E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পদ্মা সেতুর বদৌলতে মাদারীপুরে চলছে উন্নয়নের মহা কর্মযজ্ঞ

২০২২ জুন ০৫ ১৩:৪১:৩৬
পদ্মা সেতুর বদৌলতে মাদারীপুরে চলছে উন্নয়নের মহা কর্মযজ্ঞ

ওহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : পদ্মা সেতুর বদৌলতে মাদারীপুর প্রবেশ করেছে ডিজিটাল যুগে। সেতুরসফল বাস্তবায়নে উচ্ছ্বসিত জেলাবাসী।উদ্বোধনের আগ থেকেই বহুমাত্রিক প্রকল্পের মহাকর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করেছে জেলার দৃশ্যপট। এক সময়েরউত্তাল পদ্মা নদীর দক্ষিন-পশ্চিম পাড়ে মাদারীপুর-শরীয়তপুর জেলা এবং অপর পাড়ে মুন্সীগঞ্জ ছিলো দুর্গম পারাপার। সেই দুর্গমকে সুগম করেছে১৬ কোটি মানুষের কাঙ্খিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু।পদ্মা সেতুরাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশকে সংযুক্ত করেছে অভাবনীয় মাত্রায়।

পদ্মা সেতুকে ঘিরে জেলার নির্মাণ করা হয়েছে উন্নত দেশের আদলে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে,নির্মাণ করা হচ্ছেমেগা প্রকল্প শেখ হাসিনা তাঁতপল­ী, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দাদা ভাই উপশহর, মুজিব কেল­া, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, হাইটেক পার্ক,সারা দেশের সাথে দক্ষিন বঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, ফোরলেন মহাসড়ক, ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজ।সেতু উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেএই জনপদের মানুষ আধুনিক সবসুযোগ সুবিধা পেতে শুরু করবে।হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ সব মেগা প্রকল্পের বেশ কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। চলমান ও অপেক্ষমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মাদারীপুর প্রবেশ করবে ডিজিটাল যুগে।গড়ে উঠবে বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন। মেগা প্রকল্প ছাড়ারও অসংখ্য ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় জনগণ তাদের কাঙ্খিত সেবা পেতে শুরু করেছে।জেলা সদরে নির্মাণ করা হয়েছে ১০তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, খামার বাড়ি, মৎস্য ভবন। ডাসার থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশিপূরণ হবে লাখো মানুষের আবাসন।স্বাস্থ্যখাতেও ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞের শিখা ছড়িয়ে জেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।নতুন নতুন আরো প্রকল্প পাস হচ্ছে। রেল ও পদ্মা সেতু চালু হলেইউঁকি দিবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।

অচিরেই মাদারীপুরসহপুরো দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল বড় ধরণের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।এক সময় মাদারীপুরঅঞ্চল ছিলো একেবারে অবহেলিত, অনুন্নত ও দুর্গম। মাদারীপুর অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও ছিলো অনুন্নত এক প্লাবনভূমি। প্রকৃতির বৈরিতা, শ্রেণি বৈষম্য ও শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে কোনো দিন উন্নয়নের ছোঁয়াটুকু লাগেনি এখানে। নদ-নদী, বিল-বাওর ও ভাঙনপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় একমাত্র নৌপথ ছাড়া এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থার আর কোনো বিকল্প ছিলো না। এই দুর্গম জনপদে সহজ যাতায়াতে নৌকাই ছিলো একমাত্র ভরসা। কাঠের তৈরি কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করতো আভ্যন্তরিন নৌপথে। শুস্ক মৌসুমে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতের জন্য ছিলো কর্দমাক্ত মেঠোপথ।

