E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খোকসায় প্রায় সাড়ে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা শুরু

২০২৩ জানুয়ারি ২১ ১৫:৫৭:০২
খোকসায় প্রায় সাড়ে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা শুরু

মিঠুন গোস্বামী, খোকসা থেকে ফিরে : কুষ্টিয়ার খোকসা গড়াই নদীর পাড়ে প্রায় সাড়ে ৫শ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা ও মেলা শুরু হবে। প্রথাগতভাবেই মহিষ ও পাঠা বলির মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ পূজা। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে প্রথাগত পাঠাবলীর মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ পূজা ও মেলা। রবিবার গোধূলীতে গড়াই নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। 

মধ্যরাতে রাজা জমিদারি আমলের আদলে ক্রোধের প্রতীক মহিষ ও কামের প্রতীক পাঠা বলির মধ্যদিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবেন পূজারি প্রবোধ কুমার চক্রবর্তী।

হিন্দু সম্প্রদায়সহ বর্ণবৈষম্যহীন এলাকাবাসীর সনাতনী ভক্তির স্থান ও ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র কুষ্টিয়ার খোকসা কালীর বার্ষিক পূজা ও মেলাকে ঘিরে স্থানীয় সব শ্রেনী পেশার মানুষের অন্যরকম এক আমেজের সৃষ্টি হয়েছে।

পৌষের আমাবশ্যা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে সাড়ে সাত হাত লম্বা বিশাল দেহের দৃষ্টিনন্দন কালী প্রতিমা তৈরি হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় স্থানীয় প্রতিমা শিল্পি সুকুমার বিশ্বাস, নিমাই বিশ্বাস ও তাদের তিন সহযোগী বংশ পরামপরায় তৈরী করেছে ৭ হাত লম্বা কালীমুর্তি।

উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী এই কালীপূজা কোন সুদুর অতীতে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে বর্তমানে পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্রাচার্যের সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন।

আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালী পূজার বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ’শ বছর। আত্মপ্রচার বিমূখ তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জনমনুষ্যহীন জঙ্গালার্কীন স্থানে এ কালী পূজা আরম্ভ করেন বলে লোকমুখে শোনা যায়।

জনৈক জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার যুবাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু।

খবর পেয়ে জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালী পূজা আরম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালী পূজার সূত্রপাত। মহিষ বলির শেষে পাংশার জমিদার ভৈয়বনাথ ও শিলাইদহের জমিদার ঠাকুরের সম্মানে জোড়া পাঠাবলি দেওয়া হতো। সেই স্রোতধারায় এখনও দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের মানসার পাঠাবলি দেওয়া হয়।

খোকসার কালীপূজা মন্দির কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সুপ্রভাত কুমার মালাকার জানান, প্রায় পৌনে ৬শ বছর আগে গড়াই নদীর তীরে কালীপূজার সূচনা হয়েছিল। কালীপূজা ও গ্রামীণ মেলা এ জনপদের সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী খোকসার কালীপূজা কে কেন্দ্র করে এখানে প্রশাসনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। পুলিশের দুইটি ওয়েস্টার ও একটি তাই ক্যাম্প করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে ১৫ দিনের মেলার অনুভূতি রয়েছে। তবে এখানে জোয়া লটারি বা অনৈতিক কিছুর সুযোগ নেই।

(এমজি/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test