E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শোক দিবসসহ জাতীয় দিবস কি জানে না ভৈরবের ব্র্যাক-আশাসহ বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলি! 

২০২২ আগস্ট ১৫ ১৭:০৭:৩৬
শোক দিবসসহ জাতীয় দিবস কি জানে না ভৈরবের ব্র্যাক-আশাসহ বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলি! 

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে জাতীয় শোক দিবসে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে প্রয়োজনবোধ মনে করেননি দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, আশা, পপি, আরডিআরএস, সুক ও টিএমএসএসসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এমন কি জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসেননি সরকারের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যুমনার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

শুধু তাই নয়, সরকারি চাকুরী করেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়োজনবোধ মনে করেননি খোদ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাগর হোসেন সৈকত। এছাড়াও সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভৈরব ইনকাম ট্যাক্স ও ভ্যাট অফিস থেকেও কেউ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী জাতীয় শোক দিবসে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কালোব্যজ ধারণ, মিলাদ মাহফিল, অফিসের সামনে জাতীয় পতাকা অর্ধ নিমিত করে উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ব্যনার টানানোসহ জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুলে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কথা থাকলেও অবহেলা ও গাফলতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালনের প্রয়োজনবোধ মনে করেননি তারা। আর অবহেলা ও গাফলতির মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচিকে এড়িয়ে গেছেন যারা, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ।

সরেজিমনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের কমলপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আশা অফিস থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শোক দিবসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো তো দূরের কথা, অফিসের সামনে শোক দিবসের কোন চিহ্ন নেই। হাজী আসমত কলেজ সংলগ্ন ব্র্যাক অফিসে গিয়ে ছোট একটি ব্যানার ও জাতীয় পতাকা অর্ধ নিমিত করে রাখলেও কেউ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। এছাড়াও টিএমএসএস অফিসেও শোক দিবস পালনের কোন চিহ্ন নেই। তাছাড়া আলাল কমিশনারের বাড়িতে অবস্থিত আরডিআরএস ও সুক অফিস থেকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি কেউ। আর সরকারের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যুমনা থেকেও কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি তাদেরকে। অথচ, সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারাীরা। তাদের এমন কা-ে অবাক উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে উপজেলা প্রসাশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংকৃতিক সংগঠনসহ সমাজের নানা শ্রেণি পেশার লোকজনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু বেসকারি সংস্থা ব্র্যাক, আশা, পপি, আরডিআরএস, সুক ও টিএমএসএসসহ সরকারের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেনি কেউ।

শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন না করার বিষয়ে অবহেলা নাকি গাফলতি রয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে- ভৈরব ব্র্যাক অফিসের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান বলেন, আসলে ভুল হয়ে গেছে। আর টিএমএসএস অফিসের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের আশুগঞ্জ এরিয়া অফিসের শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তাই, ভৈরব অফিসের দিবসটি পালনের প্রয়োজনবোধ মনে করেন না তারা। তাছাড়া আশা অফিসের ম্যানেজার সোহেল রানা বলেন, অফিসের সামনে পতাকা উত্তোলণ করতে পিয়নকে দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন।

এছাড়া আরডিআরএস ম্যানেজার শাহারুল জানান, মাসিক কিস্তি আদায়ে মাঠে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যস্ততার কারণে ফুল নিয়ে যেতে পারেনি। এদিকে সরকারের জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে যদিও কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায়নি। তবে, ডিপো অফিসে মিলাদ মাহফিল এবং ব্যানার টানানো হয়েছে বলে দাবী করেন ডিপো ইনচার্জরা। আজকের এইদিনে কোথায় রয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে- মুঠোফোনে ৩ ইনচার্জই (ওয়াহিদুল হাসান, মতিউর রহমান ও নাজিম উদ্দিন) ঢাকায় রয়েছেন বলে জানান।

এছাড়াও পিঠে ব্যথার কারণে সময় মতো উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি বলে জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাগর হোসেন সৈকত। তবে, তিনি উপজেলায় ছিলেন বলেই দাবী করেন।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করে অবহেলা ও গাফলতি যারা করেছেন, তারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে অস্বীকার করেন বলে মনে করেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ। তার মতে, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও যারা রাষ্ট্রীয় নির্দেশ অমান্য করে, রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোর কর্মসূচি পালন না করে অবহেলা এবং গাফলতি করেন। তাদের দ্বারা সমাজ কিংবা দেশের কোন উন্নতি হবে না বলে মনে করেন সমাজের বিশিষ্ট জনসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

(এস/এসপি/আগস্ট ১৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test