E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অতিথি হয়ে থাকতে পারছে না ‘অতিথি পাখি’

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৮:৩৬:২৬
অতিথি হয়ে থাকতে পারছে না ‘অতিথি পাখি’

শেখ ইমন, শৈলকুপা : ২০০৭ সালের কথা। আশুরহাট গ্রামটিতে হঠাৎ ই ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসা শুরু করে। স্থায়ী কোন বাসা না করায় পাখিগুলো যায়-আসে। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। ২০১৩ সালে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে হাজার হাজার পাখি। ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে পাহারাদারের ব্যবস্থাও করা হয়। তখন থেকেই আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। যা বর্তমানে সকলের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। গ্রামটির অবস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে। 

২০১৩ সালেই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিবছরের মতো গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ে শিমুুল,জাম,মেহগনী গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি।

উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এখানেই জায়গা করে নেয়। তাই শীতকাল এলেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। শিমুল গাছে থাকা পাখিগুলো সব সময় গাছেই অবস্থান করে। আষাঢ় থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এসব পাখি এখানেই অবস্থান করে।

অভয়ারণ্য তৈরির শুরু থেকেই নানারকম হুমকির মুখে পড়েতে হয় অতিথি পাখিদের। রাতের আধারে পাখি নিধন, নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থল চরম সংকটে পড়ে। বর্তমানে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কেটে ফেলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্যের গাছ। ক’দিন পরেই হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত হবে এই অভয়ারণ্য। কিন্তু গাছ কেটে ফেলার কারণে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন অতিথি পাখি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই পাখি অভয়ারণ্য।

এলাকাবাসী দাবি করছেন, এই পাখি অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা গাছ কাটা ও পাখি শিকার যেন না করা হয়।

আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্যরা জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের মকররম আলীর ছেলে নইমুদ্দিন ও বদরউদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন এই পাখি অভয়ারণ্যের গাছ কেটেছে। আরও কেউ কেউ গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কেটে ফেললে পাখিশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে গাছ কাটার ব্যাপারে অভিযুক্ত শফি উদ্দিন বলেন, আমার মালিকানাধীন জমির গাছ কেটেছি। আমি কোনো দোষ করিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী জানান, জমির মালিকেরা মাঝে মধ্যেই গাছ কাটেন। এভাবে গাছ কাটার কারণে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে এই অভায়রণ্য। কোনো পাখি শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে তাই আমরা সারা রাত ধরে পাহারা দিয়ে থাকি।

আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আ. রাজ্জাক বলেন, এভাবে গাছ কাটলে অতিথি পাখিরা কোথায় এসে দাঁড়াবে? আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এই মুহূর্তে গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে সামনে অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি এই এলাকায় আসবে না। পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র অভয়ারণ্য।

উপজেলা বন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন, গাছ কাটার কথা আমি শুনেছি। এভাবে গাছ কাটলে পাখি অভায়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। সেই সঙ্গে এলাকা পাখিশূন্য হয়ে পড়বে। আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, পাখির অভয়ারণ্যের গাছ কাটার খবর পেয়েছি। পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং পাখি অভায়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে ব্যাপারে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এসআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test