E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আগামী কোরবানীতে পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না’ 

২০২২ জুন ১৫ ১৮:৫০:১২
‘আগামী কোরবানীতে পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না’ 

আশজাদ রসুল সিরাজী, গাজীপুর : মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের উৎপাদন এতো হয়েছে যে আগামী কোরবানীতে ভারত-মায়ানমার বা অন্যকোন দেশ থেকে পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না। দেশের পশুই আমাদের কোরবানীর জন্য যথেষ্ট। এদিক থেকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত কোরবানীতেও যে পরিমাণ পশু বিক্রির জন্য বাজারে নেয়া হয়েছে। সেখানে বরং উদ্বৃত্ত হয়েছে। ফলে এ গর্বের জায়াগাটিকে আমরা কোনভাবেই নষ্ট হতে দেবনা। কালোবাজারী করেও যাতে দেশে পশু না আসতে পারে তারজন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারি কোরবানীর পশু নিয়ে সংশয়ের কোন কারণ নেই। দেশের পশুই কোরবানীর জন্য এখন যথেষ্ট। 

গাজীপুরের শ্রীপুরে রাজাবাড়ি এলাকায় বুধবার সকালে এসিআই’র বিশেষায়িত জেনেটিক্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এরআগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে মন্ত্রী বলেন, এ সরকার বেসরকারি খাত বান্ধব সরকার। এসরকারই সর্বপ্রথম বেসরকারী শিল্পের জন্য একজন মন্ত্রী পদমর্যার উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। যারা দেশে ও দেশের বাইরে থেকে এসে বিজনেজ ইনভেস্ট করতে চান। তাদের জন্য পরিবেশ বান্ধব সরকার হলো শেখ হাসিনা সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের সমতার দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ কৃষি যদি না থাকে, কৃষির বিস্তার না হয় তা হলে আমাদের দেশ থমকে যাবে। আমাদের খাবারের প্রধান যোগান চাল,গম ভুট্টার বাইরেও মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এগুলো। এগুলো একদিকে আমাদের খাবারের চাহিদা মেটায় অপরদিকে পুষ্টির চাহিদা মেটায়। একসময় এসব দেশে আকাল থাকলে এখন এ সরকারের পৃষ্ঠ পোশকতায় আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় আজ বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমরা অদূর ভবিষ্যতে দুধেও স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন করবো। এটা সম্ভব হয়েছে এজন্য প্রধানমন্ত্রী তার দরদী মন নিয়ে সহায়তার মন নিয়ে কাজ করেছেন।

মন্ত্রী বলেন, গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগী, হাস পালন করলে কাউকে চাকুরির জন্য আর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। দেশের বেকারদের স্বাবলম্বী হতে সরকার কাজ করছেন। খামারীদের ব্যাপারে আমরা উন্মুক্ত, তাদের যে সহযোগিতা লাগে তা আমরা করছি। করোনার সময়ে খামারিদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করতে পারছিলেন না। আমরাই ভ্রাম্যমান বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা চাচ্ছি প্রাণি খাদ্য, মাছের খাদ্য এ দেশেই উৎপাদিত হউক। এজন্য তিনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, একটা মহল আছে যারা এদেশের ভালো দেখলে ভালো লাগে না। তারা প্রথম বলছে পদ্মা সেতু হবেনা। তারপর পদ্মাসেতু হয়ে গেলে তারা বলে এটা জোড়াতালি দিয়ে করা হয়েছে, এটাতে রিস্ক আছে। ভালো দেখলে ভালো লাগে না এমন একটা শ্রেণি এ সমাজে আছে, এরা থাকবে। তার ভেতরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নিন্দুকেরা নিন্দা করে যাবে। আমাদের তার ভেতর থেকেই কাজ করে যেতে হবে। অন্ধকারের বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে তিনি বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, আমাদের টাকায় গৃহহীন মানুষদের জায়গা ঘর করে দলিল করে দেব। পৃথিবীর কোন দেশে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যেটা শেখ হাসিনা পেরেছে। আজকে কিন্তু লঙ্গররখানা খুলতে হয়না। এখন মানুষের জীবন মান বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে হবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আগুন সন্ত্রাসী, পেট্রোল সন্ত্রাসী দেশ ধ্বংস করার রাজনীতি যারা করে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। এ দেশটি ৩০লক্ষ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু ১৪বছর কারাগারে থেকে এ দেশটি এনে দিয়েছেন। ১৯বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান, দেশ সমৃদ্ধ হবে, শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ান সকলের মুখে হাসি ফুটবে, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ ফিরে পাবো আমরা।

মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ কর্মযজ্ঞের সাফল্যজনক সমাপ্তির পর উদ্বোধন করতে যাচ্ছি পদ্মা সেতু। পৃথিবীর ইতিহাসে পদ্মার মতো খরস্রোতা নদীতে আজ পর্যন্ত কোন দেশ এতো বড়মাপের সেতু নির্মাণ করতে পারেনি। যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস, সততা এবং দৃঢ়তার কারণে তা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ এখন উৎফুল্লিত, উৎসাসিত। আর মাত্র ক’দিন পরে পদ্মা সেতু উদ্বাধন হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দেশের মূল অংশের ২১টি জেলার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত হবে। ওই অঞ্চলে নতুন করে নতুন শিল্প স্থাপিত হবে। আমরা চাই বাংলাদেশে উন্নয়নের সমতা। বাংলাদেশের একটি অঞ্চলও যাতে অননুন্নত না থাকে। ইতোপূর্বে যারাই ক্ষমতায় এসেছে এ অঞ্চলের উন্নয়নের দিকে নজর দেয়নি।

দুধ ও মাংসের উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধির লক্ষ্য সামনে রেখে গাজীপুরের রাজাবাড়িতে বিস্তৃত পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছে এসিআই লিমিটেডের বিশেষায়িত জেনেটিক্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার । এসিআই’র বিশেষায়িত জেনেটিক্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিমেন সংগ্রহ ও প্রসেসিং করা হচ্ছে যা " এসিআই সিমেন " নামে দেশব্যাপী পৌঁছে যাচ্ছে খামারির কাছে ।

পরে মন্ত্রী ওই সেন্টারের জেনেটিক্স ল্যাব , ব্রিডিং স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং অংশগ্রহনকারী ডেইরি খামারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এসময় মন্ত্রী এসিআই কোম্পনীকে কম মূল্যে ও সহজে খামারী/কৃষকরা যাতে বীজ পান সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশের কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা ইয়াসমিন, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু, গাজীপুর জেলা ডেইরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম শাহিন। এসিআই'র এগ্রো বিজনেস’র প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী।

অনুষ্ঠানে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ ফরিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুন্নাহার মেজবাহ্, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা উকিল উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রুকুনুজ্জামান পলাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(এস/এসপি/জুন ১৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test