E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রায়পুরে হুমকিতে আতঙ্কিত শাহানারা, বেড়েছে নির্যাতন

২০২২ জুন ০৩ ১৬:৩১:১৭
রায়পুরে হুমকিতে আতঙ্কিত শাহানারা, বেড়েছে নির্যাতন

রায়পুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় মামলা করে বিপাকে পড়েছেন শাহানারা বেগম (৬০) নামের এক বিধবা বৃদ্ধ নারী। মামলাগুলো প্রত্যাহারে তাঁকে গত কয়েক দিন থেকেই অব্যাহত চাপ ও হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত মোঃ মিরাজ (৩৫) ও তাঁর লোকজন। উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম চরপাতা গ্রামের মজুমদার বাড়ির ঘটনা এটি। তবে শুক্রবার দুপুরে (৩ জুন) এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই বাড়ির আব্দুর রব মিয়ার ছেলে মোঃ মিরাজ। বাড়িটিতে ১০-১২টি পরিবারের বসবাস হলেও কেউই তাঁর ভয়ে কথা বলতে নারাজ। তাঁদের কাছে তিনি মূর্তিমান আতঙ্ক। এলাকায় পরিচিতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে। গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য (মেম্বার) হিসেবে ভোট করে পরাজিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারধর, দাঙ্গাহাঙ্গামাসহ বিভিন্ন ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জিডি ও আদালতে মামলার সংখ্যা অন্তত: ২০টি। চলতি বছরের ৬ মার্চ লক্ষ্মীপুরের মোঃ ছায়েদ (৩২) নামের এক রাজমিস্ত্রী ওই এলাকায় পাওনা টাকা নিতে আসলে তাঁকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ১৬ মার্চ চিকিৎসাধিন অবস্থায় কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল কাশেমের দায়ের করা মামলায় মিরাজও আসামি হয়েছে। ওই যুবককে মিরাজসহ অন্যরা মারধর ও বুকে পাড়া দিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে।

শাহানারা বেগম (৬০) বলেন, আমার স্বামী আব্দুল মান্নান প্রবাসে থাকা অবস্থায় ১৯৯২ সনে মারা যান। শিশু সন্তানদেরকে আমি অনেক কষ্টে মানুষ করি। এক ছেলে মুফতি হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত ও অপর ছেলে প্রবাসে রয়েছে। জায়গা-জমি নিয়ে মিরাজ পরিবারের সাথে আমাদের বিরোধ চলছে। এ পর্যন্ত মিরাজ, তাঁর বাবা আব্দুর রব ও তাঁর পক্ষের দুর্বৃত্তরা আমার ওপর অন্তত: ৩৫-৪০ বার হামলা চালিয়েছে। মারধরের আঘাত নিয়ে অসংখ্যবার হাসপাতালে গিয়েছি। এ বাড়িতে থাকতে হলে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য দাবি জানায়। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে মারধর করে। আমি মামলা করলে পুলিশের তদন্তেও আমার অভিযোগের সত্যতা মেলে। মামলাটি আদালতে সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে।

শাহানারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে থানায় ২৫-৩০টি জিডি ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। প্রতিটি তদন্তেই প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তাঁদের দৃশ্যমান কোনো শাস্তি না হওয়ায় দিন দিন তাঁরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে ওই মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য আমাকে গালমন্দ, হুমকি ও চাপ দিয়ে আসছে। তা না করলে আমাকে হত্যা করে গুমের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থয় আমি আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছি। আমি ও আমরা বাঁচতে চাই। শান্তিতে থাকতে চাই।

চরপাতা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রাজন হোসেন পাটওয়ারী রাজু বলেন, মিরাজের চলাফেরা স্বাভাবিক নয়। এলাকায় তাঁকে নিয়ে নানান গুঞ্জন রয়েছে। ওই এলাকাটি রায়পুর ও ফরিদগঞ্জের সীমানায় হওয়ায় অচেনা লোকজনের আনাগোনা একটু বেশিই হয়। এর আগেও সেখানে লক্ষ্মীপুরের এক যুবককে নির্যাতন করা হয়েছে। শাহানারা বেগমের পরিবারটিও তাঁর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মোঃ মিরাজ বলেন, জমি নিয়ে আমাদের দু’পরিবারে বিরোধ ও মামলা চলছে। আমাদেরকে তাঁরা অন্যায়ভাবে হয়রানি করছে। মিথ্যা কথা রটিয়ে সম্মানহানি করে চলেছে। তাঁদেরকে মারধর ও চাঁদাবাজি এবং হুমকির ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মামুনুর রশিদ বলেন, মিরাজ আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। তিনি কোনো পদে নেই। নেতা না হলেও চালচলনে তিনি নেতা। ওই গৃহবধূর পরিবারের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে অনেক আগে জানানো হয়েছিল। তবে ইদানিংকালের কোনো বিষয় অবগত নই।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়–য়া বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই নারীকে হুমকির বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

(পিআর/এসপি/জুন ০৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test