E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বেড়েই চলেছে অপহরণ, ধরাছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা

২০১৪ এপ্রিল ২৯ ১২:৪৮:২০
বেড়েই চলেছে অপহরণ, ধরাছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা

স্টাফ রিপোর্টার : অপহরণ আর গুমের ঘটনায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলার সুরাহা করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও গুমের মামলা মাসের পর মাস তদন্ত করেও কোনো ক্লু উদ্ধার করতে না পারায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তদন্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে! অনেক ঘটনায় অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার হলেও জড়িতরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ অপহরণ ও গুমের কারণ 'স্বার্থ' আর 'অর্থ'। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো অসাধু সদস্যকে 'ম্যানেজ' করে কোনো গোষ্ঠী অপহরণ-গুমের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে কি-না তাও সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। অধিকাংশ অপহরণের ঘটনায় আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের সন্দেহের তীরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি একের পর এক চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় সারাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে।

রহস্যজনক অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কারা জড়িত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গাফিলতি রয়েছে কি-না এসব ব্যাপারে আলোচনা করতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক বসছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ বিষয়ে বলেন, 'অপহরণে কারা জড়িত- এটা খুঁজে বের করা হবে। অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহার করে অনেক পেশাদার অপরাধী চক্র এসব কাজে জড়িত থাকে। আজ বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।'

প্রতিবদনে জানানো হয়, অপহরণকারীরা সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরকে বেশি টার্গেট করেছে। একের পর এক মিরপুর থেকে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল কাফরুল এলাকা থেকে অপহৃত হন ডিশ ব্যবসায়ী হাজী মো. ওয়ালি উল্লাহ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ছেলেকে বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পৌঁছে দিয়ে নিজের গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ঠিকাদার আবুল হাসনাত পলিন। স্কুল গেট থেকে গাড়িটি সামনে যেতেই একটি মাইক্রোবাস পলিনের গতিরোধ করে। দুর্বৃত্তরা পলিনকে টেনেহিঁচড়ে নিজের গাড়ি থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। ৭১ দিন পর নাটকীয়ভাবে গত ২৪ এপ্রিল পলিনের খোঁজ পাওয়া যায়। এছাড়া মিরপুর থেকে ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট অপহরণ হয়েছেন তরিকুল ইসলাম তারা মিয়া। বাউনিয়াবাদ এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহরণের পর বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানার স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে মিরপুরের পাইকপাড়ায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। মিরপুর থেকে গত বছর অপহৃত হন কামাল সরদার নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৩০। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, মহানগর ভূমি জরিপের পর মিরপুর এলাকায় জমিজমা নিয়ে নতুন নতুন বিরোধ তৈরি হয়। ঝামেলাপূর্ণ জমি কিনছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল। মিরপুর থেকে যারা ইতিমধ্যে অপহৃত হয়েছেন তাদের কয়েকজনই জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী নূর মোহাম্মদ ওরফে নুরু হাজীর মেয়েজামাই আবদুল মান্নান ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইকবাল হোসেন 'রহস্যজনক নিখোঁজ' হন। ওই বছরের ৯ অক্টোবর রাতে সাভার পৌর এলাকার কাতলাপুরের বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় নুরু হাজীকে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অধিকাংশ চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত এখন ডিপ ফ্রিজে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে আছে। এছাড়া অন্যান্য অপহরণের ঘটনায় প্রথমে কিছু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৌড়ঝাঁপের পর এক সময় তদন্ত থেমে যায়। 'চেষ্টা করছি' 'সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে'- এমন তথ্য দিয়ে কোনো কোনো মামলায় আদালতে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। দীর্ঘদিন তদন্ত করে অনেক মামলার ক্লু শনাক্তে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ শেষ পর্যন্ত তদন্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এসব অপহরণ মামলায় তদন্ত সময় ব্যয়কে তারা 'বৃথা' সময় নষ্ট বলে বিবেচনা করে। কোনো ঘটনায় অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ মেলার পর তদন্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে পুলিশ। ইলিয়াস আলীর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে বনানী থানা পুলিশ আদালতে ইতিমধ্যে ৩৬টি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এসব প্রতিবেদনের সবই যেন অন্তঃসারশূন্য।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test