E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আনাচে কানাচে মাদকের আখড়া, পশুর হাট, পঁচা মাংসের গোডাউন 

নামে মইজ্জ্যারটেক আবাসিক, আসলে কাজে কী?

২০২৩ এপ্রিল ০৭ ১৭:০১:৪১
নামে মইজ্জ্যারটেক আবাসিক, আসলে কাজে কী?

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : ছুরিকাঘাতে উদ্ধার হওয়া লাশের নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে গেছে। পুলিশের ধারণা খুন করে কেউ লাশটি মইজ্জ্যারটেক সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিকে ফেলে গেছে। তাৎক্ষণিক সে সময় লাশের পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনাটি বেশি দিন আগের না। ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি।

কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক সিডিএ আবাসিক সড়কের পাশে থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পরে নগর ডিবি এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে রহস্য উম্মোচন করেন নিহত যুবক পুলিশের সোর্স। এক সোর্সকে খুন করেছেন আরেক সোর্স। খুন হওয়া মো. কায়েস (৩৩) পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের কৈয়গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

এ ঘটনার ৯ বছর আগে ফিরে যাই। ২০১৪ সালের ১৯ জুন দুপুর ১২টায় মইজ্জ্যারটেক আবাসিক এলাকার খালে ভাসতে থাকে অজ্ঞাত এক নারীর গলিত লাশ। নিহত নারীর বয়স ২৫ থেকে ৩০ ছিল। পচন ধরা লাশের চেহারার নব্বই ভাগ বিকৃত। ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ জানা অনিশ্চিত। লাশের পরিচয় ও খুনের রহস্য ভেদ করতে সে সময় বেগ পেতে হয়েছিল তৎকালিন কর্ণফুলী থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদকে।

এভাবে বহু অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে এই মইজ্জ্যারটেক আবাসিক থেকে। এ আবাসিক চালু না হওয়ায় জঙ্গলে ভরে গেছে। ফলে, নির্জন স্থানকে অপরাধীরা লাশ ফেলার ‘নিরাপদ জোন’ হিসেবে ধীরে ধীরে ব্যবহার করছেন। এমনও ঘটনা রয়েছে পচে-গলে যাওয়ায় অনেক মরদেহ থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া যায় নি। বাহ্যিক অবয়ব দেখেও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এতে মৃত্যু রহস্য থেকে যাচ্ছে অজানা।

হত্যা, দুর্ঘটনা নাকি আত্মহত্যা তাও পরিষ্কার করা দুরুহ। রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় অপরাধীরা কিছু ঘটনায় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরেও। তবে বর্তমান কর্ণফুলী থানার পুলিশ বাহিনী অনেক দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। অনেক চৌকস কর্মকর্তা রয়েছে থানায়। তাঁরা খুলনা, রংপুর ও ঢাকায় লুকিয়ে থাকা অনেক অপরাধীকেও ধরে আইনের মুখোমুখি করেছেন। এতে স্থানীয় লোকজন ওসি দুলালের প্রশংসায় ‘পঞ্চমুখ’।

কিন্তু মাদকসেবীদের নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মইজ্জ্যারটেক আবাসিক। যেখানে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ প্রায় সব ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করার অভিযোগ রয়েছে। আবাসিকের জায়গায় পশুরহাট, ভারতীয় মানহীন ও পঁচা মাংসের গোডাউনসহ আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠেছে মাদকের বিস্তীর্ণ জাল। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

৩১ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে (মইজ্জারটেক) কর্ণফুলী আবাসিক। একটিও বসতবাড়ি উঠেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রথম এই আবাসন প্রকল্পে। নগরীর ওপর চাপ কমাতে ১৯৯১ সালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ১৯৯৪ সালে এই আবাসিকে ৪৮৯টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়ে ছিল। নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক আশা জাগিয়েছিল এ প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পটি এখন জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। এছাড়াও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

মইজ্জ্যারটেক আবাসিক নিয়ে গুজব ছিল ‘দুই তলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং বাতাসে সীসা ভাসে, পানি নেই কত কী।’ মইজ্জ্যারটেক কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। এ আবাসিকে অনেকেই ৪ তলা ও ৬ তলার প্ল্যান নিয়েছে। দোতলার বেশি ভবন নির্মাণ করা না গেলে তো সিডিএ ৬ তলার প্ল্যান দিত না। প্রায় ৫০ একর জায়গায় ৫১৯টি প্লট সম্বলিত সিডিএর কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্পে ওয়াসার ভান্ডালজুরী প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, ‘আমরা সিডিএর আবাসন প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছি। পুরনো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অনেক আবসন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। আমরা বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।’

সিএমপি মহানগর ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, ‘কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখ গুলো সিসিটিভি ও সড়ক বাতির আওতায় আসলে সহজেই অপরাধী সনাক্ত করা যাবে।’

সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক আবাসিক নিয়ে গুজব ছিল। তাঁরা বলেছে, এই আবাসিকের উপর দিয়ে বিমান যাবে, যার কারণে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। সম্প্রতি প্লট মালিক সমিতি আমার সাথে দেখা করেছে, তারা ভবন নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। পানির যে সমস্যা ছিল সেটি সমাধান করা হয়েছে।’

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test