E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের কক্ষে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মনির সাথে একই সারিতে পৌর মেয়র রেজার ছবি, সমালোচনার ঝড়

২০২৩ জানুয়ারি ২০ ১৪:৩৮:২২
বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের কক্ষে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মনির সাথে একই সারিতে পৌর মেয়র রেজার ছবি, সমালোচনার ঝড়

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগ কার‌্যালয়ের যুবলীগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছবির সাথে একই সাড়িতে টাঙ্গানো রয়েছে উপজেলা যুবলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজার ছবি। সরকারি আইন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের প্রতিচ্ছবি ঐ চারটি ছবির নিচে বসেই যথারিতী যুবলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা শুরু করেছেন অব্যাহতি প্রাপ্ত যুবলীগ নেতা ও পৌর মেয়র। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অংগ-সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মিদের মাঝে।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাদের সাথে কথা বলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে জানা যায়, নানা বিতর্কিত কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়া ও করোনা বিধিনিষেধ অমান্য করে সমাবেশ করার অপরাধে ২০২০ ইং সালের ২৬’শে জুন বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের তৎকালিন আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ঐ সময় থেকেই বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের বহুতল ভবনে বরাদ্দকৃত যুবলীগের কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল।

হঠাৎ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে তালাবদ্ধ কক্ষটি খুলে সেখানে নিজ সমর্থক ও বিলুপ্ত কমিটির নেতা-কর্মিদের নিয়ে প্রবেশ করেন বেলকুচি পৌরমেয়র ও যুবলীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাজ্জাদুল হক রেজা। এসময় তিনি দীর্ঘঘন কক্ষটিতে অবস্থান করে অতীতের ন্যায় আহ্বায়কের চেয়ারে বসে নেতা-কর্মিদের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ের সংবাদটি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়। কিন্তু মতবিনিময়কালিন সময়ে যুবলীগের কক্ষটিতে টানানো চারটি ছবি নজর কাড়ে সবার, যে ছবি টানানো নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত মতবিনিময়ের ছবিগুলোতে দেখা যায়, যে চেয়ারটিতে বসে পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা মতবিনিময় করছেন তার ঠিক মাথার উপরেই একই সাড়িতে, সমান্তরালে টানানো হয়েছে চারটি ছবি। চারটি ছবির ডান থেকে প্রথম ছবিটি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির, দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৃতীয়টি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চতুর্থ ছবিটি বেলকুচি পৌর মেয়র ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার।

মতবিনিময়ে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ কর্মির অভিযোগ সরকারি আইন ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার অনুযায়ি কিছুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে পৌর মেয়র ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার ছবি টাঙ্গানো উচিত নয়। এটি যেমন আইনগতভাবে অবৈধ তেমনি রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের চরম লঙ্ঘন। অনতিবিলম্বে জাতীর পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে একই সাড়িতে ছবি টানানো পৌর মেয়রের শাস্তির পাশাপাশি ছবি অপসারনের দাবিও জানান তারা।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক ফারুক সরকার বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালি করতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মতি নিয়ে যুবলীগের কক্ষটি খোলা হয়েছে। নতুন কমিটি না থাকায় আমরা সংগঠনকে শক্তিশালি করতে কাজ করছি। আর অনেক বছর আগে ঝুলানো ছবি টানানো ঠিক আছে, প্রধানমন্ত্রীর ছবির একটু নিচেই তৎকালিন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের ছবি ঝোলানো হয়েছে। ছবিতে হয়তো একই মাপে টানানো মনে হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল রহমান জানান, যুবলীগের কক্ষটি খোলার কথা আলোচনা হয়নি। কারো কোন সিদ্ধান্ত না মানা, অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুবলীগ নেতা ও পৌর মেয়র কারো সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন না। উপজেলা আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত দিলেতো আমরা অবগত থাকার কথা। আর জাতীর পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে একই কাতারে ছবি টানানো চরম ধৃষ্ঠতা। আমরা ঐ ছবি অপসারনসহ দ্রুত এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

হোয়াটসএ্যাপে যুবলীগের কক্ষে টানানো ছবিগুলোর ছবি পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালি করা ও যুবলীগের কর্মিদের বসার জায়গা দিতে কক্ষটি খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস বলেন, যুবলীগের কক্ষে একই সাড়িতে টাঙ্গানো ছবিগুলো দেখলাম, এটি একটি অগ্রহনযোগ্য, ঘৃন্য ও শিষ্ঠাচার বিবর্জিত কাজ। খোজ নিয়ে জানলাম কয়েকবছর আগে যখন আমাদের উপজেলা আওয়ামীলীগের কার‌্যালয়ে যেতে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতো তখন এই ছবিগুলো টানানো হয়েছে, ঐ সময়ের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ অদৃশ্যকারনে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। আমি আজই (শুক্রবার) বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মনির পাশে টানানো মেয়র রেজার ছবি অপসারন করবো।

উল্লেখ্য, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হামলাবাজ হিসেবে পরিচিত পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া, আপন সহোদরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একাধিকবার বহিস্কার হয়েছেন দল থেকে। তার হামলা থেকে রেহাই পাননি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি , জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আকন্দ, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ আকন্দ, সাবেক বেলকুচি পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার, বেলকুচি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোপাল চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল ও রাশেদসহ অসংখ্য ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। রেজার হামলার শিকার হয়েছেন বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুর রহমানও। তবে অদৃশ্য কারনে বারবার পার পেয়ে গেছেন তিনি।

(এসআইএস/এএস/জানুয়ারি ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test