E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপা-ঢাকা নৌরুটে যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

২০২২ নভেম্বর ০৭ ১৪:১৩:৫৪
গলাচিপা-ঢাকা নৌরুটে যান চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা : গলাচিপা-ঢাকা নৌরূটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে নৌ যাত্রীরা। পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ঢাকা-গলাচিপা নৌপথের দ্বোতলা লঞ্চসহ ১৮ ফুটের অধিক সব ধরণের যাত্রীবাহী নৌযান ও পণ্য পরিবহনের কার্গো এবং জাহাজ। গত বুধবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে প্রশাসনের নির্দেশে এ সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামি তিন মাস গলাচিপা-ঢাকা বিশেষ করে পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আগে গলাচিপা-ঢাকা রূটে প্রায় তিন মাস ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাসের পাশাপাশি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে গলাচিপার সব ধরণের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। যাত্রীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির পাশাপাশি এর সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব পড়েছে পণ্য পরিবহনে। গলাচিপায় পণ্য আনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জায়গায় ওঠানামা করাতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। যার খেসারত সাধারণ মানুষকেই দিতে হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন, ভুক্তভোগী যাত্রীসহ অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে গলাচিপার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এমভি বাগেরহাট-২ নামের যাত্রীবাহী দ্বোতলা লঞ্চ বুধবার (২ নভেম্বর) ভোরে পটুয়াখালী টার্মিনালে ভিড়লে স্থানীয় প্রশাসন যাত্রীদের সেখানেই নেমে যেতে বাধ্য করে। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ রোগাক্রান্ত যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পরে। বিশেষ করে পটুয়াখালী-গলাচিপা রূটের ভুড়িয়া, কলাগাছিয়া, আমখোলা, গজালিয়া ঘাটের যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পরতে হয়। কারণ এসব ঘাটে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। গলাচিপা-ঢাকা ভায়া আমখোলা, কলাগাছিয়া, পটুয়াখালী, কারখানা ও বগা রূটে এমভি পূবালী-৫, এমভি বাগেরহাট-২, এমভি আসা-যাওয়া-১ ও এমভি জামাল-৫ এই চারটি যাত্রীবাহী দ্বোতলা লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া একই রূটে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী কার্গো ও কোস্টার ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল করে। পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর ওপর এলজিইডির একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ব্রিজের মূল চ্যানেলের ওপর স্টিল স্প্যান বসানোর জন্য স্ট্রাকচার গার্ডার স্টেজিং সেকশন স্থাপন করতে গিয়ে তিন মাসের জন্য ১৮ ফুটের অধিক সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়।

আকস্মিক নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ঢাকা থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত নৌযান চলাচল অব্যাহত থাকলেও গলাচিপাসহ অন্যান্য স্টেশনে পণ্য লোড-আনলোডে কয়েকগুণ বেশি খরচ পরে। যার দায়ভার ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ক্রেতাদের ওপর বর্তাবে। এতে বাজারে পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে দু দিনের ব্যবধানে গলাচিপার কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন। যত সময় যাবে, এভাবে পণ্যের দাম বাড়তেই থাকবে। একইভাবে ঢাকাগামী যাত্রীদেরও দুর্ভোগের মুখে পরতে হয়েছে। বুধবার ২ নভেম্বর ও বৃহস্পতিবার ৩ নভেম্বর গলাচিপা লঞ্চ টার্মিনালে প্রচুর সংখ্যক ঢাকাগামী যাত্রীদের ফেরত যেতে দেখা গেছে। এমভি পূবালী লঞ্চের সুপারভাইজার মজিবর রহমান জানান, গলাচিপা থেকে প্রতিদিন ডেকের বিপুল সংখ্যক যাত্রী ছাড়াও ৩০-৪০টি কেবিন বুকিং হতো। ইতোমধ্যে সব কেবিন বুকিং বাতিল হয়েছে। এছাড়া গলাচিপা-ঢাকা রূটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী ছাড়াও বিপুল পরিমান পণ্য আনা নেয়া হয়। বিশেষত ওষুধ, কসমেটিকস ও গার্মেন্টস পণ্য ঢাকা থেকে বেশি আসে। এখন এসব পণ্য আনাও বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে আবার পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির আপত্তির মুখে গত প্রায় তিন মাস ধরে গলাচিপা-ঢাকা রূটে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এ রূটে বাস চলাচল কবে স্বাভাবিক হবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। বর্তমানে ঢাকাগামী যাত্রীদের ১৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে শাঁখারিয়া কিংবা ৩০ কিলোমিটার দূরের পটুয়াখালী শহরে গিয়ে বাস ধরতে হচ্ছে। এতে বিশেষত শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান এক চিঠিতে আরও আট মাস আগে বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিকল্প ব্যবস্থায় ব্রিজের স্প্যান নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ চিঠি কেউ আমলে নেন নি।

এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, গলাচিপা-ঢাকা রূটে দোতলা লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা কোন নির্দেশনা দেইনি। জানা গেছে, এ বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এক সভায় তিন মাসের জন্য নৌযান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন ও গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. শাহিন শাহ সহমত পোষণ করেন। বিষয়টি গত ১৪ মার্চ জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে পটুয়াখালী নদী বন্দরের সহকারী পরিচালকে অবহিত করেন।

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সংবাদকর্মীদের বলেন, আমরা সব ধরণের লঞ্চের চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্রিজের সেন্টারিং ভেঙ্গে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। উন্নয়নের জন্য সেক্রিফাইস করতে হবে। এছাড়া ছোট ছোট নৌযান চলাচল করবে। আগামী তিনমাস পর এ রুটে স্বাভাবিকভাবে নৌ চলাচল করতে পারবে।

(এসডি/এএস/নভেম্বর ০৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test