E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজবাড়ীর সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৪:০৩:৫৪
রাজবাড়ীর সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : বছর ঘুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রাজবাড়ী জেলার মোট ৭৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও বাকি ৫৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার৷

কিন্তু যাঁদের তাজা রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলা ভাষা, তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে। কেউবা আবার বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানাতে ও স্মরণ করতে পারে না।

আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পালনই করা হয় না দিনটি। কোথাও কোথাও শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণ করলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সেটিও করা হয় না। কোনো কোনো শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত কিংবা উপজেলা শহরের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও তা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। ফলে ভাষার জন্য লড়াইয়ের পটভূমি ও ভাষা দিবসের মর্যাদা সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতি বছর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছে ম্লান হয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর অদ্যাবদি জেলার ৭৪৬ টির মধ্যে ৫৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখনো শহীদ মিনারস্থাপন করা হয়নি। এ কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবসে সকল ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছে না। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী তুলেছেন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার থাকলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সহজে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। কলেজ রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে ৩০টি কলেজে শহীদ মিনার নেই। জেলায় ৭৪টি মাদরাসার মধ্যে ৭৩টিতে নেই শহীদ মিনার।

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টি স্কুলে শহীদ মিনার থাকলেও ১১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। গোয়ালন্দ উপজেলার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টি স্কুলে শহীদ মিনার আছে, আর ৩৫টি প্রতিষ্ঠানে নেই। পাংশা উপজেলায় ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও ৮৯টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। কালুখালী উপজেলায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও নেই ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, স্থায়ীভাবে কোন শহীদ মিনার না থাকায় প্রতি বছর ভাষা দিবসে অস্থায়ীভাবে বাঁশ কাঠ কলাগাছ দিয়ে নিজেরা শহীদ মিনার তৈরি করে প্রতিষ্ঠান গুলোতে।

সরকারের কাছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য অবশ্যই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা প্রয়োজন। তারা বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো প্রকার শহীদ মিনার। তাহলে মাতৃভাষা সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম কী জানবে? মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীদের শিখতে হবে। কিন্ত দেখা যায় উপজেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেও নেই কোনো শহীদ মিনার।

গোয়ালন্দ উপজেলার নবুওছিমুদ্দিন পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। একটা শহীদ মিনার থাকলে আমরা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম।

উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ বাবর আলী বলেন, মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখবে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মন্ডল জানান, সরকারি নির্ধারিত কোনো বরাদ্দ না থাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। তবে এলাকার কেউ নিজ উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে দিতে পারে।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, মাতৃভাষা দিবস পালন করতে অবশ্যই শহীদ মিনারের কোনো বিকল্প নেই। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই পর্যায়ক্রমে সেগুলোতেও শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।

(একেএমজি/এএস/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test