E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি ও টার্মিনালে পালাবদল

২০১৪ অক্টোবর ০৮ ২১:০০:৪৩
পুলিশের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি ও টার্মিনালে পালাবদল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে পুলিশ ও বহিরাগতদের সহায়তায় এবার যুবলীগ নেতাদের হটিয়ে  সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি ও  টার্মিনাল  পুনর্দখল  করে নিয়েছেন শ্রমিক লীগ সমর্থিতরা। এসময় ১১টি বাস ও বেশ কয়েকটি দোকান  ও মালিক সমিতির অফিসের নীচের দু’টি কক্ষের কাচের জানালা ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে তারা মালিক সমিতির সভাপতি সম্পাদক সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের চেয়ার দখল করে নেন। এ নিয়ে বাস টার্মিনাল ছাড়াও সাতক্ষীরার শ্রমিক এলাকায় তীব্র উত্তেজনা রয়েছে।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে খানিকটা নির্জন অবস্থায় এই দখল ঘটনায় এক মাস ২০ দিনের নতুন নেতৃত্বকে অপসারন করে জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সাইফুল করিম সাবু নিজেকে বাস মালিক সমিতির সভাপতি দাবি করে বলেন, জেলা যুবলীগ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু আওয়ামী লীগের কারসাজিতে বেশ কিছু সংখ্যক বিএনপি জামায়াত সমর্থকদের নিয়ে গত ১৯ আগস্ট বাস মালিক সমিতি ও বাস টার্মিনাল দখল করে নেন। এসময় পুরো পুলিশ ও জেলা প্রশাসন তাদেরকে সহায়তা দিয়ে টার্মিনাল দখল করিয়ে দেন। প্রতিবাদ করা হলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে জানায়, খুব সত্ত্বরই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।

সাইফুল করিম সাবু আরও জানান, কোন নির্বাচন তো নয়ই বরং আসাদুজ্জামান বাবু ও শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন বাস মালিক সমিতির সভাপতি সম্পাদক দাবি করে ২০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। এর পর থেকে শ্রমিক নেতা রবি ও মশিয়ারকে ব্যবহার করে তারা ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, এর প্রতিবাদ জানিয়ে কোন লাভ না হওয়ায় এবং নির্বাচন না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত সাধারন শ্রমিক ও মালিকরা সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালের দখল পুনরুদ্ধার করেছে। বাস টার্মিনাল দখলের কথা স্বীকার করে সাইফুল করিম সাবু বলেন, তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের হয়। এই মামলার রায়ও তাদের পক্ষে রয়েছে।

উল্লেখ্য দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে আকস্মিকভাবে মালিক সমিতি ও বাস টার্মিনাল দখল করে নেন জেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু ও তার সমর্থকরা। এসময় তারা হঠিয়ে দেন জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সাইফুল করিম সাবু ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল হক নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। এ নিয়ে গোলযোগের আশংকায় জেলা প্রশাসন গত ২৬মে বাস টার্মিনালে ১৪৪ ধারা জারি করে। টার্মিনাল ও মালিক সমিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়োগ করা হয় একজন প্রশাসককে। এ সময় থেকে পুলিশের খবরদারিতে চলতে থাকে বাসটার্মিনাল ও মালিক সমিতি । দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সাধারন নির্বাচন দেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার না করেই এবং সাধারন ভোটারদের প্রত্যক্ষ সম্মতি ছাড়াই পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবুকে সভাপতি ও বিএনপি নেতা শেখ জাহাঙ্গীরকে সাধারন সম্পাদক করে মালিক সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। এতে দুইজন সংসদ সদস্য মীর মোশতাক আহমেদ রবি ও অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলাম সহ কয়েকজনকে এই কমিটির উপদেষ্টা বানানো হয়। এর কয়েক মাস ২০ দিন পর বুধবার বাবু-জাহাঙ্গীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে হটিয়ে দিয়ে সাবু-হান্নান সমর্থিত কমিটি দখল করে নিল বাস মালিক সমিতি।

সরেজমিনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে গেলে দেখা যায় ট্রাক ও পিকআপে করে আসা কয়েক’শ শ্রমিক টার্মিনালে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা লাঠি হাতে মালিক সমিতির অফিসেরর দোতলায় যাওয়ার সময় সিঁড়ির পাশের দু’টি কক্ষের কাঁচের জানালা ভাঙচুর করে। এ সময় আসাদুজ্জামান বাবুর পক্ষের শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম ও মশিউর রহমানসহ অনেকেই ভোঁ দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিপক্ষরা নতুন করে হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় শ্রমিকদের সতর্ক পাহারা ছিল। শান্তিপূর্ন পরিস্থিতি বজায় রাখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তা সাইফুল করিম সাবুর সঙ্গে কথা বলেন।

বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মহজোট ক্ষমতায় এলে সে বছরের ১৫ জানুয়ারি মালিকদের সাধারন নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন গৌর দত্ত ও বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ। তাদের দায়িত্ব পালনের মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে সে বছরের ৮মে নির্বাচিত কমিটিকে হটিয়ে রাজনৈতিক পেশীশক্তিবলে মালিক সমিতি ও টার্মিনাল দখল করে নেন জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সাইফুল করিম সাবু। তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক ও সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমনের দ্বন্দ্বের জেরে দরকষাকষির পর ২০১২ সালে এই কমিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পান জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোঃ আসাদুল হক।

এদিকে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল বারবার দখল বেদখল হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে পরিবহন শ্রমিক আবুল কালাম ও কামরুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র চাঁদাবাজির জন্য এসব পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তনে অনুঘটকের কাজ করছে সাতক্ষীরা পুলিশ। তারা বলেন, পুলিশকে খুশী করে বাস টার্মিনাল ও মালিক সমিতি দখল ও বেদখলের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন তারা।

দখলচ্যুত সেক্রেটারি বিএনপি নেতা শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার ২৪৩ জন মালিকের মধ্যে তাদের পক্ষেই বেশীরভাগ সমর্থন রয়েছে। অপরদিকে দখলদার শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল করিম সাবু বলেন, তিনি সব মালিকের সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে সাতক্ষীরা মালিক সমিতি ও টার্মিনাল পুনরুদ্ধার করেছেন।

এদিকে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান পুলিশের সহায়তায় টার্মিনাল দখল ও বেদখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার সুবিধার্থে পুলিশ সব ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

(আরকে/পি/অক্টোবর ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test