E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তালা উপজেলার সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

৩৪ দিন বিদ্যালয়ে গিয় বেতন তুলেছেন ৩ বছরের, চাকরি ফিরে পেতে মরিয়া প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন

২০২৩ জানুয়ারি ১৬ ১৯:১৫:১৮
৩৪ দিন বিদ্যালয়ে গিয় বেতন তুলেছেন ৩ বছরের, চাকরি ফিরে পেতে মরিয়া প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ে গিয়েছেন মাত্র ৩৪ দিন। শিক্ষা ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটি দেখিয়ে বেতন তুলেছেন পুরো তিন বছর। তার কারণে বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পালানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা খেলেও চাকরি ফিরে পেতে এখন আদাজল খেয়ে নেমেছেন তিনি। আলোচিত-সমালোচিত সেই শিক্ষক হলেন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন। নাজমা খাতুন তালা উপজেলার দাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ সানার মেয়ে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাজমা খাতুন ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এরপর শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি দেড় বছরের ছুটির আবেদন করেন। ছুটি মঞ্জুর হওয়ার পর তিনি এক বছর মেয়াদে খুলনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নিয়মানুযায়ী বাকী ছয়মাস বিদ্যালয়ে সংযুক্ত থাকার কথা থাকলেও নাজমা খাতুন বিদ্যালয়ে ফেরেননি। পরে ২০১৯ সালের ২ জুলাই তিনি মাতুত্বকালীন ছুটির আবেদন করে অনুমোদন করিয়ে নেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ২ মাসের অসুস্থ্যতাজনিত ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নেন। সে ছুটি শেষ হলেও তিনি আর বিদ্যালয়ে ফেরেননি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,গত ৪ জানুয়ারী নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। স্মারক নং-০৮.০১.৪০০০.০০০-১৯/৪। মামলায় বিগত ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চাকরি ও পলায়নের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার (১৮) আলোকে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিপরীতে পত্র প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল সূত্রে আরও জানা যায়, ভূয়া অসুস্থতাজনিত সনদ দেখিয়ে ৯ মাসের ছুটি বৈধ করার চেষ্টা চলছে। আর এক্ষেত্রে নাজমা খাতুনের পক্ষ থেকে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা জানান, সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পদ রয়েছে ৪ টি। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ছিল ৩ শতাধিক। প্রধান শিক্ষক না আসায় লেখাপড়ার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় এখন শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩০ জনের মতো।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কুমিরা ইউপির সদস্য মফিজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটে পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে তারা একজন ডেপুটেশনে শিক্ষক চেয়েছিলেন। এবিষয়ে তারা অনেকবার জেলা শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন। তবে কোন সুরাহা হয়নি। বরঞ্চ তালা উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার ধমক খেতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পাল শ্যামল কুমার জানান, ৫বছর ধরে বিদ্যালয়টির অচলাবস্থা চলছে। ২০১৭ সালে যোগদানের পর নাজমা খাতুনকে আমরা বিদ্যালয়ে মাত্র ৩৪ দিন পেয়েছি। এরপরে বিদ্যালয়ের সাথে তার আর সংযোগ নেই। শুধুমাত্র তার কারণে বিদ্যালয়টির আজকে এই করুণ অবস্থা।

তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান,করোনার পরে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভাগীয় মামলা চলছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, চাকরি ফিরে পেতে অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। তিনবছরের মধ্যে বিধি অনুযায়ী ২ বছর ৩ মাস বেতন তুলেছেন। বাকী ৯ মাসের বেতন এল কিভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্ষেপে যান নাজমা খাতুন। তিনি বলেন, এ কৈফিয়ত আপনাকে দেব না।

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা) মোসলেমউদ্দীন জানান,নাজমা খাতুনের জবাবপত্র পেয়েছি। আইন সবার জন্য সমান। আগামী ৩১ জানুয়ারী এবিষয়ে শুনানী হবে। শুনানী শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test