E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কী ঘটছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে? 

২০২৩ জানুয়ারি ২৭ ১৮:০৪:১৪
কী ঘটছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে? 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : কী ঘটছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে? একের পর এক সহিংস ঘটনা। জোড়া খুনের পর এলাকায় তান্ডব। লুটপাট, অগ্নি সংযোগ। পুড়ে ছাই অর্ধশতাধিক বাড়ি। ক্ষয়-ক্ষতির প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। এলাকা পুরুষ শূণ্য। এরপর আর কী ঘটবে? এ নিয়ে শংকায় এলাকাবাসী। উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন।

জমি সংক্রান্ত বিরোধে জোড়া খুনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি। উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলা-পাল্টা হামলাও প্রস্তুতি চলছে। এমনটাই জানিয়েছেন খোদ ৪ নম্বর ঘোরাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভুট্টো।তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত দুই যুবকমনোয়ার হোসেন মিম (২৪) ও ইসমাইল রাকিব হোসেন (২৫) জানাজা শেষে শেষে কতিপয় যুবক প্রায় অর্ধশত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় লুট করা হয়েছে অসংখ্য গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, টিভি-ফ্রিজ সহ বাড়ির আসবাবপত্র ও মালামাল। যা ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর তান্ডব লীলাকেও হার মানিয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান এবং এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ২৮ শতক জমি নিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার খোদাতপুর (চুনিয়াপাড়া) গ্রামের হায়দার আলীর সঙ্গে চর এলাকা থেকে এসে বসবাসরত ওমর ফারুকের বিরোধ চলছিল। বুধবার সকালে ওই জমিতে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। ওই ঘটনায় হায়দার আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন মিম (২৪) ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন (২৫) নিহত হন। নিহত রাকিবও হায়দার আলীর লোক হিসাবে পরিচিত।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠছিল অনেকেই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তা বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বাড়িতে এখন খোলা আকাশের নিচে বসে আছে পরিবারগুলো। হাঁড়কাপানো শীতের মধ্যে বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘোড়াঘাট থানায় বুধবারের হত্যার ঘটনায় করা মামলার পর পুলিশ ওইদিনই ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন- ওমর ফারুক, তার স্ত্রী মোমেতা বেগম ও ছেলে সামিরুল। র‍্যাব পরে আজাহার আলী নামে আরেকজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার করেছে।

এলাকার মকবুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত ওই দুই যুবকের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পরই চর এলাকা থেকে এসে বসবাসরত ওমর ফারুকের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। হামলাকারীরা একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। হামলাকারীরা যখন বাড়ি-ঘরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করছিল তখন জীবন বাঁচাতে বাড়ির বাসিন্দারা গা-ঢাকা দিতে শুরু করে। এ সময় এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কয়েম হয়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

শিশু-যুবক-বৃদ্ধদের মধ্যে শুরু হয় ছোটাছুটি ও কান্নাকাটি। এরপরই শুরু হয় লুটপাট। অনেকে গরু-ছাগলও নিয়ে যায়। আগুনে বাড়ির আসবাবপত্র, মোটরসাইকেল ও খড়ের পালাসহ বহু মূলবান সামগ্রী পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, তাদের বাড়িতে আগুন লাগানো ছাড়াও তাদের টিভি, ফ্রিজ এবং গরু-ছাগল লুট করা হয়েছে। চুনিয়াপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী নারী মোসলেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাড়ির সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে গরু ও ফ্রিজ ছিল। সেগুলো নিয়ে গেছে। আমরা এখন কোথায় থাকব।

তবে পুলিশ একটি বাড়িতে হামলার কথা স্বীকার করলেও স্থানীয়রা বলছেন বেশকয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে বেলা ৩টায় ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিস। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি ইউনিট একযোগে কাজ করে। ছুটে আসে পুলিশও। কিন্তু ততক্ষণে বহু বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম ওহিদুন্নবীর বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে ঘোড়াঘাট থানার পাশাপাশি ফুলবাড়ি, বিরামপুর থানা এবং জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থেকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার পরিস্থিতি এখন শান্ত।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি আবু হাসান কবীর জানান, ‘পুলিশের পদক্ষেপে পরিস্থিতি বর্তমানে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মিডিয়ায় যা এসেছে তা সঠিক নয়। দুই একটি বাড়ি পুড়েছে।'

ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ নিরঞ্জন সরকার জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এজন্যে আমাদের একাধিক ইউনিট কাজ করেছে। একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো কোনো নিরুপম করা হয়নি। কাজ চলছে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test