E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঋণের মামলা

ঈশ্বরদীতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ২৫ কৃষক ঘরছাড়া

২০২২ নভেম্বর ২৭ ১৫:১৪:৫৯
ঈশ্বরদীতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ২৫ কৃষক ঘরছাড়া

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : সমবায় ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ঈশ্বরদীর ১২ কৃষককে কারাগারে প্রেরণের পর বাকি ২৫ জন কৃষক বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের ৩৭ কৃষকের পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কগ্রস্থ দিন অতিবাহিত করছেন। কি করে আদালতের মাধ্যমে জামিন করাতে হয় অধিকাংশ পরিবারই তা জানেন না।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরছাড়া। বাড়িতে যারা আছেন তারাও কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন।

গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হতদ্ররিদ্র কৃষকরা ভাড়ইমারি উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সদস্য। সমিতির মাধ্যমেই ২০১৬ বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে গ্রুপ ভিত্তিক তারা ঋণ নেন। ঋণের টাকা অনেকেই পরিশোধ করা হয়েছে দাবি করলেও পরিশোধের কাগজপত্র তাদের কাছে নেই। কৃষকরা জানান, তারা সকলে পড়া-লেখা না জানা মানুষ। মাঠে কাজকর্ম করেই দিন যায়। বিষয়টি অনেকেই ভুলেই গিয়েছিলেন। কৃষকদের গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি সামনে আসে।

গ্রেপ্তার হওয়া কৃষক রজব আলীর স্ত্রী বুলিয়া খাতুন, আতিয়ারের স্ত্রী রেশমা, মহির উদ্দিনের স্ত্রী বুলিয়া বেগমসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, তারা যদি ঋণ খেলাপী হবে তাহলে তাদের কেন নোটিশ দেয়া হয়নি। এ মামলায় আদালতের কোন সমন পাওয়া যায়নি। উল্টো ওয়ারেন্ট বের করে রাতের আধারে এসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কৃষক পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, আইন আদালত তারা বুঝেন না। পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের ছাড়ানোর জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যেরে কাছে গিয়েছিলেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।

সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি ও ছলিমপুর ইউপি’র সংরক্ষিত নারী সদস্য বিলকিস নাহারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোট ১৬ লাখ টাকা ঋণের বরাদ্দ ছিল। এ ঋণ ৩৭ জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তবে কেউ কম, আবার কেউ বেশি করে নেয়। সাতজন বাদে ঋণের টাকা অনেকেই পরিশোধ করেছেন। আবার কারও কারও ২ থেকে ৫ হাজার বাকি আছে। তবে সাতজন কৃষক টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে গ্রুপ ভিত্তিক ঋণের কারণে সকলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা টাকা পরিশোধ করেছেন, তাদের অনেকের কাছেই পরিশোধের রশিদ নেই। দ্রুত সকল কৃষকের জামিনের ব্যবস্থা কররা চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের জনৈক স্কুল শিক্ষক বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি, সেটা হলো ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিলেও কৃষকরা ১৩ লাখ টাকা আগেই পরিশোধ করেছেন। এরপরও নাকি ১২ লাখ টাকা পাওনা থাকায় সমবায় ব্যাংক মামলাটি দায়ের করে। সমিতির সদস্যদের বর্তমানে এতো টাকা পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য আছে বলে আমার মনে হয় না।

ছলিমপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, বিষয়টি যদিও কষ্টের, তবুও নিয়মানুযায়ী ব্যাংক কাজ করেছে। বিষয়টি আমাদেরও জানা ছিল না। আমি ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে অতি দ্রুত একজন আইনজীবী নির্ধারণ করার কথা বলেছি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশের ভয়ে লোকজন হয়ত পালিয়ে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও থানার ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেছি। লেখাপড়া না জানা এসব কৃষক আইন-আদালতকে ভয় পায় বলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, আদালতের আদেশের ভিত্তিতে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কৃষকেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করেছেন। ওসি আরও বলেন, সমিতির গ্রæপ লিডার স্থানীয় মহিলা মেম্বার বিলকিস বেগম ঘটনার মূল হোতা বলে জেনেছি। তিনিও ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক পাবনা শাখার ম্যানেজার কাজী জসিম উদ্দিন জানান, তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এবিষয়ে মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদকে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বর্তমানে তিনি নাটোর শাখায় কর্মরত রয়েছেন। মামলার তারিখে এসে আদালতে হাজিরা দিয়ে যান।

এদিকে কৃষক গ্রেপ্তারেরে ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি) রবিবার বিকেলে শহরের এক নম্বর গেট এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ আহব্বান করেছে। বাংলাদেশ কৃষক সমিতিও এই প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্বতা প্রকাশ করবেন বলে সমিতির জেলার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব ইত্তেফাককে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালে তারা ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া ভূমিহীন কৃষকদের নামে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের পাবনা শাখা থেকে গ্রæপ ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণ খেলাপির মামলায় পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালত ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় গত বুধবার ভাড়ইমারি গ্রামের ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী করেন। পরে পুলিশ শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে।

(এসকেকে/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test