শিশু সিনথিয়াকে হত্যা করে লাশ ড্রেনে লুকিয়ে রাখে প্রতিবেশী কাদের

এসকে সুলতান, আশুলিয়া : ৬ বছরের কন্যা শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে প্রতিবেশী যুবক। পরে সেই শিশুকে হত্যা করে ট্রলি ব্যাগে নিয়ে বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনে লুকিয়ে রাখে। মুক্তিপণের টাকা ক্যাশআউট করার সময় হাতেনাতে ১ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। হত্যার আগে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রাথমিক আলামতও পাওয়া গেছে পুলিশের সুরতহালে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে। শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে রবিবার রাত ৯ টার দিকে গ্রেপ্তার আসামীকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব ৪ সিপিসি ২। এরআগে শনিবার রাতে আশুলিয়ার খেজুর বাগান এলাকার নুরুল হক সরকারের মালিকানাধীন টিনসেড বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেন থেকে শিশু সিনথিয়ার (৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় এই বাড়ির অপর ভাড়াটিয়া আবুল কাদেরকে (২০) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তার দেয়া তথ্য মতেই শিশুর মরদেহের খোঁজ মিলে।

ভুক্তভোগী শিশু সিনথিয়ার বাবা জসিনুর রহমানের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলায়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে জসিনুর আশুলিয়ার খেজুর বাগান এলাকায় নুরুল হক সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকত। তিনি পেশায় একজন বিক্রয়কর্মী। সিনথিয়ার মা একজন পোশাক শ্রমিক। আশুলিয়ার একই বাসায় ভাড়া থেকে পোশাক কারখানায় কাজ করত গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল কাদের।

আব্দুল কাদের (২০) সিরাজগঞ্জ জেলার সদর থানার সায়দাবাদ পূর্ন বাসন গ্রামের মোঃ শাহাদাত হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় রাজু নামে আরেক আসামী ও অজ্ঞাত ৩-৪ জন আসামী পলাতক রয়েছে। রাজুর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এর আগে গত ৪ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোনে সিনথিয়াকে খেলতে দেখে তার বাবামা। এর কিছু সময় পর থেকেই নিখোঁজ হয় সিনথিয়া। পরে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা, কয়েক ধাপে কিছু টাকা সিনথিয়ার বাবা কয়েকটি মোবাইল নাম্বারে প্রেরণ করে। এরমাঝে র‍্যাবের সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইলে লেনদেনের সুত্র ধরে আসামীর পিছু নেয় র‍্যাব। পরে র‍্যাব আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে সব খুলে বলে। র‍্যাবের কাছে আব্দুল কাদের জানায়, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে তার বাসায় সিনথিয়াকে লুকিয়ে রেখেছিল সে। এর আগে চকলেটের লোভ দেখিয়ে সিনথিয়াকে ডেকে নেয় আব্দুল কাদের। পরে সিনথিয়া ডাক চিৎকার শুরু করলে সিনথিয়াকে মুখ ও গলা চেপে হত্যা করে। পরে সিনথিয়ার লাশ একটি ট্রলিব্যাগে নিয়ে বাসার সামনের সেপটিক ট্যাংকির ভেতর লুকিয়ে ফেলে আব্দুল কাদের। এ ঘটনায় আব্দুল কাদেরকে রাজু সহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জন সহায়তা করেছে।

আব্দুল কাদেরের ঘরে খাটের নিচ থেকে লাশ লুকানোর কাজে ব্যবহৃত ট্রলিব্যাগ ও বাড়ির চাল থেকে সিনথিয়ার পরিহিত জামা, জুতা উদ্ধার করেছে র‍্যাব। পরে সিনথিয়ার লাশ লুকিয়ে রাখার স্থান দেখায় আব্দুল কাদের। সেখান থেকে রবিবার ভোরে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল সম্পন্ন করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

ভুক্তভোগী শিশুর বাবা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন শিশুকে হয়ত হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। লাশের শরীরের বর্ণনা থেকে এমন সন্দেহ হয়েছে তার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন্স) জামাল সিকদার বলেন, আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। প্রাথমিক সুরতহালে ধর্ষণের বিষয়টি সন্দেহ করছি বাকিটা ময়নাতদন্তে জানা যাবে। ধর্ষণের বিষয় নিশ্চিত হলে মামলায় ধর্ষণের ধারাও যুক্ত করা হবে। বুধবার থেকে শিশুর মরদেহ দুইদিন তার ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরে শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে লাশ ট্রলিব্যাগে নিয়ে বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনে ফেলে দেয়।

(এসকেএস/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০২৩)