E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চুল দাড়ি ধরে নির্যাতন

অপমান সইতে না পেরে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

২০২২ জুন ০৯ ১৬:৩৩:৩৪
অপমান সইতে না পেরে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার ইন্ধনে গ্রামে গ্রামে নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। মিছিল মিটিংয়ে না যাওয়ায় অকথ্য নির্যাতন, মারধর ও বয়োবৃদ্ধদের চুল দাড়ি ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নির্যাতনের হাত থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীরাও বাদ যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে বাদুরগাছা গ্রামের বিএনপি কর্মী সাজু হোসেন ও ইমনকে লাঠি দিয়ে পিটেয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ভাইরাল হয়। 

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিত আওয়ামীলীগের এক ওয়ার্ড সভাপতির বিষপানে মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন করে ওই আওয়ামী লীগ নেতার নৃশংসতার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এসব পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে কালীগঞ্জের বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ নিজ দলের ওয়ার্ড সভাপতি দাউদ শেখকে চুল দাড়ি ধরে মারধর করেন। মিছিলে না যাওয়ার কারণে বুধবার বেলাট দৌলতপুর গ্রামের আলিম মাদ্রাসা এলাকায় জনৈক আনসারের চায়ের দোকানে শত শত মানুষের সামনে দাউদ শেখকে মুখের দাঁড়ি টেনে ধরে কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে চেয়ারম্যান কালাম।

এ ঘটনায় মানসিক ভাবে চরম ক্ষুদ্ধ ও অপমান অপদস্ত হন বৃদ্ধ দাউদ শেখ। তিনি একটি সুইসাইডাল নোট লিখে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে এক বুক হতাশা নিয়ে বিষপান করেন। তাকে যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন। দাউদ শেখের সুইসাইডাল নোটটি তার নাতি ছেলে শাকিলের কাছে ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে কালাম চেয়ারম্যানের সহযোগী শাহীন মেম্বার ও প্রশান্ত কুমার ছিনিয়ে নিয়ে সুইসাইডাল নোটটি নষ্ট করে ফেলে বলে অভিযোগ।

এর আগে নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনি লস্কার এক শালিশের মধ্যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমানকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। তিনিও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিল বলে জানা গেছে। একই ইউনিয়নের মহিষাহাটী গ্রামের বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালানো হলে গ্রামবাসি প্রতিরোধ করে। বাদুরগাছা গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে সাজু হোসেন বিএনপির একজন সমর্থক। সম্প্রতি তাকে আওয়ামীলীগের মিছিলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন। মিছিলে না যাওয়ায় সাজু হোসেন ও একই গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে নাইমকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। রক্তাক্ত সেই ছবি ভাইরাল হলে ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাদুরগাছা গ্রামে যাদের মারধর করা হয়েছে তাদের সঙ্গে স্থানীয় মেম্বারের ঝামেলা ছিল। সে কারণে হয়তো মেরেছে।

তিনি বলেন, বিষপানে আত্মহননকারী আওয়ামী লীগ নেতা দাউদ শেখের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। কিছুদিন আগেও আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। চেয়ারম্যানের দাবী দাউদ শেখ নিয়মিত স্প্রিট পান করতেন। তার মাথায় সমস্যা ছিল। দেনায় জড়িয়ে পারিবারিক ভাবে তিনি ঝামেলাই ছিলেন। এসব কারণে তিনি বিষপান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই প্রতিপক্ষরা এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর এই অপপ্রচারকারীদের বেশির ভাগ এমপি বিরোধী নিজ দলের কিছু নেতা ও বিএনপি সমর্থক বলে তিনি দাবী করেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, আমি শুনেছি দাউদ শেখ নামে এক ব্যাক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। যশোর হাসপাতালে তার ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তার মারধরের বিষয়টি পুলিশকে কেউ জানায়নি।

(একে/এসপি/জুন ০৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test