E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারায় শিক্ষকের বেতন স্থগিত!

২০২৩ মার্চ ২৮ ১৯:৫৭:৩৫
জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারায় শিক্ষকের বেতন স্থগিত!

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সামনে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারায় ওই ডিসি সংশ্লিষ্ট শরীর চর্চার এক স্কুল শিক্ষকের বেতন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন! আলোচিত এ ঘটনাটি  ঘটেছে মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। পাশাপাশি জাতীয় সঙ্গীত বিশুদ্ধভাবে গাইতে না পারার বিষয়টি যথাযথভাবে তদারকি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখানকার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই  জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নাম শাহ্গীর আলম।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটার দিকে জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। পরিদর্শনের এক পর্যায়ে তিনি ওই বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেনকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন। কিন্তু সেসময় সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেননি ওই শিক্ষক সোহরাব হোসেন। এসময় তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন। সেসময় শিক্ষার্থীরাও বিশুদ্ধভাবে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেনি বলে জানা যায়। এতে জেলা প্রশাসক সংক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মো.সোহরাব হোসেনের 'বেতন' স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এসময় জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন, যতদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধভাবে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত ওই শরীর চর্চা শিক্ষকের বেতন স্থগিত থাকবে। '

এ সময় জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন কোথায় আছেন জানতে চান? এসময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই বলে ডিসিকে জানানো হলে, তাৎক্ষণিকভাবে ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক শাহ্গীর আলম।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহগীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক বাংলা ৭১কে বলেন, 'বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শরীর চর্চা শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন ডিসি স্যারের সামনে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত বিশুদ্ধভাবে গাইতে না পারায়, ওই শিক্ষকের বেতন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।'

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের এটি পূর্ব নির্ধারিত পরিদর্শনের কর্মসূচি থাকার পরও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় এবং বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিষয়টি তদারকি করতে ব্যর্থ হওয়ায়, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও শোকজ করার নির্দেশ দেন ডিসি স্যার।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন,' জেলা প্রশাসক মহোদয় যে বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছেন আমি সেটি জানতাম না। আমাকে উপজেলা প্রশাসন কিংবা স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকেও জানানো হয়নি। আর আমি এই উপজেলায় যোগ দিয়েছি মাত্র দুই সপ্তাহ হয়। এরমধ্যে মোগড়া বিদ্যালয়ে আমার এখন পর্যন্ত যাওয়াও হয়নি।

'এ ঘটনায় আপনাকে তো শোকজ করা হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,' সেটি তো তিনি করতেই পারেন। তবে আমি আবারও বলছি, ডিসি স্যার পরিদর্শনে আসার বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা।'

তবে শরীর চর্চা শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন বলেন,'ডিসি স্যারের বিদ্যালয় পরিদর্শনের বিষয়টি হেড স্যার আমাদেরকে গত রাতেই জানিয়েছেন। সেজন্য আমরা সকাল থেকেই স্কুলে ডিসি স্যারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।'

আপনি ডিসির সামনে বিশুদ্ধভাবে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে না পারায় আপনার বেতন স্থগিত করা হয়েছে, সেটি কি জেনেছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে পাশ্ববর্তী কসবার বাসিন্দা মো. সোহরাব হোসেন বলেন,'আমি বিশুদ্ধভাবে সবটুকু জাতীয় সঙ্গীত গাইতে ও শিখাতে পারি। মূলত ঘটনাটি হল, ডিসি স্যারের নির্দেশ মতো আমি যখন জাতীয় সঙ্গীতটি গাইছিলাম, তখন ডিসি স্যার আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি যেন কবিতা আবৃত্তির মতো করে স্যারকে সবটুকু শোনাই। এসময় আমি আবৃত্তির মতো পড়তে গিয়ে মাঝখানে হোঁচট খাই। ভয়ে লাইন ভুলে যাই। আর তখনই ডিসি স্যার চটে যান এবং আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন।'

তবে তিনি জানান, এ ঘটনায় আমার বেতন স্থগিত হওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।"

(জিডি/এএস/মার্চ ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test