E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বীর নিবাস’ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

ছাদ ভেঙে পড়ার আতঙ্কে সুবিধাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার!

২০২২ আগস্ট ২৪ ১৯:১৮:৫২
ছাদ ভেঙে পড়ার আতঙ্কে সুবিধাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার!

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ছাদ ভেঙ্গে পড়ার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সুবিধা ভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার। এতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও উপজেলা কমান্ডের সাবেক নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার থেকে দরিদ্র ও অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যার নামকরণ করা হয় বীর নিবাস। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডারগণ উপজেলাভিত্তিক অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে সুপারিশসহ জামুকায় প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এলজিইডি দরপত্রের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ঠিকাদার ৩৫টি বীর নিবাস নির্মাণ করে এবং ২০১৪ সালে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০টি, রাজৈরে ৫টি, কালকিনিতে ১২টি এবং শিবচর উপজেলায় ৮টি।

অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ বীর নিবাস নির্মাণ ত্রুটি অনিয়মের কারণে ৫/৭ বছরের মধ্যেই ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো বাড়ির পলেস্তরা খসে পড়ছে, বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে, আবার বেশ কয়েকটি বাড়ির দেয়াল ও ছাদ চূঁয়ে পানি পড়ছে। অনেক বাড়ির ফ্লোর ভেঙ্গে খোয়া বের হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম হওয়ায় ভূক্তভোগী পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডারগণ দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী ‘বীর নিবাস’ গুলো মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে নির্মাণ করা হলে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৫/৭ বছরের মধ্যে এ পরিস্থিতি হতো না। এ ব্যাপারে তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

দ্বিতীয় ধাপে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৬১টি, শিবচরে ৮৩টি, রাজৈরে ৬৭টি এবং কালকিনি উপজেলায় ৭২টি বীর নিবাস অনুমোদন পায়। এরমধ্যে কিছু ঘর নির্মাণ কাজ চলমান এবং বাকীগুলো টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়ধীন। বিগত ২০১৪ সালে প্রথম ধাপে যেসব বীর নিবাস পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই সকল বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুর রব চৌধুরীর স্ত্রী শাহানা বেগমব লেন, “আগে ছোট্ট একটি দোকান ঘরে ছিলাম। বিল্ডিংটার কথা শোনার পরে খুব খুশি হইচি। হ্যার পড়ে তারা ইট-পাট আনলো, কাজ ধরলো। এরা কি কাজ করলো, ছোট ছোট বাচ্চাগো দিয়া কাজ করাইচে। কি করবো আমি তো এসব বুঝিনা। আমার বড় ছেলে ছিলো ঢাকায়, হেরা কাজ কইরা গেছে, কাগজে লেখা আছিলো মুক্তিযোদ্ধা এইডা এইডা পাইবে, পাকের ঘর, বাথরুম, কল। বাথরুম দিয়া থ্ইুছেচুংগার মতো একটু কইরা, পাক ঘরের তো চিহ্নই নাই।কলডারে থুইচে নষ্ট কইরা, ঘর পাওয়ার দুই বছর পরেই ওয়াল ফাটল ধরছে, এখন ছাদ দিয়া পানি পড়ে। রাইতে ঘরে ঘুমাইতেও ভয় করে। ঘরের ভিতরে, বাহিরে, ফ্লোরে ঝইরা ঝইরা পড়তাছে। আমার দাবী সরকারের তরফ থেকে বিল্ডিংডা যেনো মেরামত কইরা দেয়।”

সদর উপজেলার ঝিকরহাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবুল কাশেম বলেন, “১৯৭১ সালেমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রণ করছি...। দু:খের বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ঘরটা দিয়েছেন, এই ঘর যে ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে, ঠিকাদারের নাম আমার স্মরণ নাই। উনি যেভাবে কাজ করেছেন তাতে আজকে দেখা যাচ্ছে, আমার এই ঘরে থাকাটাই ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে, ভয় লাগছে যে কোনা সময় এই ঘর ভেঙ্গে যেতে পারে। ঘরের চতুর্দিকে ফাটল ধরছে, যে ফাটল দেখলে রাতে ঘুমহয় না। না জানি এই ঘর কখন ভেঙ্গে পড়ে যায়। এমনকি একটা কল দিছে, কলের পানি আমরা ব্যাবহার করতে পারছিনা। আমাদের কি অবস্থা তা দেখার জন্য কেউ আসে নাই, খোঁজও নেয় নাই।”

এলজিইডি মাদারীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আশরাফ আলী খান বলেন, “বিষয়টা আমার নজরে আসছে। আমি সরেজমিনে যাবো এবং শিঘ্রই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মাদারীপুর জেলা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘প্লান বা ডিজাইন অনুযায়ী এই বিল্ডিং করে নাই। তারা সরকারকে ফাঁকি দিয়েছে। বীর নিবাস করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছে, কি করে ৫/৭ বছরের মধ্যে বিল্ডিংগুলো ভেঙ্গে যায়, অকেজো হয়ে যায়? আমি এসবের বিচার চাই।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, আমি তদন্ত করে দেখছি।’

(ওকে/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test