E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাংবাদিক প্রদীপ হত্যা

৩৬ ঘন্টাও গ্রেপ্তার হয়নি ঘাতক, আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

২০২২ জুন ০৭ ১৫:৪৯:৫১
৩৬ ঘন্টাও গ্রেপ্তার হয়নি ঘাতক, আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

কলাপাড়া প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সাংবাদিক আবু জাফর প্রদীপ হত্যার ৩৬ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনায় সোমবার রাতে নিহতের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার নিহতের সেজ ভাই ইলিয়াশ হোসেন সোহাগকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে সোহাগ। সাংবাদিক নেতাদের দাবি সাংবাদিক হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

দৈনিক গনকন্ঠ পত্রিকার কলাপাড়া প্রতিনিধি ও কলাপাড়া সাংবাদিক ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর প্রদীপের মরদেহ গত রোববার রাত দেড়টার পর তার বাড়ি থেকে আনুমানিক একশ ফুট দূরে পুকুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। প্রদীপের পেটে ছুরির ক্ষত ও হাতে ধারালো অস্ত্রের ক্ষত ছিলো। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা দেশীয় চাকু উদ্ধার করে।

নিহতের স্বজনরা জানান, ব্যবসার পাশাপাশি প্রদীপ সাংবাদিকতা করতো। গত ঈদের পর থেকে পারিবারিক সম্পত্তির বাটোয়ারা নিয়ে তার সেজ ভাই সোহাগের সাথে বিরোধ চলছিলো প্রদীপের। ঘটনার দিনও এই দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এছাড়া তার ব্যবসা নিয়েও প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধ চলে আসছে।

নিহতের স্ত্রী জিনিয়া আক্তার বলেন, তার স্বামীকে রাত আটটার পর সোহাগ ডেকে নিয়ে বাইরে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। পড়ে দেখি পুকুরে রক্তাক্ত অবস্থায় ভেসে আছে। দুটি ছোট সন্তান নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো।

প্রদীপের ১২ বছরের মেয়ে তাহসিনা প্রমি জানায়, বাবা ঞর থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পর ঝগড়ার শব্দ শুনেন। কিন্তু তারা কখনও ভাবতেও পারেননি তার বাবাকে এমনভাবে হত্যা করা হবে। প্রমি জানায়, রাতে যখন সবাই বাবাকে খুঁজছিলো তখন পুকুরে কিছু ভেসে আছে দেখে লাইট মেরে দেখেন মানুষ। তাৎক্ষণিক পুকুরে নেমে তাকে টেনে আনলে দেখেন তার বাবার লাশ। পেট ফুলে ছিলো। চোখ কালো হয়ে গিয়েছিলো। যখন তার মরদেহ তোলা হয় পেটে যে ছুরি মারা হয়েছিলো সেখান থেকে কিছু একটা বের হয়ে যায়। সে তার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানায়।

নিহতের ভাই সাইদুল ইসলাম পরাগ জানান, তার ভাই সোহাগের সাথে কয়েকদিন ধরে বিরোধ চলছিলো। কিন্তু এজন্য যে তাকে হত্যা করা হবে এটা তারা কল্পনাও করেন নি। এরপিছনে বড় একটি চক্র থাকতে পারে যারা সোহাগকে সহযোগীতা করেছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানান। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে সোহাগকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে কি পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে নাকি অন্য কিছু হয়েছে বিষয়টি তারা ভেবে পাচ্ছেন না। কেননা ঘটনার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তবে যদিও এ ঘটনায় সোহাগকে প্রধান আসামী করে সোমবার রাতে মামলা করেছে নিহতের স্ত্রী।

আর স্থানীয় ইউপি সদস্য তৈয়ব আলী হাওলাদার জানান, মধ্য যুগীয় কায়দায় প্রদীপকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোশারফ হোসেন মিন্টু বলেন, সাংবাদিক প্রদীপ হত্যায় জড়িত যেই থাকুক তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান প্রশাসনের কাছে। হত্যাকারীদের শাস্তি হলে কলাপাড়ার সংবাদকর্মীরা নিরাপদে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসীম বলেন, প্রদীপ হত্যার ঘটনায় তার ভাই সোহাগকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাত ৫ জনের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে মামলা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সোহাগকে গ্রেফতার করতে পারলে মূল হত্যা রহস্য বের হয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামের মৃত খালেক পাহোলানের ছেলে। তার প্রমি আক্তার(১২) ও আলবি (৩) নামে দুটি সন্তান রয়েছে। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে ভাইদের সবার ছোট ছিলো প্রদীপ।

সোমবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার সহকর্মীসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় শতশত গ্রামবাসী ভীড় করে তার বাড়িতে এসময় এক শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিকালে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্তানে প্রদীপকে দাফন করা হয়।

(এমকে/এসপি/জুন ০৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test