E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধারদেনায় চলছেন স্বল্প আয়ের মানুষ

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৫:৪১:০৪
ধারদেনায় চলছেন স্বল্প আয়ের মানুষ

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : আসাদুজ্জামান টিটু আগে ৫ টাকা কাপ চা বিক্রি করতো। এখন আর আগের দামে তিনি চা বিক্রি করতে পারছেন না। প্রতি কাপ চায়ের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে টিটু বলেন, গ্যাসের দাম বেড়েছে। চিনির দাম ডাবল হয়েছে। ব্যবসা করে আর পোষাচ্ছে না। কাস্টমার নাই, ইনকাম কমে গেছে। একদিনের ইনকাম দিয়ে তিন বেলার খাবার জুটছে না। টিটুর বাড়ি সদর উপজেলার শালিয়া গ্রামে। ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়াকৃত দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করে ছয় সদস্যদের সংসার চালান তিনি।

আবাদি জমি না থাকায় চাল থেকে তরিতরকারি সবই কিনতে হয় তাঁকে। টিটু বলেন, তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ছে। তাদের লেখাপড়ার পেছনে মাসে অন্তত তিন হাজার টাকা খরচ হয়। আর সব মিলিয়ে পরিবারের খরচ লাগে মাসে প্রায় ২২ হাজার টাকা। কিন্তু একদিকে যেমন সবকিছুর দাম বেড়েছে, আরেক দিকে তাঁর ব্যবসার লাভ কমে গেছে। দিন শেষে গড়ে ৪৫০ টাকার মতো লাভ থাকে তাঁর। মূলধন ভাঙিয়ে চলছেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋণ হয়েছে বলে দাবি আসাদুজ্জামান টিটুর।

আসাদুজ্জামান টিটুর মতো অবস্থা দক্ষিণ কাস্টসাগরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ঠান্ডুর। ঝিনাইদহ শহরে ভাড়ায় অটো চালান তিনি। আগের মতো আয় নেই। সারা দিনে ৭০০ টাকা আয় করলে এর মধ্যে ৩০০ টাকা দিতে হয় অটোর মালিককে।

ওয়াপদা বাজারে চাল কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে বাঁচব, সেই উপায় নেই। বাজারে আসলেই শুনি চালের দাম বাড়ছে। আজ বাজরে এসে শুনি চালের দাম ৭০ টাকা কেজি। টিভিতে শুনছি দেশে ধানের অভাব নাই, বাম্পার ফলন হয়েছে। তাও চালের দাম এত কেন? এমন আক্ষেপ শুধু আসাদুজ্জামান টিটু ও আনোয়ার হোসেন ঠান্ডুর নয়।

ঝিনাইদহের নিম্ন আয়ের অনেক শ্রমজীবী মানুষই তাঁদের আক্ষেপের কথা বলেন। গত ছয় মাসে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কষ্টে আছেন। অনেক পরিবারকে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বাজারের নিত্যপণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে তেলের দাম ১৬৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৯২ টাকা, চালের দাম বেড়ে এখন ৭০ টাকা, ডালের দাম ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া চিনি, মাছ ও মাংসর দামও বেশ চড়া। বেড়েছে গ্যাস ও খড়ির দামও। এতে দরিদ্র পরিবারগুলোকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

নাথকুণ্ডু গ্রামের বিধবা সালেহা বেগম পুরুষদের সঙ্গে চাতালে কাজ করলেও তাঁর মজুরি প্রায় অর্ধেক। সারাদিন চাতালে পুড়ে একই কাজ করে একজন পুরুষ শ্রমিক পান ৫০০ টাকা আর সালেহা পান ৩০০ টাকা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে ৩০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে চাল তরকারি কিনতে শেষ হয়ে যায়। তেল, মসলা কিনতে টানাটানি লাগে। মাঝেমধ্যে ধারদেনাও করি সংসার চালানোর জন্য। গত কয়েকমাস ধরে বাচ্চাদের মাছ-মাংস খাওয়াতে পারিনি।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test