তিরিশ থেকে চল্লিশ দশকের মধ্যে আড়িয়ালখাঁর ভাঙনে আদি শহর বিলীন হয়ে যায়। প্রাচীন শহরে অবকাঠামো বলতে কিছুই ছিলো না। কৃষিপণ্যের মধ্যে পাট ছিলো প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট ব্যবসায়ের জন্য চরমুগরিয়া বন্দর ছিলো মারোয়ারীদের প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। এই নদী বন্দরটি গড়ে ওঠে লোয়ার কুমার ও আড়িয়ালখাঁ নদের সংগমস্থলে। পাট রপ্তানীর জন্য চরমুগরিয়া বন্দর প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডি নামে খ্যত ছিলো। এখান থেকে পাটের বেল্ট বড় বড় জাহাজে কলকাতা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করতো মারোয়ারীরা। পরবতীকালে প্রকৃতির বৈরিতায় শুকিয়ে যেতে থাকে নদ-নদী। সেই সাথে এক সময়ের প্রসিদ্ধ চরমুগরিয়া নদী বন্দরের মারোয়ারীরা ধীরে ধীরে এখান থেকে চলে যায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর তাঁর সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। দীর্ঘদিন কায়েমী স্বার্থবাদীদের কারণে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু না স্বার্থবাদীদের সকল অপচেষ্টা মোকাবেলা করে, বহু সংগ্রাম ও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসুরি শেখ হাসিনা জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশের হাল ধরেন শক্ত হাতে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁর পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। তার সেই প্রতিজ্ঞা ও প্রচেষ্টায় সারা দেশের মতো অবহেলিত এবং অনুন্নত মাদারীপুর আজ সমৃদ্ধির পথ বেয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পদিনের মধ্যেই পাল্টে দিয়েছেন দৃশ্যপট। যিনি অনুন্নত দেশকে সমৃদ্ধির মহাসড়কে নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন। গড়ে তুলছেন ডিজিটার বাংলাদেশ। যা থেকে বাদ পড়েনি মাদারীপুর জেলা। তাঁর শ্রম-মেধা, সততা, যোগ্য নেতৃত্ব ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে এক সময়ের অনুন্নত জনপদ মাদারীপুর এখন ডিজিটাল যুগের সাথে সংযুক্ত। যার মধ্যে পদ্মা সেতুর মত একটা অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। জনগণের রায় নিয়ে বিশ্বনন্দিত নেতা শেখ হাসিনা পূণরায় প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম একবার এবং পরবর্তীতে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়, প্রজ্ঞা আর রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় দেশ ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ণের ফলে অল্পদিনের মধ্যে দেশপৌঁছে যায় উন্নয়নের মহাসড়কে। এখন মাদারীপুর জেলার দিকে ফিরে তাকালে সেকাল-একালের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। অনুন্নত জনপদ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে। মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। শিক্ষা-সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত ব্যবস্থায় এসেছে আমুল পরিবর্তন। মেগা প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে উন্নয়ন ধারাবাহিকভাবে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে শিবচরে ১২০ একর জমির ওপর ১হাজার ৯‘শ ১১ কোটি টাকা ব্যয়েচলছে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লীর কর্মযজ্ঞ। ২০১৮সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পটির জন্য মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ও জাজিরার নাওডোবা এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে অসংখ্য ৬তলা বিশিষ্ট ভবনে প্রত্যেক তাঁতীর জন্য ৬‘শ ফুটের কারখানা ও ৮‘শ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকবে। নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক মানের শো-রুম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁতীদের ছেলে মেয়েদের জন্য থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।এ ছাড়া শিবচরে ৮একর জমিতে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক, ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজসহ একাধিক মেগা প্রকল্প। সম্পন্ন হয়েছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে (যাত্রাবাড়ি-শিবচর-ভাঙ্গা)-এর শিবচর অংশে দৃষ্টিনন্দন ১৫কিমি। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিবচরে বাস্তবায়ন করা হয়েছে জনকল্যাণমুখী বহু প্রকল্প।অন্যদিকে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু ওজেলার শিবচর হয়ে পুরো দক্ষিনাঞ্চল রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় এনে কাজ চলছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিবচর-ভাঙ্গা-মাদারীপুরহয়ে রেল লাইন চলে যাবে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে।

