E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খোলা আকাশের নিচে লক্ষ লক্ষ টন ইউরিয়া সার

২০২২ এপ্রিল ১৮ ১৪:২৬:১৯
খোলা আকাশের নিচে লক্ষ লক্ষ টন ইউরিয়া সার

ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : উত্তরাঞ্চলের একমাত্র নদীবন্দর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় জমা পড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টন ইউরিয়া সার। বাফার গোডাউন ও বন্দরের শেডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার অযুহাতে মাসের পর মাস বন্দরের বিভিন্ন স্থানে রাখা সার রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে গুনগত মান হারানোর পাশাপাশি এর রাসায়নিক উপকরন ও দুর্গন্ধ বন্দর এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে বাফার কর্মকর্তারা মুখ না খুললেও কৃষিকাজে এই সাড় ব্যাবহার করে সুফল আসবে না বলে দাবি বন্দর ব্যাবসায়িদের।

শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষি-জমিতে ব্যাবহারের জন্য দেশের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া, পটাশ ও জিম সারের সিংহভাগ সরকারি বিতরন সংস্থা বাফার গোডাউনে সরবরাহ করা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের মাধ্যমে। ইরি ও বোরো মৌসুমে কৃষি জমিতে ব্যাবহারের জন্য অত্যাধিক পরিমানে আনা হলেও সারা বছরই এই বন্দরে ছোট-বড় জাহাজে আনা হয় ইউরিয়া সার। আর এই সারগুলো মাসের পর মাস বন্দর এলাকায় খোলা আকাশের নিচে স্তুপ করে রাখা হয়। খোলা আকাশের নিচে কোন রকমে প্লাষ্টিকের কাগজ দিয়ে স্তুপ করে রাখার ফলে অনেক বস্তার ভিতরেই জমাট বেধে যাওয়া ইউরিয়া সার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া এই রাসায়নিক সারের প্রভাবে ইতিমধ্যেই বন্দর এলাকার অধিকাংশ গাছ মারা গে

ইরি মৌসুমের জন্য এই বন্দরে আনা সারের পাশাপাশি গত বছর চীন থেকে আমদানি করা ইউরিয়ার স্তুপও রয়েছে বন্দরে। যেগুলোর অধিকাংশই রোদ-বৃষ্টিতে জমাট বেধে পাথরে পরিনত হয়ে গেছে। গুনগত মানের কথা না ভেবে এই সারগুলোর জমাট ভেঙ্গে পুনরায় বস্তায় ভরে এ বছরে সার ডিলারদের দেয়া হচ্ছে কৃষকের কাছে বিক্রি করার জন্য।

বন্দর ও বাফার গোডাউনে ধারনক্ষমতা আট হাজার টন। কিন্তু বন্দরে সার আসে চার থেকে পাচ লক্ষ টন। যার ফলে বাধ্য হয়ে বন্দরে খোলা আকাশের নিচে স্তুপ করে রাখা হয় সার। এতে সারের গুনগত মান নষ্ট হয়।

রসায়নবিদদের মতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত ইউরিয়া সারের মূল উপাদান নাইট্রোজেন, আর এই নাইট্রোজেন ফসলের জন্য উপকারি উপাদান, যা দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় রাখা সারে কিছুতেই বিদ্যমান থাকবে না। ফলে এই সার বাবহারে কৃষক কোন সুফল পাবে না। কৃষকের হাতে গুনগত মান সম্পন্ন ইউরিয়া সার পৌছে দিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে সরকার এমনটাই বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ঠদের।

বন্দর শ্রমিকেরা বলেন, এখানে বড় গোডাউন না থাকায় সার বাইরে রাখা হচ্ছে। এত রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে গুনগতমান ও সার জমাট বেধে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে বহন করতে। এখানে বড় গোডাউন হলে আমরা শান্তিতে কাজ করতে পারবো।

বাঘাবাড়ি নদী বন্দর ইজারাদার মো: আবুল হোসেন বলেন, বন্দরে বড় একটি সমস্যা সার রাখার বড় কোন গোডাউন নাই। বন্দর ও বাফার গোডাউনে ধারনক্ষমতা আট হাজার টন। কিন্তু বন্দরে সার আসে চার থেকে পাচ লক্ষ টন। যার ফলে বাধ্য হয়ে বন্দরে খোলা আকাশের নিচে স্তুপ করে রাখা হয় সার। এতে সারের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শাহ মো: শামসুজ্জোহা জানান, বন্দরে খোলা আকাশের নিচে রাষ্টায়ত্ব সম্পদ সার রেখে তার গুনগতমান নষ্ট হওয়ার ঘটনা বন্ধে একাধিকবার বন্দর কৃতপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কোন ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবারো গুদাম নির্মানের জন্য আবেদন করা হবে ।

(আইএইচ/এএস/এপ্রিল ১৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test