E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের ভিড়

২০২৩ জানুয়ারি ২৪ ১৪:২৬:৪০
মাদারীপুরে আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের ভিড়

বিশেষ প্রতিনিধি, মাদারীপুর : মাদারীপুরে এই প্রথমবার চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ১২ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় চোখে পড়ার মতো। মাদারীপুরবাসী এই ধরণের প্রদর্শন দেখে খুব খুশি। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে চারুকলা দেখতে আসেন অভিভাবকরা। এই প্রদর্শনিতে দেশ-বিদেশের ২০০টি ছবি স্থান পেয়েছে। প্রর্দশনী চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত।

আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ের মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়ামে এই চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। ৩১ জানুয়ারী সমাপনি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে এই প্রদর্শণ। এখানে মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়াম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসহ ৩টা গ্যালারিতে ২০০ জন শিল্পীর ২৩০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ জন বিদেশি শিল্পীর চিত্রকর্ম রয়েছে। কয়েকজন দেশি শিল্পীর ভাষ্কর্যও রয়েছে। এছাড়াও একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেনের আকা ১৫ টি চিত্রকর্ম রাখা হয়েছে।

কাজী আনোয়ার হোসেন আর্ট মিউজিয়ামের কিউরেটর ইমরান হোসেন বলেন, মাদারীপুর জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকে দেশব্যাপী পরিচিত করার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। প্রতিদিনই প্রদর্শনীতে ভিড় লক্ষ্যনীয়। তবে বিকেলের পর থেকে ভিড় বেশি হয়।


ইমরান হোসেন আরো বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন মাদারীপুরের একজন কৃতি সন্তান। তিনি চারুকলার বহুবিধ মাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মী চিত্রকর্ম সৃজনে ব্রত ছিলেন। বিশেষ করে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাকে বিষয়বস্তু করে অগণিত চিত্রকর্ম সৃষ্টির কারণে তিনি ‘নৌকা আনোয়ার’ বলে খ্যাত। তার চিত্রকর্ম দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলার সার্কিট হাউজে তার শিল্পকর্ম রয়েছে।

এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ঐশিক অদ্রির চিত্রকর্ম। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কাজী আনোয়ার হোসেনের চিত্রকর্ম সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি চারুকলার বোটম্যান নামে খ্যাত, তার নৌকার চিত্রকর্মগুলো আমাকে খুব আকর্ষিত করেছে। এখানে আমার যে চিত্রকর্মটি স্থান পেয়েছে তার নাম দিয়েছি ‘হিস্টেরিয়া অ্যান্ড কালমিনেটেড গিল্ট’। আমার চিত্রকর্মের মাধ্যমে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে তুলে ধরেছি। অনেক ধরণের মানুষ আছে যারা তাদের মানসিক যন্ত্রণা চাইলেও কাউকে বলতে পারেন না, তুলে ধরতে পারেন না। যার কারণে তারা সবসময় বিষন্নতায় ভোগেন। আমি সেই কাজটিই করেছি আমার চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে। যারা মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকেন তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য কেউ কেউ এগিয়ে আসলেই, মনে করবো আমার চিত্রকর্মের সার্থকতা।’

প্রর্দশনীতে স্থান পাওয়ার আরেকজন শিল্পী স্নিগ্ধা ভট্টাচার্য্য। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা বিভাগে চিত্রকলায় মাস্টার্স শেষ করেছেন। চিত্রশিল্পীর সাথে এসেছেন মাদারীপুরে। তিনি বলেন, আমার একটি চিত্রকর্ম এখানে প্রদর্শন হচ্ছে। এখানে প্রর্দশিত ছবিতে মানবমনের অর্ন্তদ্বন্দ্বীয় স্নায়ুযুদ্ধেও অবিরাম প্রবাহ ধারায় যে মনসতাত্ত্বিক দিকগুলো উন্মেচিত হচ্ছে, তা ধরার চেষ্টা করেছি। তবে জেলা পর্যায়ে এই ধরণের প্রর্দশনিতে এত দর্শনার্থী দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কারণ এসব চিত্র প্রদর্শনগুলো সাধারণ ঢাকা বা বিভাগিয় কেন্দ্রিক হয়ে থাকেন। মফস্বল পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না।


ঘুরতে আসা ১০ বছরের ছোট্ট শিশু আয়ান বলেন, আমি কখনও এক সাথে এমন ছবি দেখিনি। এত সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে।

পৌরসভা অফিস সংলগ্ন মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ফাইজা সিমি বলেন, এই প্রর্দশনী আমার অনেক ভালো লেগেছে। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে অনেক ভালো লেগেছে।

আরেক দর্শনার্থী শিক্ষক মাহবুব হোসেন এসেছেন স্বপরিবারে। তিনি বলেন, এই ধরণের প্রদর্শন খুবই প্রশংসার দাবীদার। আর্ন্তজাতিক মানের এই চিত্রকর্ম দেখে আমরা মুগ্ধ। আবারও আসবো দেখতে। আশা করছি এই আয়োজন আবারও অনুষ্ঠিত হবে।

চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলে, একুশে পদপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন সমাজ কল্যান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাজী আশিকুর রহমান অপু বলেন, আমার বাবা ২০১৬ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। তার দেড় হাজারের বেশি চিত্রকর্ম এখনো আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আমার বাবা ‘নৌকা আনোয়ার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার বাবার চিত্রকর্ম ইন্দিরা গান্ধীকে উপহার দিয়েছিলেন। আমার বাবা তার চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা বলেছেন। মানুষের জীবনের কথা বলেছেন। তিনি চেয়েছেন সমাজের জন্য কিছু করতে, মানুষের জন্য সুখ-দুঃখের কথা তার চিত্রকর্মের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরতে। তাই নতুন চিত্রশিল্পীদের বলবো তারা যেন আমার বাবার মতন মানুষের জন্য কিছু করেন, সমাজের জন্য কিছু করেন।

তিনি আরো বলেন, সাধারণ এই ধরণের প্রদর্শন রাজধানী কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। আমরা সেই ধারাকে বদলাতে, জেলার মানুষকে আনন্দ দিতে এই আয়োজন করেছি। একটি প্রতি দুই বছর পর পর জাতীয়ভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ১২ দিনব্যাপী মাদারীপুর উৎসব চলছে। মাদারীপুরে এই ধরণের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। মাদারীপুরবাসীও এই প্রদর্শনী দেখে অনেক মুগ্ধ হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, জেলাবাসীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করা হয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এই আয়োজন উপভোগ করতে পেরেছেন।

(এএসএ/এএস/জানুয়ারি ২৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test