E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে ৪০ জন এতিম মেয়ের যৌতুকবিহীন বিয়ে

২০২২ মে ২৮ ০০:৩৭:৪৯
দিনাজপুরে ৪০ জন এতিম মেয়ের যৌতুকবিহীন বিয়ে

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : জাঁকজমকপূর্বভাবে ৪০ জন এতিম মেয়ের যৌতুন বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো দিনাজপুরে। দিনাজপুর শহরের গ্রীল ভিউ কমিউনিটি সেন্টারে আজ শুক্রবার এ বিয়ে অনুষ্ঠনের আয়োজন করে দিনাজপুর শিশু নিকেতন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।

দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাবের শিশু নিকেতনে বেড়ে ওঠা ৪৯ জন এতিম মেয়ের যৌতুক বিহীন এ বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রশাসন, সাংবাদিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। জাতীয়া সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি মহৎকাজে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যৌতুক আমাদের সমাজে একটি ব্যাধী। এই ব্যাধী থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান যে ৪০ জন ছেলে যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করেছেন এতিম কন্যাদের, এটি সারাদেশে একটি দৃষ্টান্ত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতিমদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। তাদের স্বাবলম্বী করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছেন। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর শিশু নিকেতন এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ শতাধিক এতিম মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে।

২৭ মে ২০২২ শুক্রবার দিনাজপুর গ্রীণ ভিউ কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গনে দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব, শিশু নিকেতন এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে ৪০ জন নিবাসী মেয়েদের বিবাহোত্তর বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এসব কথা বলেন।

আলোকসজ্জা , গেট , স্টেজ , ভিডিও, ব্যান্ডপাটি কোন কিছুই কমতি ছিল না দিনাজপুর শহরের গ্রীনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে। কমিউনিটি সেন্টারকে সাজানো হয়েছিল রংবেরং বেলুন দিয়ে। শুক্রবার দুপুরে একই সাথে ৪০ জন পিতামাতাহীন এতিম মেয়েকে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হলো। দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাবের অধীনে শিশু নিকেতনের নিবাসী এতিম মেয়েদের যৌতুক বিহীন বিয়ের আয়োজন করে দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব ও দিনাজপুর শিশু নিকেতন। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এতিম কন্যাদেরকে তুলে দেওয়া হলো স্বামীদের হাতে। সাজসজ্জার পাশাপাশি বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত প্রায় ১২ শ অতিথির মধ্যে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা জয়নুল আবেদীন, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি রেজা হুমায়ুন চৌধুরী শামীম, দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্তুজা আল মুঈদ, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরূপ কুমার বকসী বাচ্চু, শহর সমাজসেবা অফিসার মাইনুল ইসলাম, দৈনিক করতোয়া পত্রিকার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট লায়ন সৈয়দ মিজানুর রহমান মুন্না, শিশু নিকেতনের সভাপতি এবং লায়ন্স জোন চেয়ারম্যান (ক্লাবস) লায়ন মোজাফফর আলী মিলন প্রমুখ। বিবাহ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন রিজিয়ন চেয়ারপারসন - হেডকোয়ার্টার্স বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন এ্যাড. আব্দুল মজিদ। এ ছাড়াও বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর, পার্বতিপুর লায়ন্স ক্লাবের লায়ন্স নেতৃবৃন্দসহ আরও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ এই বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাবের পরিচালনায় দিনাজপুর শিশু নিকেতন (বালিকা এতিমখানা) অবস্হিত। এখানে বর্তমানে ১০১ জন এতিম শিশু কন্যা লোখাপড়ার পাশাপাশি হাতের কাজ, সেলাই এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে ৪০ জন এতিম কন্যার আজকে ধুধধাম ও উৎসব মুখর পরিবেশে বিয়ে দেওয়া হলো। ৪০ জন পাত্র ছিলেন দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার।

পাত্ররা কেউ ব্যবসায়ী,কেউ গার্মেন্টস চাকুরীজীবী, কেউ কৃষিকাজ, আবার কেউ ওয়ার্কসপের দোকানে কাজ করেন। দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক টেইলরিংয়ের দোকান রয়েছে। বিনা যৌতুকে শিশু নিকেতন হোমের এতিম কন্যা লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছেন। রাজ্জাক । বললেন আজকে আমার মত ৪০ জন ভাই যৌতুক না নিয়ে এতিম মেয়েদের বিয়ে করে উদাহারণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন সুখী হতে পারি সকলের কাছে দোয়া চাই। নতুন জীবন ও ঠিকানা পেয়ে খুশি রাজবাটি এলাকার ধানচাল ব্যবসায়ী তহিনুর ইসলামের নববিবাহিতা এতিম কন্যা হুমায়ারা উম্মুল। হামজাপুর গ্রামের ছেলে মোঃ রবিউল ইসলামের বাবা রায়হানুল ইসলাম বললেন, যৌতুক ছাড়াই আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই সব অভিভাবক এই কাজটি করুক।

আয়োজক শিশু নিকেতনের সভাপতি লায়ন মোজাফর আলী মিলন জানান, এই শিশু নিকেতন থেকে প্রতিবছর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। এবার এক সঙ্গে ৪০ জন এতিম মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলো। সাইকেল, সেলাই মেশিনসহ সংসারের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিশু নিকেতনের বাসিন্দাদের এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে ১৮ বছর হওয়া পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত শিশু নিকেতনের ১৭৪ জন মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(এসএএস/এএস/মে ২৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test