E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইফতারি সামনে রেখে যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর মৃত্যু, জানাজায় মানুষের ঢল

২০২৩ এপ্রিল ০৮ ২০:০৬:০৬
ইফতারি সামনে রেখে যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর মৃত্যু, জানাজায় মানুষের ঢল

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : বর্তমান সময়ে দেশের শীর্ষ আলেম, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমীর শায়খুল হাদিস অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী শনিবার (৭ এপ্রিল) নারায়নগঞ্জ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অথিতি হিসেবে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর ইফতারের আগ মুহুর্তে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এর পর তাৎক্ষণিক সেখানকার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিৎিসক তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। এখবর সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশের কওমী ও ইসলামীক অঙ্গনসহ রাজনৈতিক মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া।

দেশের শীর্ষ আলেম অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর জানাযার নামাজ পরদিন এম্বুলেন্স (৮ এপ্রিল) পূর্ব নির্ধারিত মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রবেশ করার সাথে সাথে শেষ দেখা দেখতে মাঠের সবগুলো প্রবেশ পথে নামে হাজার হাজার মানুষের স্রোত। মুহুর্তেই বিশাল মাঠের অর্ধেক ভরে যায়।

এর পর বিকাল ৩টায় তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, সিলেটের ভার্থখলা মাদ্রাসার মুহতামিম ও খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ এর ইমামতিতে শুরু হয় জানাযার নামাজ।

দেশের রাজনীতিতে নানা মত-পথ আর বৈরিতা থাকলেও মাওলানা যোবায়ের আহমেদ ছিলেন এসবের বাহিরে। তাঁর কিছুটা আঁচ করা গেছে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের জানাযার নামাজে অংশ নিতে দেখে। জানাযায় অংশ নেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমানসহ, খেলাফত মজলিস, জামাত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন রেখে যান। ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ বাসায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা মরহুম মাওলানা আব্দুন নূর ইন্দেশ্বরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম ।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে পিতার প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার শহরস্থ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুমে ১৯৬৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার প্রাচীনতম মাদরাসা আশরাফুল উলুম বড়কাটারায় এক বছর পড়ালেখা করেন। ১৯৬৮ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে অধ্যয়নের পর সিলেটে চলে যান। ১৯৬৯-৭০ সালে জামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের সানাবিয়্যাহ ২য় ও ফযীলত ১ম সমাপ্ত করেন। ১৯৭১-৭২ সালে মৌলভীবাজারের সুপ্রসিদ্ধ জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুনায় মেশকাত এবং দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন : ১৯৭৩ সালে নেত্রকোনার মউ মাদরাসায় হাদীসের দরস প্রদানের মাধ্যমে জীবনের প্রথম শিক্ষকতা করেন। একবছর পর সেখান থেকে আবার ফিরে যান নিজ জেলা মৌলভীবাজারে। ১৯৭৪ সালে দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া রায়পুরে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ই নভেম্বর মৌলভীবাজার ডিগ্রী কলেজে ইসলামিয়াত ও ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োাগ প্রাপ্ত হন। সেখানে ১৯৭৮ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৯-৮০ সালে সিলেটের জামেয়া মদিনাতুল উলুম দারুস সালাম খাসদবীরে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৮১-৮৩ এর মাঝামাঝি জামিয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলূম বরুণায় সিনিযার মুহাদ্দিস হিসেবে দ্বীনী শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে যখন জামিয়া শারঈয়্যাহ মালিবাগ-ঢাকা দাওরায়ে হাদীস মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেখানে দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষক এবং পাশাপশি জামেয়ার প্রথম ভাইস প্রিন্সিপালেরর দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও ১৯৮৩-৮৫'র আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ইউনিভার্সিটি কুষ্টিয়ার ভাইস চান্সেলরের গাইডেন্সে তাফসিরে মাতুরীদী (ইমাম মাতুরীদী)-এর একমাত্র গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষের অনুবাদক ও নিবন্ধকার ছিলেন। এই সময়ে তিনি তারযুমানুস সুন্নাহ দ্বিতীয় খন্ডের অনুবাদ করেন। ১৯৮৫ সালের ২২শে আগস্ট বৃটেন চলে যান এবং ১৯৮৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২বছর সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি হ্যাম্পশায়ারের সাঊদাম্পটন সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষে মনোনীত বিশেষ কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৮-৯০ এই তিন বছর রাজনগর উপজেলার জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষাদান করেন। ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার শহরস্থ জামেয়া দ্বীনিয়া প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন এবং প্রায় তিন বছর সেখানে বোখারী ও মুসলিম শরীফ পড়ান। ১৯৯৩ থেকে ৯৫ এই তিন বছর জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম গড়গাঁও-এ সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তারপর মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়ায় হাজিরিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০০৮ সালের শুরু থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাত বছরেরও অধিককাল কমলগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস মুন্সিবাজারের শায়খুল হাদীস হিসেবে খেদমত আঞ্জাম দেন। বেফাকে যোগদান : ২০১৪ হতে রন ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বেফাকের মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তারাবো বিশ্বরোড জামিয়া ক্বাওমিয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বেফাকের আমেলা সদস্যও।

মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী ১৯৮৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১০ সাল থেকে বেফাকের যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। বেফাক থেকে চলে আসার পর ফের নায়েবে আমীর হন। ২০২১-২০২২ সেশনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন এবং বিগত ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ খেলাফত মজলিসের আমীর নির্বাচিত হন।

(একে/এএস/এপ্রিল ০৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test