E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাইটগার্ড সাজেদুর কোটি টাকার মালিক!

২০২২ ডিসেম্বর ৩১ ১৭:১৯:৫৩
নাইটগার্ড সাজেদুর কোটি টাকার মালিক!

স্টাফ রিপোর্টার, শৈলকূপা থেকে ফিরে : চাকরি করেন নাইট গার্ড কাম ঝাড়ুদার পদে। তাও আবার মাস্টাররোলে। পান মাত্র ৬০ টাকা মজুরি (দিন হাজিরা)। নাইট গার্ড হলে কী হবে-তিনি জমি কিনেছেন, বিশাল পাকা বাড়ি করেছেন। অফিস চলাকালে সব ক্ষমতা যেন তার হাতেই ন্যস্ত। তার ইচ্ছার বাইরে গেলে জমি রেজিস্ট্রি হয় না।

এমন চতুর ব্যক্তিটি হলেন শৈলকূপা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নাইট গার্ড সাজেদুর রহমান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ হয় না। বরং তার ভয়ে তটস্থ থাকেন অফিসের কর্মকর্তারা ও সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়-২০০৫ সালে সাজেদুরকে শৈলকূপা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নাইট গার্ড কাম ঝাড়ুদার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দৈনিক ৬০ টাকা মজুরি (হাজিরা) হিসাবে প্রতি মাসে তিনি ১ হাজার ৮০০ টাকা পান। অনুসন্ধানে জানা যায়-এছাড়া তার কোনো বৈধ আয় নেই। তবে ঘুষ বাণিজ্যে সহায়তা করে তিনি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

অফিসের ধার্য ঘুষের টাকা আদায় করার দায়িত্ব তার। কথিত আছে-সাবরেজিস্ট্রার না থাকলেও সাজেদুর দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেন! তার ইচ্ছার বাইরে গেলে জমি রেজিস্ট্রি করা যায় না। এজন্য ধার্য ঘুষের চেয়ে তাকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। তার কাছে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, দলিল লেখকরাও জিম্মি।

জানা গেছে, শৈশব থেকেই শৈলকূপার কবিরপুরে বসবাস করেন সাজেদুর। এক সময় তিনি পত্রিকার হকার হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শৈলকূপা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে সাজেদুর বসবাস করছেন। আছে গাড়ির ব্যবসা। সেই সাথে সুদ কারবারি করেন তিনি।

সম্প্রতি সাবরেজিস্ট্রার অফিসে সাজেদুরকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকা সাজেদুর হঠাৎ ক্যামেরা দেখে হকচকিয়ে যান। এ সময় সেখানে শৈলকূপা দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। এদিন সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সাজেদুরের সঙ্গে কথা হয়। সাজেদুরের কাছে অঢেল সম্পত্তি এবং ঘুষ বাণিজ্যে সহায়তা করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি জানান, ‘আমি কোনো অন্যায় কাজ করি না। দিনের বেলায় ম্যাডামের (সাবরেজিস্ট্রার) কাজগুলো করে দিই।’

কী কাজ করে দেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এত প্রশ্ন করবেন না, আপনার মত অনেক সাংবাদিকই আমার চেনা।’ অপর প্রশ্নের জবাবে সাজেদুর জানান, তার ইনকাম ট্যাক্স ফাইল নেই তো কী হয়েছে? দিনের বেলায় অফিসে কী কাজ করেন সাজেদুর-এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সাজেদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-যিনিই সাবরেজিস্ট্রার হিসাবে এ অফিসে আসেন তিনিই সাজেদুরের জাদুর কাঠির কাছে মাথা নত করেন। প্রত্যক্ষভাবে তাকে সমর্থন করেন। দলিল লেখক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে।

রাতে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব যার ওপর তাকে দিয়ে দিনের বেলায় অফিসে কী কাজ করানো হয়-এমন প্রশ্নে সাব-রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন শিকদার জানান-এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।আপনি অফিসে আসেন,বিস্তারিত আলাপ হবে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test