E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবৈধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈধ শিক্ষার্থী!

শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নেওয়ার ধার ধারেনি কর্ণফুলী ৭৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

২০২৩ এপ্রিল ০৯ ১৭:৩৮:৪২
শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নেওয়ার ধার ধারেনি কর্ণফুলী ৭৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিন্ডার গার্ডেন, এবতেদায়ী মাদরাসা ও প্রি ক্যাডেট কেজি স্কুল নামে গড়ে ওঠা বোর্ডের অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৪টি। এর মধ্যে সরকারি রেজিস্ট্রেশন বিহীন এবতেদায়ী মাদরাসার সংখ্যা ৩৩ টি। যার মধ্যে মাত্র দুটি অনুমোদিত। সে সাথে কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে ৪৩ টি। এরমধ্যে কিছু কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার অনুমোদন থাকার দাবি করলেও পড়াচ্ছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। এ ধরণের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১৭টি স্কুলের।

এসব বিধিবর্হিভূত স্কুল গুলোর শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আবার অন্য স্কুল থেকে। যেহেতু তাদের কোন বৈধ নিবন্ধন নেই। নেই ইআইআইএন যাকে বলা হয় এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর। এই নম্বরটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক হয়। এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে পৃথক করতে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ।

কর্ণফুলীর আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে এ ধরনের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই অধিকাংশ স্কুল-কলেজ চলছে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও সড়কের পাশের ভবনে। প্লে-গ্রুপ থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। স্বল্প জায়গায় গড়ে ওঠা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। বছরে পর বছর অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও কেউ তদারকি করছেন এমনটা বলাও কঠিন।

জুলধা শাহ আমির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘কমিটি নেই, নিবন্ধন নেই, রেজিস্ট্রেশন নেই। কোন নিয়মে এসব স্কুল চলে আমি জানি না। আমাদের মতো সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত স্কুলের চেয়ে ওসব অনুমোদনহীন স্কুল গুলো তো আবার ছাত্রছাত্রী বেশি। যেমন- আমার স্কুলে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৬০০ জন কিন্তু চরলক্ষ্যার স্টুডেন্ট কেয়ার স্কুলে রয়েছে ১৬’শত ছাত্র-ছাত্রী। যদিও ওই স্কুলে কোন ধরনের শিক্ষা বোর্ডের কাগজপত্র নেই ।’

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের তালিকা সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীতে শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৯টি। এছাড়াও কর্ণফুলীতে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন ও ইআইআইএন(EIIN) অর্থ হল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নেই এমন স্কুলের সংখ্যা রয়েছে ১৭টি। এসবের তালিকা পরের পর্বে প্রকাশ করা হবে। এরা প্রাইমারি পড়ানোর নামে মাধ্যমিক পড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন আলমগীর বলেন, ‘কর্ণফুলীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৪ টি। এবতেদায়ী মাদরাসা রয়েছে ৩৩টি। কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে ৪৩ টি। যদিও এসব আবার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস দেখেন। করোনাকালে অনেক স্কুল কমে গেছে। বই দিতে এখন আমরা নানা তদারকি করতেছি। এসব সরকারি অনুমোদনহীন স্কুল গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। কারণ হুট করে কোন স্কুল বন্ধ করা যায় না। নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিগগরই অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র বনিক বলেন, ‘কর্ণফুলীর সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা এখন আমাকে বলতেছে, স্যার ব্যাঙের ছাতার মতো যে হারে কর্ণফুলীতে স্কুল মাদরাসা বাড়তেছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সরকারি স্কুল গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউএনও সাহেব নিজেও বলেছেন, এসব স্কুল কোচিং সেন্টার। স্যার যদি আইনি ব্যবস্থা নেন। তাহলে এসব বন্ধ হবে । কর্ণফুলীতে শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৯টি। বিধিবহির্ভূত ৩৩ টি এবদাতেয়ী মাদরাসার মধ্যে দুটির মাত্র অনুমোদন। ৪৩ টি কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে। এরমধ্যে ১৭ টি প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ট থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। যা বিধিবহির্ভিূত। আমি অবৈধ বলছি না।’

কর্ণফুলী প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশনের সভাপতি ও শাহ অহিদিয়া কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্রধান মো. শফিক সাদিক বলেন, ‘সারা দেশে হাজার হাজার কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে। যে গুলোর কোন সরকারি অনুমতি নেই। আমাদের তো অন্তত ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর অনুমতি আছে। টিআইএনএন নম্বর আছে। সারাদেশের কিন্ডার গার্ডেন গুলোতে মাধ্যমকিও চালু আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলীতে কোচিং সেন্টার থেকে একটি মাত্র স্কুল হয়েছে স্টুডেন্ট কেয়ার মডেল স্কুল। বাকি সব অন্য ভাবে হয়েছে। কিন্তু আপনি রেজাল্ট দেখেন কর্ণফুলীর অন্যান্য এমপিএ ভূক্ত স্কুল থেকে এসএসসির ফলাফলে স্টুডেন্ট কেয়ার মডেল স্কুল এগিয়ে। গতবারে ১৫৬ জন থেকে ১৫৬ জনেই পাশ করেছেন। যার মধ্যে ৩ জন এ প্লাস পেয়েছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদনবিহীন কোনো স্কুল অথবা কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। এসব তো কোচিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। উপজেলার টাস্কফোর্স কমিটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হবে। বিধি সম্মতভাবে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ডঃ বিপ্লব গাঙ্গুলি বলেন, ‘নিবন্ধন ব্যতিত ও সরকারি রেজিস্ট্রেশন বিহীন কোন স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হতে আমরা অভিভাবকদের সচেতন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছি। আমরা এখন এসব অনুমোদনহীন স্কুল গুলোকে অন্য স্কুল থেকেও পরীক্ষা দিতে দিবো না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সব উপজেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে ।’

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test