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক নৌমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বলেন, ‘২০১২ সালে আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় গবেষনা ও পর্যবেক্ষণের পর ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গত বছরের জুন মাসে শেষ হয়েছে। ১০তলা ভবনটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদারীপুরেই নির্মাণ করা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ সেপ্টেম্বর দৃষ্টিনন্দন ভবনটির উদ্বোধন করেন।’

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে দৃষ্টিনন্দন মডেল মার্কেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ কমপে¬ক্স, প্রতি ইউনিয়নে ডিজিটাল ই-সেবা চালু হয়েছে। শহর থেকে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় নির্মিত হয়েছে সংযোগ সড়ক। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। কোনো কেনো ক্ষেত্রে এ জেলার মানুষকে ঢাকামুখী না হলেও চলে। ভূমি সংক্রান্ত কোনো ভোগান্তি নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা ভূমি অফিস এমন কি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানুষ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে। কৃষক বান্ধব হয়ে উঠেছে কৃষিখাত। ভ্রমনপ্রিয়দের জন্য আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে চলছে নানা মুখী উদ্যোগ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষিখাতকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক উদ্যান(হর্টিকালচার), ইকোপার্ক, শিশুপাকর্, বিনোদন কেন্দ্র শকুনী লেক সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে পৌরসভার তত্তাবধানে। নির্মাণ করা হয়েছেজেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্স ভবন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাড়ে ৫‘শ আসন বিশিষ্ট আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি। শহরের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ১০কিমি ফোরলেন সড়ক। ভাঙ্গা-মাদারীপুর-বরিশাল ফোরলেন হাইওয়ের জরিপ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর অংশে রয়েছে ২৮ কিমি।৫টি উপজেলা প্রশাসন ও জেলার ৪টি পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শত শত ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগকে আরো সুগম করা হয়েছে। জেলার বড় বড় সেতুর মধ্যে কালকিনি উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান সেতু, সদরে আছমত আলী খান চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, শিবচরে বিল পদ্মার উপর শেখপুর সেতু, সদরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান সেতু, শিবচরে সম্ভুক সেতুউলে­খযোগ্য। শিক্ষা বিস্তারে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শত শত স্কুল কলেজ-মাদ্রাসা। চরমুগরিয়া বন্দরের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে মেরিন একাডেমির মতো তথ্য-প্রক্তুক্তি নির্ভর একটি আধুনিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র। জেলার মানুষ তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে গ্রাম থেকেই। দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা গৃহায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ জেলায় শতশত ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং এখনো চলমান রয়েছে। ৭০ বছর আগে শুকিয়ে যাওয়া ১৮কিমি লোয়ার কুমার পূন:খনন করায় এই নদীতে বইছে জোয়ার-ভাটা। এ অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেন সাংসদ শাজাহান খান নৌপরিবহন মন্ত্রী থাকাকালীন। পূন:খননকৃত লোয়ার কুমার দিয়ে এখন চলাচল করছে নৌযান।প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ ইয়াদ চারলেনের প্রধান সড়ক জুড়ে বর্ণিল সড়ক বাতি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন।নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক বাস টার্মিনাল।

