E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঐতিহ্যবাহী বোয়ালমারী জর্জ একাডেমিতে নিষিদ্ধ গাইড বই ক্রয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে

২০২৩ জানুয়ারি ২৮ ১৭:৫৫:৩৭
ঐতিহ্যবাহী বোয়ালমারী জর্জ একাডেমিতে নিষিদ্ধ গাইড বই ক্রয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে

কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জর্জ একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের অবৈধ গাইড বই ক্রয়ে শিক্ষকরা বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের যে পাঠ্য তালিকা সরবরাহ করেছেন তাতে একটি প্রকাশনির গাইডের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শ্রেণিতে যে পাঠ্য তালিকা সরবরাহ করেছেন তাতে লেকচার পাবলিকেশন নামে একটি প্রকাশনীর ব্যাকরণ ও গ্রামার বইয়ের নাম উল্লেখ আছে। সেই সাথে লেকচার সহায়ক বই (একের ভিতর সব) নামক একটি গাইডেরও উল্লেখ আছে। শিক্ষকরা ওই গাইড বইটি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রয় করতে বলছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার কর্তৃক গাইড নিষিদ্ধ হওয়ায় ওই প্রকাশনী 'সহায়ক বই' নামে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন গাইড বই বাজারজাত করে থাকে। ভিন্ন নামের (সহায়ক বই) আড়ালে মূলত গাইড বই-ই বাজারজাত করে থাকে।
লেকচার প্রকাশনির সাথে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা লেকচার গ্রামার, লেকচার ব্যাকরণ এবং লেকচার গাইড ক্রয় করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মো. রাইসুল আলম মিনা রাসেল নামের বিদ্যালয়টির ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাইড কেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে? তিনি আরো বলেন, জান্নাত লাইব্রেরি থেকে আমার ছেলের লেকচার গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনেছি। দাম নিয়েছে ১২০০ টাকা। আর তারিক লাইব্রেরি থেকে ছেলের জন্য ৮ম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের এক সেট লেকচার গাইড ক্রয় করেছি। দাম নিয়েছে ১৪৯০ টাকা। নিম্ন আয়ের লোকেদের এত টাকা দিয়ে গাইড ক্রয়ের সামর্থ্য কোথায়?

বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের বোয়ালমারী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মনজুর রহমান তুষার বলেন, আমার ছেলে জর্জ একাডেমিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাকেও বিদ্যালয় থেকে একটি বুকলিস্ট দেয়া হয়েছে। বুকলিস্টে 'লেকচার সহায়ক বই (একের ভিতর সব)'-এর কথা উল্লেখ আছে। আর শ্রেণিতে শিক্ষকরাও লেকচার গাইড কিনতে বলেছেন।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যা বলেন,এ বিষয়ে আমাকে ইউএনও স্যার জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি নাকি সরকার নিষিদ্ধ গাইড বই এবং সহায়ক গ্রন্থ হিসাবে বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ হিসাবে লেকচার প্রকাশনীর বই নির্বাচন করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি বইয়ের ব্যবসা করিনা। কিংবা কোন বিশেষ প্রকাশনী কিংবা লাইব্রেরি আমাকে কমিশন দেয়না। সরকার নিষিদ্ধ গাইড বই ক্রয়ে কোন ছাত্র/ছাত্রীকে আমি নির্দেশনা দেইনি। কেউ যদি গাইড ক্রয়ে উৎসাহিত হয় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমার কোন হস্তক্ষেপ করার নেই। তবে আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গাইড ক্রয়ে নিরুৎসাহিত করেছি।

জর্জ একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, আমি এ ব্যাপারে অবগত নই। আমার সাথে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোন কথা বলেনি।

বিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ গাইড বই ক্রয় করতে বাধ্য করার অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসাইন বলেন, আমি বিষয়টা সম্পর্কে গত ২৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার জেনেছি। প্রধান শিক্ষককে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আগামী ২৯ জানুয়ারি, রবিবার আমার প্রতিনিধি বিষয়টা তদন্ত করবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগেও বেশ কয়েকবার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গৃহীত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচকভাবে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের পাল্টাপাল্টি মামলা, স্কুলের বেঞ্চ শিক্ষকের বাড়ি নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়।

(কেএফ/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test