E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কিন্ডার গার্ডেনে বাণিজ্যিক রূপ

শিশুদের বাগানে হুতোম পেঁচা!

২০২৩ এপ্রিল ১০ ১৬:১৩:১৫
শিশুদের বাগানে হুতোম পেঁচা!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা কম থাকাকে পুঁজি করে কর্ণফুলীর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কিন্ডার গার্ডেন, কেজি স্কুল এবং এবতেদায়ী মাদরাসা নামে অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে কিছু স্কুল ও কলেজ আবার জন্ম নিয়েছে কোচিং সেন্টারের পথ ধরে। কোচিং সেন্টারে ছেলে মেয়েদের এক সাথে পড়াতে পড়াতে স্কুল গড়েছে এমন সংখ্যাও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পড়ার মান-পরিবেশ নিয়েও অনেকের প্রশ্ন উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে প্লে থেকে পঞ্চম বা নবম শ্রেণী পর্যন্ত। অথচ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন নেই।

তারপরেও এসব স্কুল মাদরাসাগুলো নতুন বইয়ের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে বই আদায়ের মতো মৃদু অভিযোগও পাওয়া গেছে। অন্যদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ের অভাবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দিন দিন বেড়েই চলছে।

পাঠদানের অনুমতি না থাকলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হয় অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও। নেই অনুমোদন। নেই নিবন্ধন। নেই ইআইআইএন কোড। তবুও চলছে। কিন্ডার গার্ডেন যেন বাণিজ্যিক রূপ। প্রাথমিক শিক্ষার মান খারাপের দোহাই দিয়ে জিম্মি অভিভাবক, পিষ্ট শিশুরা। যেন শিশুদের বাগানে হুতোম পেঁচা!

জুলধা শাহ আমির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘কর্ণফুলীতে সরকারি সকল বিধি বিধান মেনে চলছেন এ রকম স্কুলের সংখ্যা ১৫ টি। এসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ কারিকুলামে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিধিবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান গুলো হয়তো বই পায়নি। আমরা সব বই পেয়েছি।’

খোয়াজনগর শাহ অহিদিয়া কেজি অ্যান্ড হাই স্কুলের প্রধান মো. শফিক সাদিক বলেন, ‘আমরা আগে অন্য স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করতাম। কিন্তু এখন সবাই আজিম হাকিম স্কুলের মাধ্যমে দিচ্ছি। আমরা শতভাগ বই পাইনি। ৫০ ভাগ বই পেয়েছি। সাউথ চট্টগ্রাম ব্রাইট স্কুল এন্ড কলেজও ৫০ ভাগ বই পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলীতে ৪৩ টি কিন্ডারগার্ডেন রয়েছে। ১৭টি কিন্ডার গার্ডেনে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক চালু আছে। বাকি ২৬ টিতে শুধু ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এবদাতেয়ী মাদরাসা রয়েছে ৩৩ টি। এসব মাদরাসায়ও এখনো বইয়ের ঘাটতি আছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র বনিক বলেন, ‘অনিবন্ধিত স্কুলগুলো সরকারি বই পাওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। তারপরেও কর্ণফুলীর স্কুলগুলোতে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০ সেট করে বই দিয়েছি। শাহ অহিদিয়াতে ৩২ সেটও দিয়েছি। অন্যান্য সরকারি স্কুল গুলোর উদ্ধৃত্ত বই গুলো তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে। শাহ অহিদিয়া স্কুলে বই দেয়া হলো ৩২ সেট। এসব স্কুলের নামে কোন ইআইএনএন কোড নাই। অনলাইনে প্রবেশ করা যায় না। বই পাবার প্রাপ্যতা নেই। বিষয়টি আমি তাঁদের বুঝাতে পারি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে সব স্কুল ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দেন অন্য স্কুল থেকে। শিক্ষা বোর্ড কর্ণফুলীর কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত স্ট্যাম্প নিয়েছেন। । কারণ তা(রা যেন শিক্ষা বোর্ড থেকে আগামীতে অনুমতি নেন। ৩৩ টি এবদাতেয়ী মাদরাসার মধ্যে অনুমতি আছে মাত্র দুটির। ১৭ টি অবৈধ বলা যায়। যদিও আমি বলি বিধি বহির্ভূত সব।

শিক্ষাবিদ মাহমুদুর করিম বলেন, ‘শিক্ষা আইনে এসব স্কুলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না, গড়ে তুলতে পারবে না।’

তথ্যমতে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের তালিকা সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীতে শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৯টি। এগুলো হলো-কর্ণফুলী আবদুল জলিল চৌধুরী কলেজ, চৌধুরী কলেজদৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, এ. জে. চৌধুরী বহুমূখী (কৃষি) উচ্চ বিদ্যালয়, কালারপোল হাজী মোহাম্মদ ওমরা মিয়া চৌধুরী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়, আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাজরিন উচ্চ বিদ্যালয়, জুলধা শাহ আমির উচ্চ বিদ্যালয়, পিডিবি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিম হাকিম স্কুল এন্ড কলেজ, ডাঙ্গারচর রহমানিয়া জুনিয়র হাই স্কুল, শিকলবাহা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, প্রফেসর মহিউদ্দিন চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আলীম উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ, ফয়জুল বারী ফাজিল মাদ্রাসা, শিকলবাহা অহিদীয়া ফাজিল মাদ্রাসা, চরলক্ষ্যা সিরাজুল মুনীর গাউছিয়া দাখিল মাদ্রাসা, হামিদিয়া মুনীরিয়া আলতাফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, সোলতানিয়া আহমদ ছফা সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা।

এছাড়াও কর্ণফুলীতে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন ও ইআইআইএন (EIIN) অর্থ হল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নেই এমন স্কুলের সংখ্যা রয়েছে ১৭টি। যে সব স্কুলে মাধ্যমিক যেমন-৬ষ্ট, ৭ম, ৮ম ৯ম পড়ানোর কোন অনুমোদন নেই। তবুও পড়ানো হচ্ছে বলে স্বয়ং শিক্ষা কর্মকর্তার অভিযোগ। এসব স্কুল গুলো হলো- শাহ অহিদিয়া কেজি অ্যান্ড হাই স্কুল (খোয়াজনগর), শাহ আমানত ইনস্টিটিউট (শিকলবাহা), স্টুডেন্ট কেয়ার মডেল হাই স্কুল (বোর্ড বাজার), কর্ণফুলী আইডিয়াল স্কুল (শিকলবাহা), শিকলবাহা শিশুকানন (শিকলবাহা), সাউথ চিটাগং গ্রামার স্কুল (শিকলবাহা), চরপাথরঘাটা পাবলিক স্কুল (চরপাথরঘাটা, কর্ণফুলী মডেল স্কুল ( খুইদ্যারটেক), সাউথ চট্টগ্রাম ব্রাইট স্কুল এন্ড কলেজ (পশ্চিম চরলক্ষ্যা), একুশে আইডিয়াল স্কুল (গোয়ালপাড়া), সান মডেল স্কুল (চরফরিদ), শাহ নেয়ামত (রহঃ) গ্রামার স্কুল (বোর্ড বাজার), রেডিয়েন্স হাই স্কুল (কলেজবাজার) ও চট্টগ্রাম মেমোরিয়াল স্কুল (চরপাথরঘাটা)। না অজানা আরও ৩টি স্কুল রয়েছে।

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test