E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাংবাদিক ফজলে এলাহীর মুক্তির দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

২০২২ জুন ০৮ ১৪:২৩:৩৮
সাংবাদিক ফজলে এলাহীর মুক্তির দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন

রিপন মারমা, রাঙামাটি : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মঙ্গলবার(৭জুন) সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সহকর্মীদের অভিযোগ, ডিসি বাংলো পার্ক নিয়ে রাঙামাটির সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু ও তার মেয়ে নাজনীন আনোয়ার নিপূণকে ঘিরে সংবাদ প্রকাশের জেরে হয়রানিমূলক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফজলে এলাহী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, এনটিভি ও ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর জেলা প্রতিনিধি।

সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ক্ষোভ জানিয়েছে গণমাধ্যম কর্মীরাসহ বিভিন্ন মহল। অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলা, সাংবাদিক ফজলে এলাহী গ্রেফতার উল্লেখ্য ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর দৈনিক পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ‘‘পাইরেটস্’’ বিড়ম্বনা!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থিত পাইরেটস্ নামে এক রেস্টুরেন্ট নিয়ে জেলা প্রশাসনের বিড়ম্বনার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন ফজলে এলাহী।

ওই রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন রাঙামাটি জেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার নিপূণ। যদিও সেই রেস্টুরেন্টের লিজ নিয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি, সাবলিজ নিয়েছিলেন নিপূণ।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অফিস আদেশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাহিদা আক্তারের সই করা অফিস আদেশে ১৩টি শর্ত উল্লেখপূর্বক মোহাম্মদ হোসেনকে ডিসি বাংলো পার্ক ও পার্ক সংলগ্ন লেকের অংশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হয়।

১৩টির মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিলো—পার্কটি কোনোরূপ উপ-ভাড়া বা সাবলিজ দিতে পারবেন না। যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পার্কটি সাবলিজ দিয়েছেন তাহলে বিনা নোটিশে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে পারবেন। প্রদত্ত অনুমতির মেয়াদ হবে দুই বছর, তবে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে দুই মাস আগে নোটিশ প্রদান করে পার্কটির দখল গ্রহণ করতে পারবেন। আর ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অনুমতি প্রদান কার্যকর হবে।

সেই হিসেবেই ২০২০ সাল পর্যন্ত পার্কটি লিজ পান মোহাম্মদ হোসেন। তবে সেই নিয়ম না মেনে নিপূণকে সাবলিজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ এই মেয়াদ বাড়াতে রাজি হননি। এরপর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের নোটিশ দেয় ভাড়াগ্রহীতাকে। এছাড়া পার্কেই জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক অভিযোগে দেশি-বিদেশি মদসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ ও তার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন নিপূণ। আবার ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ কর্তৃক হয়রানির’ অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি। এসব ঘটনা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় জেলা প্রশাসনে। বিব্রতকর জেলা প্রশাসন ও ডিসি পার্ক নিয়ে অনিয়মের দিকসমূহ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ক্ষুব্ধ হন ফিরোজা বেগম চিনু। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিপূণ মামলা করেন। এই মামলায় চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে করা মামলার গ্রেফতারি ওয়ারেন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফজলে এলাহীকে গ্রেফতারের পর রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি কবির হোসেন জানান, ‘দুপুরে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট আসার পর ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, ‘মামলার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানি না। আদালত থেকে একটি ওয়ারেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফজলে এলাহীর স্ত্রী সেলিনা সুমি বলেন, ‘দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কলম কখনোই থামবে না। অন্যায় করে যারা ভাবে ক্ষমতা, পেশিশক্তি ও টাকার জোরে সবকিছুই সম্ভব, অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ফেলা যায়, তাদের বিরুদ্ধে ফজলে এলাহীর কলম চলবেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, এই জনপদের সব মানুষের অধিকার, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে একজন ফজলে এলাহী লড়াই করে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বারা মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এই কালো আইন বাতিল করতে হবে।’

পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক হেফাজত উল বারী সবুজ বলেন, ‘ডিসি বাংলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে হয়রানিমূলক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার। আমরা এ জঘন্যতম ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ফজলে এলাহীর মুক্তি চাই।

সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতারের পরপরই রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সমিতি, কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ,সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আলম, কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য রিপন মারমা, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ব্যাচ ৯৪, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নসহ খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের সাংবাদিকরা।

(আরএম/এএস/জুন ০৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test