E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জগদীশ গোস্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা,মামলা না নেওয়ায় সংবাদ সম্মেলন

২০১৪ অক্টোবর ১২ ১৩:৪৮:২১
জগদীশ গোস্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা,মামলা না নেওয়ায় সংবাদ সম্মেলন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাড়ি থেকে ডেকে  সীমান্তে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের ১০ দিনেও মামলা রেকর্ড না হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা  প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার  লাবসা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত জগদীশ গোস্বামীর স্ত্রী মঞ্জু গোস্বামী

দিনমজুর গৃহবধু মঞ্জু গোস্বামী তার লিখিত বক্তবব্যে বলেন, প্রতিবেশী চারুপদ গাইনের ছেলে শুকপদ গাইনের সঙ্গে আমার স্বামীর দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে শুকপদ গাইন, তার ভাই দূঃখীরাম গাইনসহ কয়েকজন আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে তাকে একটি হোটেলে আটক রেখে দেয়। ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ৭টার দিকে স্বামী জগদীশ আমাকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি আসার কথা মোবাইলে জানায়।
২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভাই জগদীশ মৃতপ্রায় অবস্থায় কুশখালি সীমান্তের একটি মাঠে পড়ে আছে মর্মে ০১৭৬৪-৬৯১৩৩৩ ও ০১৭২২-৩৫৯৮২০ নম্বর মোবাইল থেকে ননদ লিলি চক্রবর্তীর মোবাইলে জানানো হয়। তিনি বিষয়টি পরিবারের সকলকে অবহিত করে শুকপদ গাইনের সঙ্গে তারা দেখা করতে যান। এ সময় শুকপদ গাইন শুয়ে থাকাকালিন একটি কল আসায় মোবাইলটি ভাইয়ের চিনতে পেরে লিলি নিয়ে নেয়। এ সময় ভাই জগদীশের পরিহিত লুঙ্গি ও জামা নিতে গেলে লিলিকে গালিগালাজ করা হয়। মোবাইলটি নিয়ে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ শুকপদ এ নিয়ে সাংবাদিক ও থানা পুলিশ করলে আমাকে ও আমার ছেলেদের খুন করার হুমকি দেয়। ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বাড়ির লোকজনদের নিয়ে ছয়ঘরিয়া সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় জগদীশকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে মর্মে তারা জানতে পেরে ফিরে আসেন। দুপুর দু’টোর দিকে একটি এম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে জগদীশ মারা গেছে বলে তারা জানতে পারেন।
পুলিশ আসার পর তার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করার সময় জগদীশের দু’ হাত, পা, বুক,পিট, হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভাঙা ও রক্তাক্ত জখম দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে গত ২ অক্টোবর বিকেলে গোপীনাথপুর মোড়ে এক শালিসি সভায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ও ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শুকদেব ও তার কয়েকজন সহযোগি জগদীশকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সীমান্তে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় থানায় শুকদেবসহ পাঁচজনের নামে তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান বিষয়টি আসামীদের সঙ্গে টাকা নিয়ে মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন কথাবার্তার পর তিনি তদন্তের নামে উপপরিদর্শক আবুল কালামকে অভিযোগের কাগজটি দিয়ে দেন। এারপরও থানায় বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলেও গত ১০ দিনেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। উপরন্তু পুলিশের ভূমিকার কারণে আসামীরা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি- ধামকি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমার স্বামীর হত্যার ঘটনাটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে দোষীদের গ্রেফতারান্তে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহতের পিতা বিষ্ণুপদ গোস্বামী ও মা বীনা রাণী গোস্বামী ও বোন লিলি চক্রবর্তী।
এ ব্যাপারে শুকপদ গাইন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গরু আনতে যেয়ে জগদীশ বিএসএফ এর হাতে নিহত হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন ।অথচ তাকে হয়রানিমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান জানান, অবেধপথে গরু আনতে যাওয়ায় ধরা পড়ে বিএসএফ জগদীশকে হত্যা করেছে মর্মে কুশখালি বিজিবি ক্যাম্প থেকে জেনেছেন। অথচ স্থানীয় একটি চক্রের প্ররোচনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা শুকদেবসহ কয়েকজনকে জড়িয়ে অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া ঠিক হবে না। তবে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।


(আরকে/এসসি/অক্টোবর১২,২০১৪)



পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test