E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২৩ বছর পরও অরক্ষিত কক্সবাজার

২০১৪ এপ্রিল ২৯ ১০:০০:৪৮
২৩ বছর পরও অরক্ষিত কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি : আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল । ১৯৯১ সালের এই দিনে কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলে আঘাত হানে প্রলংয়করী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস। আর সেই ট্র্যাজেডিতে কক্সবাজার উপকূলে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় এক লাখ মানুষ ও দুই লক্ষাধিক পশু-পক্ষী।

সেই কালো দিনের ২৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু একটুও বদলায়নি কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। চরম ঝুঁকি নিয়ে অরক্ষিত অবস্থায় বাস করছে কক্সবাজার উপকূলের ২৫ লাখ মানুষ। এখনো নির্মিত হয়নি টেকসই প্রতিরক্ষা বেড়ীবাঁধ। প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ এলাকায় চলছে এখনও জোয়ার-ভাটা। আশ্রয় কেন্দ্র নেই পর্যাপ্ত। জরাজীর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে পুরাতন আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। সংস্কারেরও উদ্যোগ নেই। প্রভাবশালীদের দখলেও রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। আর এ অবস্থায় চরম উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে কাটছে কক্সবাজার উপকূলের ২৫ লাখ মানুষের জীবন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের চকোরিয়ার পহঁরচান্দা, বরইতলী, সওদাগরঘোনা, চরনদ্বীপ, কোনাখালী, বদরখালী, বিএমচর, সাহারবিল, পেকুয়ার মৌলভীবাজার, টৈটং, রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়া, করিয়ারদিয়া, ধলঘাট, মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া, টেকনাফের হ্নীলা, শাহপরীরদ্বীপ, টেকনাফ সদর, মহেশখালী, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, খানঘোনা, গোমাতলীসহ বিস্তীর্ণ উপকুলীয় এলাকায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের ২১ টি পোল্ডারের প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ বিলীন অবস্থায় রয়েছে।

কক্সবাজার জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর আওতাধীন ৫৯৫ কিলোমিটার বাঁধ ও বাঁধের অভ্যন্তরে প্রায় ৬৫০০০ হেক্টর জমির চিংড়ি, লবণ, বিভিন্ন ধরনের ফসল, সরকারী-বেসরকারী অবকাঠামো ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের ঘর-বাড়ী সহ নানা সম্পদ রয়েছে। আর এসব সম্পদ ও মানুষের জীবন রক্ষায় টেকসই প্রতিরক্ষা বেড়ীবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত এর দাবী জানান উপকূলবাসী।

স্থানীয়রা বলেন, বেড়ীবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তা কোনরকমে মাটি ফেলে বাঁধ দিয়ে লুটপাট করা হয়। কৌশলে সিংহ ভাগ টাকা যায় ঠিকাদার ও পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে। ফলে বাঁধ সংস্কারের অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙ্গে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে-মধ্যে পাউবোর পক্ষ থেকে সামান্য মাটি ফেলে বাঁধ দিয়ে বেড়ীবাঁধ মেরামতের কাজ করা হয়। আর তা একবার বৃষ্টি হলেই বিলীণ হয়ে যায়।

মহেশখালীর আওয়ামীলীগ নেতা কামরুল হাসান জানিয়েছেন, ২৩ বছর পার হতে যাচ্ছে এখনো ধলঘাটার বেড়িবাঁধটি বাধা হয়নি। যার ধরুন গ্রামের মানুষ এখনো জোয়ার ভাটায় ভাসছে। অসহায় মানুষদের প্রতিবাদের শ্লোগান ছিলো একটি বেড়িবাঁধ বাঁচলে- ধলঘাটা বাচঁবে। আর সেই দাবী আদায়ের জন্য আবারও তিনি আহাবান করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন সর্বোপরি সরকারের নিকট।

কক্সবাজার বাচাঁও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ২৩ বছর পরও জেলার উপকূলীয় অঞ্চল অরক্ষিত। বিশেষ করে পেকুয়া থেকে উজানটিয়ার বেড়িবাধ ও কুতুবদিয়া বেড়িবাধের অবস্থা নাজুক।

তিনি আরো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কুতুবদিয়া-মহেশখালী সহ প্রায় উপকুলীয় অঞ্চলের নাগরিক চরম হুমকির মূখে। যে কোন সময় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যেতে পারে। যা দেশের ও সরকারের জন্য বড় ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে।

কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটি এম নুরুল বশর চৌধুরী জানিয়েছেন, কুতুবদিয়ার মানুষ এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে। ২৩ বছর পর ও সেদিনের ক্ষয়ক্ষতির দাগ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি কুতুবদিয়ার লোকজন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নিবার্হী প্রকৌশলী একেএম শফিকুল হক জানান, কক্সবাজার উপকূলে যে পরিমান বেড়িবাধ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে সে তুলনায় বরাদ্দ কম। যার কারণে এসব বেড়িবাধ পুরোপুরি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে ১৯৯১ সালের প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড়ের পর কক্সবাজার উপকূলে ৫৩৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থা। এর পর থেকে আর কোন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। এছাড়া অবৈধ দখলে চলে গেছে অর্ধশতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র। এসব রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে ছিল না কোন উদ্যোগ। গত ২৩ বছরে জনসংখ্যাও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। কিন্তু বাড়েনি আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা। গত ২০০৯ সালে কক্সবাজার জেলায় নতুন করে ২৭৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু তা এখনও ফাইল বন্ধী হয়ে পড়ে আছে।

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও স্বীকার করেছেন ঘুর্ণিঝড়ের ২৩ বছর পরেও কক্সবাজারের উপকূলবাসী এখনো পরিপূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি। উপকূলীয় জনপদের মানুষ প্রতিনিয়তই দূর্যোগের সাথে সংগ্রামরত আছে। তবে তিনি আরো জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার মহেশখালী ও কুতুবদিয়াবাসীকে ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই আওতায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীতে একটি টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণের কাজ চলছে।

কক্সবাজার সদর- রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল জানিয়েছেন, খুব শ্রীঘই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, সংস্কার ও দখলমুক্ত করনের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

(টিটি/জেএ/এপ্রিল ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test