মাদারীপুরে স্বাস্থ্যসেবায় এসেছে আমুল পরিবর্তন। ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল ও উপজেলায় সরকারি হাসপাতালে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী। প্রতিটি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সরকারে পাশাপাশি জেলার প্রতিটি উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শতাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল। দুর্গম এবং চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখন ইউনিয়ন থেকে এবং উপজেলা সদর থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা এখন বাংলাদেশের যেকোন জেলা শহরের চেয়ে উন্নত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারনির্দেশে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন মাদারীপুর-১ আসনের এমপি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। তিনি তাঁর মনের মাধুরী দিয়ে গড়ে তুলেছেন আধুনিক অডিটোরিয়াম, লালনমঞ্চ, মুক্তমঞ্চ, অসংখ্য ম্যুরাল ভাস্কর্য, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদা ভাই উপশহর, চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটরিয়াম ও প্রবাহমান ‘৭১ ভাস্কর্য, রবীন্দ্র সরোবর, সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গমাতার ম্যুরাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভবন, ‘৭১ সড়ক, শেখ হাসিনা সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ভাস্কর্য মুক্তবাংলা, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃত্মিস্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্ভ, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি। বাস্তবায়ন করেছেন ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা। স্বাস্থ্যসেবায় এনেছেন ব্যাপক উন্নয়ন। সৌন্দর্যবর্ধন করে গড়ে তুলেছেন গোটা শিবচরকে।তাঁর উন্নয়নের কারুকার্য যে কোনো মানুষকে বিমোহিত করবে। রাজধানী ঢাকা থেকে শিবচর ঘুরে পর্যটকরা মন্তব্য করেছেন, শিবচর যেনো পদ্মা পাড়ের একটুকরো সোনার বাংলা। বহুমাত্রিক উন্নয়নের কারণে শিবচরকে বাংলাদেশের মডেল উপজেলা হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে। এখানকার অনেক স্থাপনা দেশ প্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় করে গড়ে তোলা হয়েছে।মাদারীপুর জেলাবাসী এখন শিবচরকে নিয়েই গর্ব করেন। কারণ পদ্মাপাড়ের সেকালের শিবচর এখন আর ভাঙ্গা-গড়ার এবং দুর্গম জনপদ নয়। শিবচরে চলছে দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পের মহাকর্মযজ্ঞ। এ সব মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এই উপজেলা হয়ে উঠবে সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক শহরের আদলে দৃষ্টিনন্দন শহর।পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং মানুষের কর্মস্ংস্থানের বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন। বেসরকারি দেশী-বিদেশী বহু ইনভেস্টার আসবে তাদের স্বার্থে। আলোড়ন সৃষ্টি করবে দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে।

জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি বলেন, ‘পদ্মা সেতু শুধুমাত্র একটি সেতুই নয়, পদ্মা সেতু আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সেতু। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিন বঙ্গের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। এ অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ফসল নিয়ে আর দু:শ্চিন্তা করতে হবে না। সহজেই ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবে। পদ্মার পাড়ে বিভিন্ন মিল, কারখানা নির্মাণসহ বাণিজ্যিভাবে ব্যপক উন্নতি হবে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ভৌগলিকভাবেই ঢাকার সাথে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। আমাদের পাশেই পানগাও বন্দর, একদিকে পায়রা বন্দর, একদিকে মংলা বন্দর, আরেকদিকে বেনাপোল স্থল বন্দর। মাঝখানে থাকবে পদ্মা পাড়ের উপজেলাগুলো। দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অর্থনীতিতেই ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তাই এই সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু, এই সেতু আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সেতু।মেগা প্রকল্পগুলো চলমান আছে। নতুন নতুন প্রকল্প পাস হচ্ছে। কাজ শুরু হবে। আমাদের তো আসলে রেল ও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে ব্যাপক পরিকল্পনা আছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর চালু হলে শিবচরসহ দক্ষিনবঙ্গে একটা নতুন ধরণের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক ইনভেস্টটা তখন আসবে।সরকারি বড় বড় প্রকল্প আমরা পেয়েছি। আপনারা জানেন বেসরকারি প্রকল্পের জন্য ৩টা জিনিস প্রয়োজন,তা হলো যোগাযোগ, বিদুৎ এবং গ্যাস। আমাদের যে পরিকল্পনা আছে তাতে বিদুৎ হয়ে যাচ্ছে। আর যোগাযোগ তো পদ্মা সেতু, রেল ও নৌ তিনটাই আমাদের শিবচরের সাথে সম্পৃক্ত। আর গ্যাসের লাইন এখান থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এই তিনটা যখন যাবে তখন সরকারি ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি বেসরকারী ডেভলপমেন্ট ইনশাল­াহ অনেক পাবো আশা করি।’

(ওকে/এএস/জুন ০৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test