E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিলে মেলে না দেশীয় মাছ!

চায়না দুয়ারি বিলুপ্ত করতে পারে দেশীয় মাছ 

২০২২ অক্টোবর ২৩ ১৭:৫৭:২৩
চায়না দুয়ারি বিলুপ্ত করতে পারে দেশীয় মাছ 

একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : পদ্মা কন্যা রাজবাড়ীর প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়।এ সব খাল-বিল, জলাশয় থেকে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ তথা গুড়া মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– জলাভূমির সাথে বিশেষ করে প্লাবনভূমির সাথে সংযোগখাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া।

এছাড়া মনুষের সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– খাল ও নদীতে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালসহ অসংখ্য মশারী জাল বসিয়ে মাছের পোনা ধ্বংস করা। জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজননসক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের অবাধে ব্যবহার।

জানা গেছে, মৎস্যজীবীদের কাছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী বা চায়না জাল অনেক জনপ্রিয়।কারণ ৫০ থেকে ১০০ হাত লম্বা এই জাল একবার জলে পেতে আর তুলতে হয় না। এটি নদী বা বিলের তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। সকাল-বিকাল গিয়ে শুধু মাছ বের করে আনা হয় ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছই চায়না জালে ধরা পড়ে।

ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট এই জাল খাল-বিল ছাপিয়ে এখন গড়াই-পদ্মা নদীতে পাতা হচ্ছে বছরজুড়ে। চায়না জালে বিভিন্ন জলজ প্রাণী একবার গেলে আর বের হতে পারে না। দীর্ঘ সময় আটকে থেকে জলের ভেতরে মারা যাচ্ছে জলজপ্রাণী। এসব নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরার কারণে, মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুটি,টেংরা, কই, শিং, মাগুর, শোল,টাকি,খয়রাসহ প্রকৃতির সব মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

জেলার ৫টি উপজেলাতেই রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল।এই সব খাল বিল ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই স্থানীয় মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরার ব্যস্ত সময় পার করে। সবাই মাছ ধরতে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করছে। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বিল জুড়ে জেলেরা চায়না দুয়ারী থেকে মাছ বের করছে।পুটি, টেংরি, শিং,খয়রা সহ ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছ পড়ছে দুয়ারেতে।

হানেফ আলী শেখ বলেন, বিলে আর মাছ নাই। ছোট ছোট কই মাছ যে হারে চায়না দুয়ারি দিয়ে মেরে নিছে তাতে আর মাছ নাই।বিলের সব যাইগাই শত শত চায়না দুয়ারি পাতা আছে।কি করবো গরিব মানুষ মাছ মারে খাই। তাই সারাদিন ভেসাল দিয়ে মাছ মারি। দিন রাত মিলে ২/৩ শত টাকার মাছ পাই।

উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃআব্দুল মুন্নাফ বলেন, ‘বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমানে বিদেশী প্রজাতির কিছু মাছ স্বল্পসময়ে বৃদ্ধি ও লাভজনক হওয়ায় অনেক মৎস্যচাষী সেদিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে এক্ষেত্রে জলাশয়গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্তকরণ, ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি আমরা। নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল এর ব্যাপারে আমরা নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছি। এই মধ্যে অনেক স্থানে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত আছে।

(একেএমজি/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test