি, আবারও বলবো।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, 'সেতুর পশ্চিম পাড়ে সামান্য জায়গা নিয়ে একটু সমস্যা থাকায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে। তবে জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইতিমধ্যে ভাটা নদীর ওপর একটি বড় বাঁশের সাকো তৈরী করে দেয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গ্রামের জন্য নির্মাণাধীন এ ধরণের সেতুতে সেরকম ডাইভারশান সড়ক নির্মাণের তেমন কোন বিধান নেই। তবে জনগণের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা সেখানে ইতিমধ্যে বাঁশের সাকো তৈরী করে দিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ডাইভারশান সড়কের জন্য ১৫ লাখ নয়, মীলত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি।

এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে সেতুর কার্যাদেশ পাওয়া সেতু নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক লোকমান হোসেনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা যায়নি।

(জিডি/এসপি/এপ্রিল ১২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test