E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

থানায় হত্যা মামলা দায়ের

ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতালে নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু, এমডি সুমন গ্রেফতার

২০২২ জুলাই ১৩ ১৭:৩৬:৩২
ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতালে নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু, এমডি সুমন গ্রেফতার

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড অর্থোপেডিক সেন্টারে রিমা প্রামাণিক (১৮) নামে এক নার্সের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হানিফুর রহমান সুমন ও নার্স ইনচার্জ লিজা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ মামলার প্রধান আসামি হানিফুর রহমান সুমনকে গ্রেফতার করে দুপুরের দিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। 

মারা যাওয়া নার্স রিমা প্রামাণিক (১৮) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু প্রামাণিকের মেয়ে। সে হাসপাতালটিতে দুই বছর ধরে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিল। ফলে সে ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকায় অবস্থিত ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড অর্থোপেডিক সেন্টারের পঞ্চম তলায় স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন।

জানা যায়, ১১ জুলাই সোমবার সকালে ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড অর্থোপেডিক সেন্টারের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রিমা প্রামাণিক নামের এক নার্সের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিন রাতে রিমা প্রামাণিক হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। মরদেহ উদ্ধারের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রিমা স্টাফ কোয়ার্টারের ফ্যানের পাখার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। পরে রিমার মরদেহ নামিয়ে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করে হাসপাতালের লোকজন।
এদিকে খবর পেয়ে রিমা প্রামাণিকের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে দাবী করেন, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা জানায়, রিমা হাসপাতালের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুলিশে চাকুরী করতে চেয়েছিল। এ চাওয়ায় তার কাল হলো। তারা আমাদের মেয়েকে হত্যা করেছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ৮ জুলাই শুক্রবার কর্মস্থলে ফেরেন রিমা। ফিরেই এমডির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু এমডি হানিফুর রহমান সুমন সেটি গ্রহণ করেননি। ফলে শুক্রবার রাতে বাধ্য হয়ে রিমা হাসপাতালের কর্তব্য পালন করেন। রাত তিনটার দিকে নার্স ইনচার্জ লিজা বেগমের মাধ্যমে মুঠোফোনে এমডির সঙ্গে কথা বলেন রিমা। তখন জানান, সকালে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে চান।

এদিকে রিমার মা বিত্রিতা পাল মেয়েকে হারিয়ে বাকরোদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। মেয়েকে হারিয়েছি। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন আমাকে কাঁদতেও দেয়নি। তারা আমার কান্না থামিয়ে দিয়েছে। তারা আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হানিফুর রহমান সুমনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। তার মা আয়েশা বেগম ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া হিসেবে চাকুরী করার সুবাদে তিনি ভৈরবে বসবাস শুরু করেন। এছাড়াও হানিফুর রহমান সুমন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্ডিওগ্রাফার হিসিবে চাকুরী করে আসছে। কিন্তু গেল দু’বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির কারণে তাকে শোকজ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে হাসপাতালের তালিকায় এখনও কার্ডিওগ্রাফার হিসেবে তার নাম থাকলেও বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে হানিফুর রহমান সুমন একজন চতুর হওয়ার সুবাদে ন্যাশনাল হাসপাতালের কয়েকজন মালিকের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। সেখান থেকে গোপনীয় এক ঘটনার কারণে মালিকানা ছেড়ে দিয়ে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতাল গড়ে তুলেন।

পুলিশি হেফাজতে থাকা কালীন এমডি হানিফুর রহমান সুমন বলেন, রিমা পুলিশে চাকরি করতে চেয়েছিলেন। হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য পদত্যাগপত্রও জমা দেন। কিন্তু আমি সেটি গ্রহণ করিনি। আমি এই পর্যন্তই জানি।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আত্মহত্যার আগে হাসপাতালের এমডির সঙ্গে রিমার কথা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, দুর্ঘটনার স্পষ্ট ধারণা পেতে এমডির সঙ্গে কথা বলা দরকার। এ কারণেই প্রথমে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে রিমার বাবা সেন্টু প্রামাণিকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এমডি হানিফুর রহমান সুমনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

(এস/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test