E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উছমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

২০২২ অক্টোবর ১২ ১৮:৫৩:৫৭
উছমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজাম ক্বারীর বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য মো. লিয়াকত আলী গিরানি গত ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অনুলিপি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।

অভিযোগে লিয়াকত আলী গিরানি উল্লেখ করেছেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ধার্যকৃত ট্যাক্সের টাকা থেকে ৪ থেকে ৫ গুণ টাকা আদায় করলেও আদায়কৃত টাকা ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করছেন চেয়ারম্যান নিজাম ক্বারী। শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে উছমানপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে কর ধার্য করেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪শ’ টাকা। এর মধ্যে ৪ নং ওয়ার্ডে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৬০ টাকা। ওই ওয়ার্ডে মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৩২৯টি। এদের মধ্যে ১৬৩টি হোল্ডিং থেকে রশিদের মাধ্যমে মোট ট্যাক্স আদায় করেছেন ৮৯ হাজার ৮১০ টাকা। বাকী ১৬৮টি হোল্ডিংয়ের হিসাব পাওয়া যায়নি। ৪ নং ওয়ার্ডের ট্যাক্স আদায় অনুযায়ী ৯টি ওয়ার্ড থেকে এ অর্থবছরে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা পাঁচ গুণেরও বেশী, অর্থাৎ ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স আদায় করেলেও এসব টাকা আদায়ের কোন প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদে রাখেননি। চেয়ারম্যান আদায়কৃত টাকা ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন বলে দাবী করেন লিয়াকত আলী গিরানি।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করেছেন, ওই ইউনিয়নে অসহায় বয়স্ক ভাতাভোগী ২৮৭ জন ও বিধবা ভাতাভোগী ১১৭ জন। মোট ৪০৪ জন ভাতাভোগীর কাছ থেকে ভাতা ট্যাক্সের নাম করে সর্বনিম্ন ৪শ’ এবং সর্বোচ্চ ৬শ’ টাকা করে আদায় করেছেন চেয়ারম্যান। অসহায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীরা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করার রশিদ প্রদর্শন করলেও চেয়ারম্যান বলেন, এটা ভাতার ট্যাক্স, পরিশোধ করতেই হবে। না করলে আপনি ভাতার টাকা পাবেন না। আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে না। চেয়ারম্যান কুলিয়ারচর পৌর এলাকার গাইলকাটা মহল্লায় তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাতাভোগীদের ডেকে নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেন এবং রশিদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে ভাতা ট্যাক্সের নামে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে আদায় করেন, যা ব্যাংক এশিয়া’ কুলিয়ারচর শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা আল আমিন অবগত আছেন বলে দাবী করেন তিনি। এ ব্যাপারে কিছু লোক প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ও তার পিএস নজরুল মোল্লা সাধারণ ভাতাভোগীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। বাড়ির ট্যাক্স দেওয়ার পর বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা ট্যাক্স নামে যাদের কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে নিয়েছেন এমন ১৫-২০টি রশিদ নম্বর আবেদনে উল্লেখ করেছেন লিয়াকত আলী গিরানি।

এ্যাসেসমেন্ট খাতায় উল্লেখ রয়েছে, প্রতি হোল্ডিংয়ের জন্য বাৎসরিক ট্যাক্সের পরিমাণ ৫০, ৭০, ১২০, ১৩০, ১৪০ ও ১৫০ টাকা। কিন্তু চেয়ারম্যান প্রতি হোল্ডিং থেকে রশিদের মাধ্যমে ১২০, ২০০, ৩০০, ৩৯০, ৪০০, ৫০০, ৬০০, ৭০০, ৮০০, ১০০০, ১৫০০ ও ২০০০ টাকা করে আদায় করে নিয়েছেন। যা কোন রেজিস্টারে উল্লেখ নেই। রশিদের অবশিষ্ট অংশও সংরক্ষণে রাখেননি। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব তহবিলেও টাকা জমা করেননি। ইউনিয়ন থেকে ১৬৩টি রশিদ সংগ্রহ করে দেখা যায়, চেয়ারম্যান ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৮৯ হাজার ৮১০ টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করেছেন। বাকি রশিদ সংগ্রহ করতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে, ৯টি ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা আদায় করে কিছু টাকা রাজস্ব তহবিলে জমা দিয়ে বাকি টাকা চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছেন।

লিয়াকত আলী গিরানি আবেদন লিপিতে আরো উল্লেখ করেন, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ওয়ারিশান সনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করতে গেলে ট্যক্সের নামে ৪-৫ গুণ বেশী টাকা আদায় করে নেওয়া হয়। ৩-৪ জন বহিরাগত লোক সব সময় ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান করেন। এদের মধ্যে নজরুল মোল্লা অন্যতম। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া বহিরাগত কেউ যাতে ইউনিয়ন পরিষদে সবসময় বসে থাকতে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মো. নিজাম ক্বারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদে সেবা গ্রহিতাদের জন্য খরচ করে আসছে বলে দাবী করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নিকট কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। এমনকি কোন অনুলিপিও প্রেরণ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এস/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test