E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ১০৩তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন

২০২৩ মার্চ ২৮ ১৭:০৮:৪৪
আগৈলঝাড়ায় কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ১০৩তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা, বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, দক্ষিণবাংলার কৃতী সন্তান, মন্ত্রী আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পিতা, সাবেক মন্ত্রী ১৫আগস্ট জাতির পিতার সাথে শহীদ হওয়া অ-সাম্প্রদায়িক নক্ষত্র আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ১০৩তম জন্ম বার্ষিকী তাঁর জন্মস্থান বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। 

আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জন্মদিনে (২৮মার্চ) মঙ্গলবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন শেষে দলীয় কার্যালয়ে সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ঐতিহাসিক কর্মজীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন রাখেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন।

প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফরহাদ তালুকদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী হাওলাদার, জসীম সরদার, সহ-সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পিয়ারা ফারুক বক্তিয়ার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি, রাজিহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হরেকৃষ্ণ হালদার, বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান হাওলাদার, উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিচ সেরনিয়াবাত, যুবলীগের সভাপতি সাইদুল সরদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফিরোজ সিকদার, ছাত্রলীগের সভাপতি মিন্টু সেরনিয়াবাত। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকসহ তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন।

বাদ যোহর উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জাতির পিতা ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ ১৫আগস্ট সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন ওই মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ফজলুল হক।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কর্মময় জীবন ও জন্ম পরিচয়

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (১৯২১-১৫আগস্ট ১৯৭৫)। ১৯২১ সালের ২৮মার্চ বাংলা ১৩২৭ সনের ২৭ চৈত্র বরিশাল জেলার তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামে পিতা আব্দুল খালেক সেরনিয়াবাত ও মাতা ফকরুননেছা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা। তিনি জাতির পিতার সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫আগষ্ট নির্মম হত্যার শিকার হন।

শিক্ষা জীবন

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বর্তমান সরকারী গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে ১৯৩৯ সালে ভোলা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪১ সালে বরিশাল ব্রজ মোহন কলেজ থেকে ইন্টার মিডিয়েট, ১৯৪৩ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ল’ ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনৈতিক কর্মময় জীবন

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশালে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশার পাশাপাশি ১৯৫৮-৬০সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকারী গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্পাদকরে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিথযশা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত একই সাথে সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করেন। সফম্বল সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাংবাদিক সমিতি’র বরিশাল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে (১৯৫৬-৫৭) দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন (১৯৬৪)। ১৯৬৯ সালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বরিশাল থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার পরিচালনায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ১৯৭২ সালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৩ সালে বরিশাল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দেশের কৃষকদের মুক্তির লক্ষে তিনি কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা

স্বাধীনতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২সালের ১৯এপ্রিল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বর্নাঢ্য শেষ বিদায়

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আনুমানিক ভোর ৫টায় ২৭ মিন্টো রোডে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাস ভবনে মেজর শাহরিয়ার রশিদ, মেজর আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ এর নেতৃত্বে¡ আক্রমন করা হয়। নরপিশাচেরা হত্যা করে নিস্কলংক, নিরহংকার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহান নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাতিজা সহিদ সেরনিয়াবাতকে। এসময় অন্যান্যদের সাথে রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী আমেনা বেগম, পুত্রবধু সাহান আরা আবদুল্লাহ গুরুতর জখম হন। নির্মম ঘটনার দিন দরজার পিছনে লুকিয়ে ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে যান তাঁর পুত্র পার্বত্য শান্তি প্রনেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ -এমপি।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তির পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি, বাবার মতো আদর্শীক রাজনৈতিক সমৃদ্ধ জীবনে দেশের মানুষের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে দক্ষিনাঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ এর দ্বায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে মন্ত্রী মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজেকে সক্রিয়ভাবে জড়িত রেখেছেন।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের সেই ঐতিহাসিক বাসভবন বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test