E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ছয় গ্রামের মানুষের ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো!

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৮:২০:২৪
ছয় গ্রামের মানুষের ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : নদের একপাশে ৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুই পাশে রয়েছে ৬ টি গ্রাম। যে গ্রামগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। আর এই মানুষগুলোর বড় এবং একমাত্র ভোগান্তির কারন একটি বাঁশের সাঁকো। জলিলপুর-যুগিহুদা গ্রামের মাঝে কপোতাক্ষ নদে রয়েছে এই সাঁকোটি। যার উপর দিয়ে এলাকার মানুষ দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পারাপার হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এই স্থানে একটি সেতুর দাবি তাদের দীর্ঘদিনের, কিন্তু সেতু নির্মান হয়নি। ২৫ বছর মানুষ নৌকায় পার হয়েছেন, আর ২৫ বছর সাকো দিয়ে। গত বছর নদী খননের সময় সেই সাকোটিও ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, এলাকার মানুষ নিজেদের অর্থায়নে আবার তৈরী করেছেন। এই অবস্থা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহরের উত্তর পাশের গ্রামগুলোর।

যুগিহুদা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলা শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। এই নদের দুই পাড়ে রয়েছে জলিলপুর, যুগিহুদা, কদমতলা, সড়াতলা, নিমতলা ও বেড়েরমাঠ গ্রাম। যার মধ্যে যুগিহুদা গ্রামটির তিন পাশে ঘিরে রেখেছে এই কপোতাক্ষ।

তিনি জানান, এই সকল গ্রামগুলোর মানুষের দৈনন্দিন সকল কাজ মেটাতে হয় জলিলপুর বাজারে। এই বাজারেই রয়েছে একটি কলেজ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মেয়ে ও ছেলেদের পৃথক দুইটি মাদ্রাসা। যে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রামগুলোর ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করে। তারা জীবনের ঝুকি নিয়েই এই বাঁশের সাকো পরাপার হয়।

রবিউল ইসলাম জানান, যে স্থানে বর্তমানে সাকো রয়েছে তার দুই পাশে তিন কিলোমিটার দূরে সেতু নির্মান করা হয়েছে। সেতুর পাশের লোকজন উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু ৬ গ্রামের মানুষকে মহেশপুর বা জলিলপুর শহরে যেতে হলে কমপক্ষে ৪ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে।

মহেশপুর পৌর মহিলা কলেজের শিক্ষক ও যুগিহুদা গ্রামের বাসিন্দা এম.এ আসাদ জানান, ছোট বেলায় দেখেছেন ৬ টি গ্রামের মানুষ কষ্ট করে নৌকায় পার হচ্ছেন। পারাপারের খাজনা হিসেবে অনেকের মাসিক চুক্তিও ছিল। এরপর ৯০ দশকে এলাকার মানুষ গ্রামে গ্রামে বাঁশ সংগ্রহ করে সাকো তৈরী করলেন। এই সাকো দিয়ে সবাই পার হতে শুরু করেন। কিন্তু দুই বছরের বেশি সাকো থাকে না, ভেঙ্গেচুরে যায়। প্রতি দুই বছর পর নতুন করে সাকো তৈরী করতে হয়।

তিনি জানান, নতুন করে সাকো তৈরী করলে কিছুদিন মোটামোটি চলাচল করা যায়। এরপর ভেঙ্গেচুরে ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। সেই ঝুকিপূর্ণ সাকোতেই চলাচল করতে হয়। এভাবে চলতে চলতে প্রায় ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। গত বছর কপোতাক্ষ নদ খনন করা হয়েছে। এই খননের সময় তাদের তৈরী বাঁশের সাকোটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। তখন মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। গত ডিসেম্বর মাসে তারা আবার নতুন করে সাকো তৈরী করেছেন। এই সাকো তৈরী করতে তাদের অনেক টাকা ব্যয় হয়। যা এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনে দেন।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সাকোর স্থানে গিয়ে দেখা যায় সব সময় সাকোর উপর মানুষ রয়েছে। কেউ এপার থেকে ওপারে আবার কেউ ওপার থেকে এপারে যাচ্ছেন। শেফালী বেগম নামের এক বৃদ্ধা কষ্ট করে বাঁশ ধরে সাকো পার হলেন। তিনি জানান, বাবা এতো কষ্ট করা যায় না।

নুর আলী নামের আরেক পথচারী জানান, মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় দেখি অপ্রয়োজনীয় সেতু। দুই পাশে রাস্তা নেই, মাঝখানে সেতু। আর আমাদের প্রয়োজন থাকা সত্বেও সেতু হচ্ছে না। ৬ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, তাদের ও পাশের গ্রামগুলোর মানুষ এখন কাজ করে সাভলম্বি হয়ে উঠেছেন। তাদের দৈনন্দিন তেমন কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা একটাই চলাচলে বাঁশের সাকো। যার দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন।

মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল রশিদ খাঁন জানান, সেতুটি খুবই প্রয়োজন। কোমলমতি বাচ্চারা জীবনের ঝুকি নিয়ে এই সাকো দিয়ে পার হয়। যা দেখলে সবারই ভয় হয়। অনেক দূর্ঘটনাও ঘটেছে এই সাকোতে। তিনি বলেন, জলিলপুর নামক এই স্থানে একটি সেতু হবে এটা তাদের অনেক দিনের প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে এলজিইডির মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ জানান, তারা এই স্থানে একটি সেতু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনুর্ধ ১০০ মিটারের একটি সেতুনর জন্য তিনদফা প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেতুটি নির্মান হোক। তিনি বলেন, প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন পেলে তারা সেতুর কাজ শুরু করতে পারবেন আশা করছেন।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test